ফেরদৌসী রহমান (জীবনী)

প্রথম পাতা » জীবনী » ফেরদৌসী রহমান (জীবনী)


ফেরদৌসী রহমান

ফেরদৌসী রহমান
কালজয়ী কণ্ঠশিল্পী
প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী ফেরদৌসী রহমান ১৯৪০ খ্রি. দিকে কুচবিহারের বলরামপুরে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা প্রখ্যাত লোকগীতির সম্রাট আব্বাসউদ্দিন ও মাতা লুৎফুন্নেছা বেগম। পাক-ভারত ভাগ হওয়ার পর তারা সপরিবারে পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন। শিল্পী ঢাকার বাংলাবাজার বালিকা বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সিতে মেয়েদের মধ্যে প্রথম ও সম্মিলিত মেধা তালিকায় সপ্তম স্থান পান। ইন্টারমিডিয়েটে ইডেন কলেজ থেকে দ্বাদশ স্থান পান। বাবার পছন্দের বিষয় ইংরেজি হলেও তিনি সমাজবিজ্ঞানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬২ খ্রি. মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। সঙ্গীতে উচ্চতর শিক্ষার উচ্চ শিক্ষার জন্য তিনি ইউনেস্কো ফেলোশিপ নিয়ে লন্ডনের ব্রিনিটি কলেজ অব মিউজিক-এ স্টাফ নোটেশনের উপর কোর্স করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় কেন্দ্রীয় ছাত্র ইউনিয়নের সোস্যাল সার্ভিস সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেন তিনি। বাবার কাছেই তাঁর সঙ্গীতের হাতেখড়ি। তাছাড়া তিনি বরেণ্য ওস্তাদ মোহাম্মদ হোসেন খসরু, ওস্তাদ ইউসুফ খান কোরাইশী, ওস্তাদ কাদের জামেরী, ওস্তাদ নাজাকাত আলী খান ও ওস্তাদ সালামত আলী খান ছাড়াও বহু গুণী শিল্পীর কাছে সঙ্গীতে তালিম নেন। ফেরদৌসী রহমান প্রথম মঞ্চে গান করেন ‘শুধু কাঙালের মতো চেয়েছিনু তার মালাখানি’ গানটি। কোলকাতার মুসলিম ইনস্টিটিউট হলে এই গান করার সময় তাঁর বয়স ছিল ছয়। সেই থেকে বাবার সাথে তিনি বিভিন্ন আসরে তিনি গান করতে থাকেন। ৭ বছর বয়সে ঢাকা রেডিওর অনুষ্ঠান খেলাঘরে প্রথম গান করলেন। আর রাগ প্রধান গান নিয়ে বড়দের অনুষ্ঠানে গান করা শুরু করেন ১৯৫৫ খ্রি. সেই সময় বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় তিনি অংশগ্রহণ করে পুরস্কৃত হন। ১৯৫৭ খ্রি. করাচির এইচ এম ভি থেকে বের হয় তাঁর প্রথম রেকর্ড। পরে ঢাকার এইচএমভির শাখা থেকে বের হয় তাঁর বহু রেকর্ড। ১৯৭০ খ্রি. বের হয় তার প্রথম লংপ্লে। তার পর এক দুই করে অনেক অ্যালবাম।১৯৬৪খ্রি. ২৪ ডিসেম্বর শুরু হয় বাংলাদেশ টেলিভিশনের যাত্রা। আর সেই দিনই ফেরদৌসী রহমানের গান দিয়ে শুরু হয় টেলিভিশনের অনুষ্ঠান। একই বছর ২৭ ডিসেম্বর গান শেখার অনুষ্ঠানও তিনিই প্রথম শুরু করেন। মোস্তফা মনোয়ার আর কলিম শরাফীর অনুরোধে শুরু করা এই অনুষ্ঠানের নাম পরে দেন তিনি ‘এসো গান শিখি’। ১৯৮০ খ্রি. থেকে গান শেখার সাথে সাথে মজার মজার কথায় ভরা এই অনুষ্ঠানটি সবার মনে জায়গা করে নেয়। ১৯৫৭ খ্রি. নাজির আহমেদের ‘আসিয়া’ ছবিতে তিনি প্রথম প্লেব্যাক করেন। তখন তাঁর বয়স যোল। সেই ছবির সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন সমর দাস। আর আব্বাস উদ্দিন ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক। চান্দা, তালাশ, মালা পাইসা, বেগানী প্রভৃতি উর্দু ছবিতে গান গেয়ে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান। আর বাংলা ছবির ভিতর রাজধানীর বুকে, হারানো দিন, তোমার আমার, নতুন সুরে, এদেশ তোমার আমারসহ অসংখ্য ছবিতে কণ্ঠ দেন। এ পর্যন্ত তিনি দু’শয়ের বেশি ছবিতে কাজ করেছেন। চলচ্চিত্রে সঙ্গীত পরিচালনাও তিনি করেছেন দক্ষতার সাথে। তাই মেঘের অনেক রং ছবির জন্য পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ‘নোলক’ ও কি গাড়িয়াল ভাই ছবির গানও তিনি পরিচালনা করেন। ১৯৬৬ খ্রি. শিল্পপতি রেজাউর রহমানের সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। স্বামী ব্যস্ত মানুষ হলেও কখনোই বাধা দেননি গানে। ১৯৯০ খ্রি. শুরু করেন আব্বাস উদ্দিন সঙ্গীত একাডেমী। এ একাডেমি প্রতিষ্ঠায় স্বামীর সর্বাত্মক সহযোগিতা তিনি পেয়েছেন, দুই ছেলে রুবাইয়াত রহমান ও রাজিন রহমান। একমাত্র মহিলা সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে স্বীকৃতি স্বরূপ পেয়েছেন প্রেসিডেন্টস প্রাইড অব পারফরমেন্স মেডেল,একুশে পদক ১৯৭৭, স্বাধীনতা দিবস পদক-১৯৯৫, জাতীয় টেলিভিশন শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত শিল্পী পুরস্কার, নাসির উদ্দিন স্বর্ণ পুরস্কার বাচসাস পুরস্কার, মাহবুবউল্লাহ স্বর্ণপদক, জিয়াউর রহমান পুরস্কার। সঙ্গীত জগতে বিশেষ অবদানের জন্য বাংলা একাডেমির সন্মানসূচক ফেলোশিপ পান ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দে।




আর্কাইভ