সিরাজুদ্দীন হোসেন (জীবনী)

প্রথম পাতা » জীবনী » সিরাজুদ্দীন হোসেন (জীবনী)


সিরাজুদ্দীন হোসেন

শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনের জন্ম শরশুনা গ্রাম, শালিখা- মাগুরা, ১ মার্চ ১৯২৯।পেশায় ছিলেন সাংবাদিক। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম। সাড়ে তিন বছর বয়সে পিতৃহীন হন। ঝিকরগাছা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক (১৯৪৩), যশোর মধুসূদন কলেজ থেকে আই.এ. (১৯৪৫) ও কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে বি.এ. (১৯৪৭) পাস করেন। বি.এ. পরীক্ষা দেয়ার পর কলকাতায় দৈনিক আজাদের (১৯৩৬) বার্তা বিভাগে শিক্ষানবিস সাংবাদিক হিসেবে যোগদান করেন। কিছুকাল সাব-এডিটর পদে উন্নীত হন। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর ১৯৪৮-এ আজাদ কলকাতা থেকে ঢাকায় স্থানান্তরিত হলে এর সহকারী বার্তা সম্পাদক নিযুক্ত হন। কালক্রমে এ পত্রিকার বার্তা সম্পাদক পদে উন্নীত হন। ১৯৫৪-তে একটি সংবাদ প্রকাশকে উপলক্ষ করে আজাদ কর্তৃপক্ষ তাঁকে চাকরি থেকে বাদ দেয়। অতঃপর ফ্রাংকলিন পাবলিকেশনে জুনিয়র এডিটর হিসেবে যোগদান করেন। এরই বছর (১৯৫৪) দৈনিক ইত্তেফাকে (২৪ ডিসেম্বর ১৯৫৩) বার্তা সম্পাদক পদে নিযুক্তি লাভ করেন। ১৯৬৬-র জুন মাসে আইয়ুব সরকারইত্তেফাক বন্ধ করে দিলে সংবাদ সংস্থা পি.পি.আই -এর ব্যুরো চিফ হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৬৯-এরফেব্রুয়ারি মাসে পুনরায় ইত্তেফাকে বার্তা সম্পাদক পদে ফিরে আসেন। ১৯৭০-এ উক্ত পত্রিকার কার্যনির্বাহী সম্পাদক পদে উন্নীত হন। সৎ, সত্যনিষ্ঠ ও নির্ভীক সাংবাদিক হিসেবে খ্যাত। হৃদয়স্পর্শী শিরোনাম,সংবাদ নির্বাচন, বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ প্রভৃতির ক্ষেত্রে ইত্তেফাক যে মুনশিয়ানার পরিচয় দেয় তার মূলে ছিল সিরাজুদ্দীন হোসেনেরঅবদান। শোষিত- বঞ্চিত বাঙালির দুঃখ-দুর্শশা লাঘবের জন্য ইত্তেফাকে ‘মঞ্চে- নেপথ্যে’ কলামে অকুতোভয়ে লেখনী পরিচালনা করেন। তাঁর ক্ষুরধার লেখনী ও অমিততেজ দৃষ্টিভঙ্গি এ দেশের মানুষকে প্রেরণা জুগিয়েছিল এবং স্বাধীনতার অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষিত করেছিল। দেশে প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির ধারা সৃষ্টিতে তাঁর অবদান উল্লেখযোগ্য। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনীতির পন্থানুসারী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ষাটের দশকে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পূর্ব বাংলায় যে বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সৃষ্টি হয় তিনি তার একজন তাত্ত্বিক। ইত্তেফাকে শিশু-অপহরণ সম্পর্কে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লিখে আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেন। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গঠনে ১৯৫০-এ আজাদে ও ১৯৬৪-তে ইত্তেফাকের মাধ্যমে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। দুইবার সাবেক পূর্ব পাকিস্তান সাংবাদিক ইউনিয়নের নির্বাচিত সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করেন। কয়েকখানা গ্রন্থেরও প্রণেতা, ‘ছোট থেকে বড়’, ‘মহিয়সী নারী’, ‘ইতিহাস কথা কও’, ‘The Days Decisive’ ইত্যাদি তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদান রাখায় একুশে পদক (মরণোত্তর) (১৯৭৮) লাভ করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে (১৯৭১) অধিকৃত ঢাকায় ইত্তেফাকে দুঃসাহসিক সম্পাদকীয় লেখার পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করেছেন নানাভাবে অবরুদ্ধ বাংলাদেশের সংবাদ সংগ্রহ করে পাঠিয়েছেন মুজিবনগর সরকারের কাছে। তাঁর এ দেশপ্রেমমূলক ভূমিকা তাঁর জীবনকে সঙ্কটাপন্ন করে তোলে। দেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র ছ’দিন পূর্বে ১০ ডিসেম্বর ১৯৭১ পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর এদেশীয় দোসর আলবদর বাহিনীর কয়েকজন সদস্য তাঁকে তাঁর চামেলীবাগের (ঢাকা) বাসাথেকে ধরে নিয়ে যায়। তিনি আর ফিরে আসেন নি।




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ