শেখ লুৎফর রহমান (জীবনী)

প্রথম পাতা » জীবনী » শেখ লুৎফর রহমান (জীবনী)


শেখ লুৎফর রহমান

জাতীয় জাগরণের শিল্পী শেখ লুৎফর রহমানের জন্ম সাতক্ষীরা জেলায় ছোট বাকাল গ্রামে ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে। তিনি ছিলেন একজন সঙ্গীতশিল্পী। তাঁর পিতার নাম শেখ আব্দুল হক। তিনি ছিলেন স্কুল শিক্ষক ও সৌখিন সঙ্গীতশিল্পী। তিনি নয় মাস বয়সে টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে একটি পা হারান ইংরেজি স্কুল, পরে মাদ্রাসায় শিক্ষা গ্রহণ করেন। গান শেখার প্রতি তীব্র আকাঙ্ক্ষা জাগলে মাদ্রাসার পাঠ ত্যাগ করে পিতার কাছে রবীন্দ্র ও নজরুলসঙ্গীতে তালিম গ্রহণ করেন।স্থানীয় হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক উমাপদ ভট্টাচার্য তাঁর গানের দ্বিতীয় শিক্ষক ছিলেন। তারানির জমিদার সঙ্গীতজ্ঞ ডাক্তার পশুপতি চট্টোপাধ্যায় একদিন এক গানের জলসায় তাঁর কণ্ঠে গান শুনে বিমোহিত হন। পশুপতি চট্টোপাধ্যায় তাঁর নিজের বাড়িতে তাঁকে আশ্রয় দেন। পশুপতির কাছে পাঁচবছর উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত, টপ্পা, রামপ্রসাদী ও শ্যামাসঙ্গীত শেখেন। অতঃপর সঙ্গীতে প্রতিষ্ঠা লাভের অভিপ্রায়ে কলকাতায় গমন ১৯৪২ করেন। সেখানে প্রথমে অনাথ নাথ বসু, পরে বিদ্যুৎ বিশ্বাসের কাছে উচ্চাঙ্গসঙ্গীতে তালিম গ্রহণ করেন। সং পাবলিসিটি ডিপার্টমেন্টে গায়কের চাকরি লাভ করেন। কলকাতা বেতারে গানের অডিশনে পাস করে সেখানে থেকে নিয়মিত সঙ্গীত পরিবেশন করেন। দেশ বিভাগের পর কলকাতা ত্যাগ করে ঢাকা আগমন করেন এবং ঢাকা বেতারের সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৬৬ ১৯৬৪ পর্যন্ত করাচিতে নজরুল একাডেমির সঙ্গীতশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। করাচিতে কিছুকাল হাবিব আলী খাঁ বিনকার কাছে উচ্চাঙ্গসঙ্গীতে পাঠ গ্রহণ করেন। ১৯৬০-এ বগুড়ার এক সংস্কৃতিবান পরিবারের কন্যা মাহমুদা বেগমের সঙ্গে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। ১৯৬৪ তে করাচি ত্যাগ করে ঢাকায় প্রত্যাবর্তন করেন। বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত প্রতি রোববার সঙ্গীত শিক্ষার আসর’ পরিচালনা করেন। নজরুল ইনস্টিটিউটের সঙ্গীত বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ, সঙ্গীত মহাবিদ্যালয়ের (ঢাকা) নজরুলগীতি শাখার অধ্যাপক হন। তিনি গণ-সঙ্গীতের খ্যাতনামা কণ্ঠশিল্পী ও সুরকার। তিনি অনেক গান সুর ও কণ্ঠ দিয়েছেন যা আজও মানুষের মনে দাগ কেটে আছে। বিভিন্ন সভা-সমিতিতে এ সব গান পরিবেশন করে এদেশের মানুষকে ভাষা আন্দোলন, স্বাধিকার আন্দোলন ও স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার অনুপ্রেরণা যোগান। বাঙালি সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করে তোলার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। জাতীয় জাগরণের শিল্পী হিসেবে খ্যাত। সঙ্গীতে অবদান রাখায় একুশের পদক লাভ করেন। ‘জীবনের গান গাই, তাঁর রচিত আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ। ৩০ নভেম্বর ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে ঢাকায় তাঁর মৃত্যু হয়।




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ