বারী সিদ্দিকী (Bari Siddiqui)
প্রথম পাতা » জীবনী » বারী সিদ্দিকী (Bari Siddiqui)বারী সিদ্দিকী
(১৫ নভেম্বর ১৯৫৪ - ২৪ নভেম্বর ২০১৭) বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান সংগীত শিল্পী, গীতিকার ও বংশী বাদক।[১] তিনি মূলত গ্রামীণ লোকসংগীত ও আধ্যাত্মিক ধারার গান করে থাকেন। তিনি তার গাওয়া ‘শুয়া চান পাখি, ‘আমার গায়ে যত দুঃখ সয়’, ‘সাড়ে তিন হাত কবর’, ‘পুবালি বাতাসে’, ‘তুমি থাকো কারাগারে’, ‘রজনী’, ‘আমার গায়ে যত দুঃখ সয়’, ‘ওগো ভাবিজান নাউ বাওয়া’, ‘মানুষ ধরো মানুষ ভজো প্রভৃতি গানের জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিত।
প্রথম জীবন
বারী সিদ্দিকী ১৯৫৪ সালের ১৫ নভেম্বর বাংলাদেশের নেত্রকোণা জেলায় এক সঙ্গীতজ্ঞ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।[২] শৈশবে পরিবারের কাছে গান শেখায় হাতেখড়ি হয়। মাত্র ১২ বছর বয়সেই নেত্রকোণার শিল্পী ওস্তাদ গোপাল দত্তের অধীনে তার আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ শুরু হয়। তিনি ওস্তাদ আমিনুর রহমান, দবির খান, পান্নালাল ঘোষ সহ অসংখ্য গুণীশিল্পীর সরাসরি সান্নিধ্য লাভ করেন। ওস্তাদ আমিনুর রহমান একটি কনসার্টের সময় বারি সিদ্দিকীকে অবলোকন করেন এবং তাকে প্রশিক্ষণের প্রস্তাব দেন। পরবর্তী ছয় বছর ধরে তিনি ওস্তাদ আমিনুর রহমানের অধীনে প্রশিক্ষণ নেন। সত্তরের দশকে জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাথে যুক্ত হন। ওস্তাদ গোপাল দত্তের পরামর্শে ক্লাসিক্যাল মিউজিক এর উপর পড়াশোনা শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে বাঁশির প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন ও বাঁশির ওপর উচ্চাঙ্গসঙ্গীতে প্রশিক্ষণ নেন।[৩] নব্বইয়ের দশকে ভারতের পুনে গিয়ে পণ্ডিত ভিজি কার্নাডের কাছে তালিম নেন। দেশে ফিরে এসে লোকগীতির সাথে ক্লাসিক মিউজিকের সম্মিলনে গান গাওয়া শুরু করেন।
কর্মজীবন
সঙ্গীতজীবন
তিনি গোপাল দত্ত এবং ওস্তাদ আমিনুর রহমান থেকে লোক এবং শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে পাঠ নিয়েছেন। মূলত বংশী বাদক বারী সিদ্দিকী কথাসাহিত্যিক ও চিত্রনির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের প্রেরণায় নব্বইয়ের দশকে সঙ্গীত জগতে প্রবেশ করেন এবং অল্পদিনেই বিরহ-বিচ্ছেদের মর্মভেদী গানের মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষের হৃদয়ে স্থায়ী আসন করে নেন। দৈনিক আমার দেশ সংবাদপত্রকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সিদ্দিকী বলেন, “হুমায়ূন আহমেদ আমার গাওয়ার পেছনে যথেষ্ট উৎসাহ দিয়েছিলেন। মূলত তার সাহস নিয়েই সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রয়াস পেয়েছি।” [৩]
১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দে বারী সিদ্দিকী প্রখ্যাত সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ‘রঙের বাড়ই’ নামের একটা ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে জনসমক্ষে প্রথম সঙ্গীত পরিবেশন করেন।[৪] এরপর ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে হুমায়ূন আহমেদের রচনা ও পরিচালনায় নির্মিত শ্রাবণ মেঘের দিন চলচ্চিত্রে ৭টি গানে কণ্ঠ দেন। এর মধ্যে “শুয়া চান পাখি” গানটির জন্য তিনি অতিদ্রুত ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন।
১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে জেনেভায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব বাঁশি সম্মেলনে ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে তিনি অংশগ্রহণ করেন।[৫]
চলচ্চিত্র ও নাটক
বারী সিদ্দিকী বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিয়েছেন ও গানের কথা লিখেছেন।
২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে সিদ্দিকী ফেরারী অমিতের রচনা ও পরিচালনায় পাগলা ঘোড়া নাটকে প্রথমবারের মত অভিনয় করেন।[৬]
প্রকাশিত অ্যালবাম
একক অ্যালবাম
দুঃখ রইলো মনে
অপরাধী হইলেও আমি তোর
সরলা
ভাবের দেশে চলো
সাদা রুমাল
মাটির মালিকানা
মাটির দেহ
মনে বড় জ্বালা
প্রেমের উৎসব
ভালোবাসার বসত বাড়ি
নিলুয়া বাতাস
দুঃখ দিলে দুঃখ পাবি
মিশ্র অ্যালবাম
আসমান সাক্ষী (২০০৯) [৭]
চন্দ্রদেবী (২০০৯) [৭]
চলচ্চিত্র
শ্রাবণ মেঘের দিন (২০০০)
রূপকথার গল্প (২০০৭)
নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ (২০১২) [৮]
ও আমার দেশের মাটি (২০১২) [৯]
মাটির পিঞ্জিরা (২০১৩)
অভিনীত চলচ্চিত্র
বছর চলচ্চিত্র পরিচালক সহশিল্পী মুক্তির তারিখ নোট
২০১৩ মাটির পিঞ্জিরা এস এম শাহেনওয়াজ শাহিদ খান, শম্পা, রাইসুল ইসলাম আসাদ,
আফরোজা বানু, নাসিমা খান ২৬ এপ্রিল ২০১৩ বিশেষ চরিত্র [১০]
অভিনীত নাটক
বছর নাটক পরিচালক সহশিল্পী নোট
২০১৩ পাগলা ঘোড়া ফেরারি অমিত আনিসুর রহমান মিলন, তানিয়া কাজী অতিথি চরিত্র [১০]
ব্যক্তিগত জীবন
তার পূর্ণ নাম আবদুল বারী সিদ্দিকী। বারী সিদ্দিকী বিবাহিত, এক কন্যা ও দুই ছেলের বাবা।
পুরস্কার ও সম্মাননা
প্রবাস প্রজন্ম জাপান সম্মাননা (২০১৪) [১১][১২]
সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস
মৃত্যু
২০১৭ সালের ১৭ নভেম্বর রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তাকে ঢাকায় স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় তাকে যেখানে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। ২৪ নভেম্বর তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখানে মৃত্যুবরণ করেন।[১৩][১৪]
তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া