আহসান হাবীব (Ahsan Habib)
প্রথম পাতা » জীবনী » আহসান হাবীব (Ahsan Habib)আহসান হাবীব
(২ জানুয়ারি ১৯১৭ - ১০ জুলাই ১৯৮৫) একজন খ্যাতিমান বাংলাদেশি কবি ও সাহিত্যিক। দীর্ঘ দিন দৈনিক বাংলা পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক পদের দায়িত্ব পালন সূত্রে তিনি স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের সাহিত্য অঙ্গনে অভিভাবকের ভূমিকা রেখেছেন। তিনি চল্লিশের দশকের অন্যতম প্রধান আধুনিক কবি হিসেবে পরিগণিত। [১] বাংলা ভাষা সাহিত্যে অবদানের জন্য তাঁকে বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৮ সালে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদক এবং ১৯৯৪ সালে মরণোত্তর দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করে।
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
আহসান হাবীবের জন্ম ১৯১৭ সালের ২ জানুয়ারি পিরোজপুরের শংকরপাশা গ্রামে৷ পিতার নাম হামিজুদ্দীন হাওলাদার, মাতা জমিলা খাতুন। তার ছিল পাঁচ ভাই ও চার বোন৷ অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল পিতামাতার প্রথম সন্তান তিনি৷ পারিবারিকভাবে আহসান হাবীব সাহিত্য-সংস্কৃতির আবহের মধ্যে বড় হয়েছেন। সেই সূত্রে বাল্যকাল থেকেই লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। সেই সময় তার বাড়িতে ছিল আধুনিক সাহিত্যের বইপত্র ও কিছু পুথি। যেমন আনোয়ারা, মনোয়ারা, মিলন মন্দির প্রভৃতি৷ এসব পড়তে পড়তে একসময় নিজেই কিছু লেখার তাগিদ অনুভব করেন। সাহিত্যের অনুকূল পরিবেশ নিয়ে পিরোজপুর গভর্নমেন্ট স্কুল থেকে ১৯৩৫ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর তিনি চলে আসেন বরিশালে৷ ভর্তি হন সেখানকার বিখ্যাত বিএম কলেজে৷ কিন্তু অর্থনৈতিক সংকটের কারণে কলেজের পড়াশোনার পাঠ শেষ পর্যন্ত অসমাপ্ত রাখতে হয় তাকে। বিএম কলেজে দেড় বছর পড়ার পর ১৯৩৬ সালের শেষার্ধে কাজের খোঁজে তিনি তৎকালীন রাজধানী কলকাতায় পাড়ি জমান৷ এভাবেই কবি আহসান হাবীবের বরিশাল থেকে কলকাতায় পদার্পণ।
কর্ম ও ব্যক্তিগত জীবন
আহসান হাবীব ১৯৪৭ সালের ২১ জুন বিয়ে করেন বগুড়া শহরের কাটনারপাড়া নিবাসী মহসীন আলী মিয়ার কন্যা সুফিয়া খাতুনকে। আহসান হাবীব দুই কন্যা (কেয়া চৌধুরী ও জোহরা নাসরীন) ও দুই পুত্রের (মঈনুল আহসান সাবের ও মনজুরুল আহসান জাবের) জনক ছিলেন। পুত্র সাবের একজন স্বনামখ্যাত বাংলা ঔপন্যাসিক ও প্রকাশনালয় দিব্যপ্রকাশের কর্ণধার।
১২-১৩ বছর বয়সে স্কুলে পড়ার সময়ই ১৯৩৩ সালে স্কুল ম্যাগাজিনে তার একটি প্রবন্ধ ধরম প্রকাশিত হয়৷ ১৯৩৪ সালে তার প্রথম কবিতা মায়ের কবর পাড়ে কিশোর পিরোজপুর গভর্নমেন্ট স্কুল ম্যাগাজিনে ছাপা হয় ৷ পরবর্তী সময়ে ছাত্রাবস্থায় কলকাতার কয়েকটি সাহিত্য পত্রিকায় লেখা প্রকাশিত হলে তার নিজের সম্পর্কে আস্থা বেড়ে যায়। স্কুলে পড়াকালীন তিনি প্রবন্ধ প্রতিযোগিতার বিষয়বস্তুকে কবিতায় উপস্থাপিত করে পুরস্কৃত হয়েছিলেন। ততদিনে অবশ্য দেশ, মাসিক মোহাম্মদী, সাপ্তাহিক বিচিত্রার মতো নামিদামি পত্রপত্রিকায় তার বেশ কিছু লেখা প্রকাশিত হয়ে গেছে৷ কলকাতায় গিয়ে শুরু হয় আহসানের সংগ্রামমুখর জীবনের পথচলা৷ সেখানে ১৯৩৭ সালে দৈনিক তকবির পত্রিকার সহ-সম্পাদকের কাজে নিযুক্ত হন । [২] বেতন মাত্র ১৭ টাকা৷ পরবর্তীকালে তিনি ১৯৩৭ সাল থেকে ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত কলকাতার বুলবুল পত্রিকা ও ১৯৩৯ সাল থেকে ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত মাসিক সওগাত পত্রিকায় কাজ করেন ৷ এছাড়া তিনি আকাশবাণীতে কলকাতা কেন্দ্রের স্টাফ আর্টিস্ট পদে ১৯৪৩ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত কাজ করেন৷
মৃত্যু
১৯৮৫ সালের ১০ জুলাই আহসান হাবীব মৃত্যুবরণ করেন।
রচনাবলি
কাব্যগ্রন্থ, বড়দের উপন্যাস, গল্প, প্রবন্ধ-নিবন্ধ, ছোটদের ছড়া ও কবিতার বই সব মিলিয়ে আহসান হাবীবের বইয়ের সংখ্যা ২৫টি।
কাব্যগ্রন্থ
রাত্রিশেষ (১৯৪৭)
ছায়াহরিণ (১৯৬২)
সারা দুপুর (১৯৬৪)
আশায় বসতি (১৯৭৪)
মেঘ বলে চৈত্রে যাবো (১৯৭৬)
দু’হাতে দুই আদিম পাথর (১৯৮০)
প্রেমের কবিতা (১৯৮১)
বিদীর্ণ দর্পণে মুখ (১৯৮৫)
উপন্যাস
রাণী খালের সাঁকো (১৯৬৫)
আরণ্য নীলিমা (১৯৬২)
জাফরানী রং পায়রা
শিশু সাহিত্য
জোছনা রাতের গল্প
ছুটির দিন দুপুরে
বিষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর
রেলগাড়ি ঝমামমে
রাণীখালের সাঁকো
জ্যোৎস্না রাতের গল্প
ছোট মামা দি গ্রেট
পাখিরা ফিরে আসে
রত্নদ্বীপ (ট্রেজার আইল্যান্ডর সংক্ষিপ্ত অনুবাদ)
হাজীবাবা
প্রবাল দ্বীপে অভিযান (কোরাল আইল্যান্ডর সংক্ষিপ্ত অনুবাদ)[৩]
সম্পাদিত গ্রন্থ
কাব্যলোক
বিদেশের সেরা গল্প
পুরস্কার
ইউনেসকো সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬১)
বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬১)
আদমজী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬৪)
নাসিরউদ্দীন স্বর্ণপদক (১৯৭৭)
একুশে পদক (১৯৭৮)
আবুল মনসুর আহমদ স্মৃতি পুরস্কার (১৯৮০)
আবুল কালাম স্মৃতি পুরস্কার (১৯৮৪)
স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার (১৯৯৪)
তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া