ড. মুহম্মদ এনামুল হক(জীবনী)

প্রথম পাতা » জীবনী » ড. মুহম্মদ এনামুল হক(জীবনী)


ড. মুহম্মদ এনামুল হক

ড. মুহম্মদ এনামুল হক। বাংলা ভাষা, সাহিত্যে, সংস্কৃতিতে যার তুলনাহীন। বিশেষ করে বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলনের তাত্ত্বিক পুরোধা ও নির্ভীক প্রবক্তা ছিলেন তিনি। বাঙালি জাতীয়তাবাদী ধ্যান-ধারণায় বিশ্বাসী এই মহান মানুষটির জন্ম ১৯০২ খ্রি. চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার বখতপুর শিক্ষাবিদ ও গবেষক। রাউজান থেকে ১৯২৩ খ্রি. প্রথম বিভাগে প্রবেশিকা পরীক্ষায় মহসীন বৃত্তি লাভ করে উত্তীর্ণ হন। ১৯২৫ খ্রি. চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে ১ম বিভাগে আই এ পাস করেন, ১৯২৭ খ্রি. চট্টগ্রাম কলেজ থেকে দ্বিতীয় বিভাগে ১ম স্থান অধিকার করে আরবিতে বি.এ অনার্স, ১৯২৯ খ্রি. কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়-এর ইন্ডিয়ান ভার্নাকুলার বিভাগ থেকে বাংলায় এম. এ. ডিগ্রি লাভ করেন এবং ১৯৩৬ খ্রি. ডেভিড হেয়ার ট্রেনিং কলেজ থেকে বি.টি লাভ করেন ডিগ্রি। ১৯৩৬ খ্রি. চট্টগ্রামের মিরেশ্বরাইর জোয়ারগঞ্জ স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু। ১৯৩৭ খ্রি. চব্বিশ পরগণার বারাসত সরকারি উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব লাভ করেন। ১৯৪১ খ্রি. হাওড়া জেলা স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৪২ খ্রি. মালদহ জেলা স্কুলে একই পদে যোগদান। ১৯৪৫ খ্রি. ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯৪৮ খ্রি. রাজশাহী সরকারি কলেজে বাংলার অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৫২ খ্রি. বেসরকারি দৌলতপুর কলেজের অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। ১৯৫৪ খ্রি. অধ্যক্ষ পদে আসীন হন এবং একই বছরের শেষ দিকে চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। ১৯৫৫ খ্রি. পূর্ববাংলা স্কুল টেক্সট বুক বোর্ডের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। ১৯৫৬ তে নিযুক্ত হন পূর্ববাংলা বেসরকারি এডুকেশন বোর্ডের চেয়ারম্যান ১৯৫৬ খ্রি. বাংলা একাডেমির পরিচালক পদে যোগদান করেন। ১৯৬১ খ্রি. রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্তি লাভ করেন। ১৯৬৪-১৯৬৮ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় বাংলা উন্নয়ন বোর্ডের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৯- ১৯৭৩ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার সংখ্যাতিরিক্ত অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৩-১৯৭৫ সাল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৭ খ্রি. মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৮১ খ্রি. থেকে আমৃত্যু ঢাকা জাদুঘরের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ছিলেন। সাহিত্যে অসামান্য অবদান রেখেছেন তিনি। বিশেষ করে গবেষণাধর্মী রচনায় তিনি সিদ্ধহস্ত ছিলেন । গবেষণা, কাব্য, প্রবন্ধ, ভ্রমণ কাহিনি ইত্যাদি সব মিলিয়ে সাহিত্য কর্মে তিনি বিশেষ অবদান রাখেন। আবাহন (গীতি সংকলন, ১৯২০-১৯২১), ঝর্ণাধারা (কবিতা সংকলন, ১৯২৮), আরাকান রাজসভায় বাঙালা সাহিত্য (আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদের সঙ্গে একযোগে রচনা ১৯৩৫) ইত্যাদি। সম্পাদিত অন্যান্য গ্রন্থ Perso-Arabic Elements in Bengali (with Dr. M. Hilali. 1967). Dr. Muhammad Shahidullah Felicitation valume (Asiatic Society of Pakistan, 1966), ইমরুল কায়েসের কাব্য- নুরুদ্দিন অনূদিত। মুসলিম বাঙ্গালা সাহিত্য গ্রন্থের ইংরেজি ও উর্দু সংস্করণ (১৯৫৭-তে প্রকাশিত)। সাহিত্য ও শিক্ষাক্ষেত্রে অবদান রাখায় ১৯৬৪ তে ‘বাংলা একাডেমি পুরস্কার’ ১৯৬৬ তে প্রেসিডেন্ট পুরস্কার ১৯৬৮-তে সিতারা-ই-ইমতিয়াজ’ ১৯৭৯- তে একুশে পদক, ১৯৮০ তে শেরে বাংলা সাহিত্য পুরস্কার এবং ১৯৮১-তে মুক্তধারা সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হন। বাংলা ভাষা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে তাঁর অবদান তুলনারহিত। তিনি প্রবন্ধে লিখেছেন ‘বাংলাকে ছাড়িয়া উর্দুকে রাষ্ট্রভাষারূপে পূর্ব পাকিস্তানবাসী গ্রহণ করিলে, তাহাদের রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মৃত্যু অনিবার্য। এরপর ১৯৭১- বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করে। সরকারি দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকেন। পাকবাহিনীর আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষার জন্য নয় মাস গ্রামাঞ্চলে আত্মগোপন করে কাটান। ঢাকা পি.জি হাসপাতালে ১৫,২,১৯৮২ খ্রি. মৃত্যুবরণ করেন।
১৯৮২ – ১৬ ফেব্রুয়ার ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে তাকে স্বাধীনতা পুরস্কার (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়।




আর্কাইভ