হামিদুর রহমান(জীবনী)

প্রথম পাতা » জীবনী » হামিদুর রহমান(জীবনী)


হামিদুর রহমান
চিত্রশিল্পী, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের রূপকার যিনি শহীদ মিনারের ভাস্কর্যের রূপকল্পের ভেতর দিয়ে বাঙালির আবেগ, সংগ্রাম, বীরত্ব আত্মত্যাগের মহিমাকে রূপায়িত করেছেন, দেশ, কাল, সমকালীন জীবনের জটিলতা ও সমস্যা যার চিত্রের ক্যানভাসে বিমূর্ত হয়ে সব সময়। সত্তরের জলোচ্ছ্বাসের স্বাধীনতা যুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীর নারী নির্যাতন ও গণহত্যা, বন্যাপীড়িত মানুষের আত্মরক্ষার সংগ্রাম, বাঙালির জীবন জীবিকার কর্মপ্রবাহ যার চিত্রকলায় উদ্ভাসিত হস্ত সব সময় তিনি হচ্ছেন হামিদুর রহমান। চিত্রকর হিসেবে দেশ ও বিদেশে যথেষ্ট সুনাম- সুখ্যাতি ছিল তার। হামিদুর রহমানের সহজ পরিচয় শহীদ মিনারের রূপকার তিনি। জন্ম ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে ঢাকার ইসলামপুরে এক উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারে। পিতার নাম- মির্জা ফকির মোহাম্মদ। ঢাকার সরকারি আর্টস স্কুল (বর্তমানে বাংলাদেশ চারু ও কারুকলা ইনস্টিটিউট) থেকে চিত্রকলার উপর প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। পরবর্তী সময়ে চিত্রকলায় উচ্চ শিক্ষার্জনের জন্য ইউরোপ গমন করেন। প্যারিসের ইকোল দ্য রোজ আর্টস ইনস্টিটিউট থেকে চিত্রাঙ্কন শিক্ষা গ্রহণ (১৯৫০- ‘৫১) করেন, পরে লন্ডনের সেন্ট্রাল স্কুল অব আর্টস এ্যান্ড ডিজাইন’ থেকে চিত্রকলায় ডিপ্লোমা ডিগ্রি লাভ করেন। দেশে ফিরে আসেন ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে। ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে নিজের তৈরি মডেলে শুরু করেন মেডিকেল কলেজ প্রাঙ্গণে শহীদ মিনারের নির্মাণ কাজ। তবে সে বছর সামরিক আইন জারি করা হলে মিনারের নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে গমন করেন। এখানে পেনসিলভার্নিয়া একাডেমি অব ফাইন আর্টস-এ রিসার্চ স্কলার হিসেবে এক বছর চিত্রকলার উপর গবেষণা করেন। জীবনের দীর্ঘ সময় তিনি যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় অতিবাহিত করেন। কানাডার মন্ট্রিয়ালে ম্যাকডোনাল্ড কার্টিলার পলিটেকনিকে চারুকলায় অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন অনেক দিন। ১৯৬২-তে শহীদ মিনারের নির্মাণ কাজ শুরু করেন এবং ১৯৬৩-এর ২১ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে শহীদ মিনারের শুভ উদ্বোধন হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের সামনে সিমেন্টের সঙ্গে রং মেশানো ১৭০০ বর্গফুটের যে ম্যুরাল আমরা দেখি, সেটি তার করা। ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে লন্ডনের কমনওয়েলথ ইনস্টিটিউট গ্যালারি, ১৯৮৬-তে ঢাকার শিল্পকলা একাডেমিতে তার একক চিত্রকলা প্রদর্শিত হয়। চিত্রকলার অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে একুশে পদকে ভূষিত হন। তিনি ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বরে কানাডায় মৃত্যু বরণ করেন।




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ