আব্দুল হালিম চৌধুরী(জীবনী)

প্রথম পাতা » জীবনী » আব্দুল হালিম চৌধুরী(জীবনী)


আব্দুল হালিম চৌধুরী

কালজয়ী কণ্ঠশিল্পী আব্দুল হালিম চৌধুরীর  জন্ম মির্জাপুর স্ট্রিট, কলকাতা, ১৯১৮। সঙ্গীত শিল্পী। পৈতৃক নিবাস জয়পাড়া- গাজীকান্দাগ্রাম, দোহার, ঢাকা। কলকাতার এক মার্চেন্ট অফিসের একাউনটেন্ট আবদুল কাদের চৌধুরী তাঁর পিতা। বাল্যকালে মায়ের কণ্ঠে গজলের সুর শুনে গানের প্রতি তাঁর অনুরাগ জন্মে। কলকাতা মিত্র ইনস্টিটিউশন থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে অকৃতকার্য হন। (১৯৩৪)। পরীক্ষায় ফেল করায় পিতা ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন। এরপর বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের বাসায় থাকেন।ঘটনার কিছুকাল পরে প্রথমে তাঁর মা, পরে বাবা মারা যান। জীবিকা নির্বাহের জন্য এক প্রেসে কম্পোজিটরের কর্ম গ্রহণ করেন। একদা কলকাতার চাঁদনি চকে ঈদের চাঁদরাতে এক গানের অনুষ্ঠানে হারমোনিয়াম বাজিয়ে কাজী নজরুল ইসলামের ‘খোদার প্রেমের শরাব পিয়ে’ ইসলামিক গানটি গেয়ে ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেন। তাঁর সঙ্গীতের প্রতিভার পরিচয় পেয়ে উক্ত অনুষ্ঠানের একজন কর্মকর্তা সবর আলী তার আহার, বাসস্থান ও গান শেখার ব্যবস্থা করে দেন। সুনীলদের কাছে রাগ সঙ্গীতে ও মাধব ব্যানার্জির কাছে তবলায় তালিম গ্রহণ (১৯৩৪-১৯৩৫) করেন। মাধব ব্যানার্জির সহায়তায় কলকাতার মালেদের জমিদারের বাড়িতে রাধাকৃষ্ণের এক পালায় কৃষ্ণের ভূমিকায় অভিনয় করার সুযোগ লাভ করেন। অনুষ্ঠানের রাতে তার সুরেলা কণ্ঠে কীর্তন শুনে জমিদার-পত্নী তার প্রতি অভিভূত হয়ে তাকে তাদের বাড়িতে আশ্রয় দেন। জমিদারবাড়িতে জমিদারের ছেলেমেয়েদের সাথেই ওস্তাদ বয়েজ নাথের কাছে তিন বছর সঙ্গীত শিক্ষা গ্রহণ করেন। কবি তসের আলীর সুপারিশে মেথোলা রেকর্ডিং কোম্পানিতে হারমোনিয়াম বাদকের চাকরি লাভ করেন। কালীপদ চক্রবর্তী নামে একজন কীর্তনিয়ার কাছে কীর্তন ও রামপ্রসাদী গানের তালিম গ্রহণ করেন। এ সময়ে বিখ্যাত দোতরাবাদক কানাইলাল শীল ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী পল্লীগীতি শিল্পী আব্বাসউদ্দীন আহমদের স্নেহ সান্নিধ্য লাভ করেন। হিন্দুস্থান রেকর্ডিং কোম্পানি থেকে কবি তসের আলীর দুখানি গান ‘আরে ও আল্লা কাদের গণি’ ও ‘খোদার নামে কোরবান হয়ে’ রেকর্ডিং হয়ে বেরোলে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন (১৯৩৭) করেন। অতঃপর কলকাতা বেতার কেন্দ্র থেকে নিয়মিত সঙ্গীত পরিবেশন করেন। ১৯৪০-১৯৪৩ পর্যন্ত অল ইন্ডিয়া রেডিওর ঢাকা কেন্দ্রে সঙ্গীত পরিবেশন করেন। ১৯৪২-এ খালাতো বোন শামসুননাহার বেগমের সঙ্গে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন। ১৯৪৩-এ কলকাতায় ‘সঙ পাবলিসিটি ডিপার্টমেন্টে’ গায়ক হিসেবে চাকরি লাভ। এ সময়ে কবি জসীমউদ্দীনের দীনের রসুল, ওই নাম হয় না যেনো ভুল’ তাঁর কণ্ঠে রেকর্ডিং হয়। সঙ পাবলিসিটি বিভাগের চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে কলকাতায় মেগাফোন গ্রামোফোন রেকর্ডিং কোম্পানিতে পর্যন্ত ‘ভয়েস অব ট্রেনার হিসেবে যোগদান (১৯৪৫) করেন। ১৯৬০-১৯৬৫ আমেরিকার’ বাংলা অনুষ্ঠানের সুরকার এবং ১৯৬৬-১৯৭২ পর্যন্ত চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রের নিজস্ব শিল্পী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আধুনিক গান, পল্লীগীতি, মারফতি, মুরশিদী, নজরুল সঙ্গীত, গজল, হামদ, নাত, কোরাস গান ও বাংলা কাওয়ালির খ্যাতনামা গায়ক ও সুরকার। ‘জানি তুমি যাবে চলে’, ‘স্বপন ফুরায়ে যায়’, ‘আকাশের এতো নীল’, ‘আজো মোর মনে পড়ে, ‘যদি কোন দিন শোন ওগো তুমি’, ‘উতল বাদল হাওয়া’, ‘চাঁদ ছিল জেগে রাতের মিনারে’, ‘প্রেমের আখরে যে নাম লেখেছি’ ইত্যাদি আধুনিক গানে সুর সংযোজন করে কণ্ঠদান করেন। তার সুর করা ‘জিন্দেগী বরবাদ করে দে’ গজলটি বাংলা সঙ্গীত জগতের এক অমূল্য সম্পদ। তৎ-কর্তৃক সুর আরোপিত হামদ’ নিয়ে চলো খোদা মানুষের তুমি এবং না’ত ওগো মদীনা মনওয়ারা’ ধর্মানুরাগীদের কাছে ব্যাপকভাবে সমাদৃত ৷ ‘জাগো দীপ্ত প্রাণ’ শীর্ষক জনপ্রিয় কোরাসটির সঙ্গীত পরিচালক। ‘বন্ধু মোরে কয়া যাও’ (শিল্পী মমতাজ আলী খান), ‘একলা কেন শুকতারাগো’ (শিল্পী আব্দুল আলীম) ইত্যাদি জনপ্রিয় পল্লীগীতিতে সুরারোপ করেন। বাংলা কাওয়ালি গান জনপ্রিয় করে তোলার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। ‘এই তো জীবন’ ছায়াছবির সঙ্গীত পরিচালক। ‘গোধূলির পথে’ ছবির গানে কণ্ঠদান। ‘রাজা এলো শহরে’ ও ‘শীত বিকেল’ ছবিতে অভিনয়। সঙ্গীতে অবদান রাখায় ‘একুশের পদক’ লাভ (১৯৮১)। মৃত্যু ঢাকা, ২৭ জানুয়ারি।




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ