মমতাজ আলী খান(জীবনী)

প্রথম পাতা » জীবনী » মমতাজ আলী খান(জীবনী)


মমতাজ আলী খান

‘জ্বালাইলে যে জ্বলে আগুন, নিভানো বিষয় দায়, আগুন জ্বালাইস না আমার গায় অথবা জন-সখী ছায়াছবিতে কবীর গুন গুনা গুন গান গাহিয়া নীল ভোমরা যায়’ গান দুটো কী মনে পড়ে? এ রকম অসংখ্য জনপ্রিয় পল্লী গানের গীতিকার ও সুরকার মমতাজ আলী খান। নায়ক হিসেবেও ছিলেন খ্যাতির শীর্ষে। এই অসামান্য প্রতিভাবান মানুষটির জন্য ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে মানিকগঞ্জ জেলার কাশিমপুর গ্রামে। পল্লী গানের একজন জাত শিল্পী তিনি। জোতদার আফসারউদ্দীন খান তাঁর পিতা। স্কুলে পাঠকালে পিতার কেনা কলের গান তনে সঙ্গীতের প্রতি তাঁর অনুরাগ জন্মে। সুরেলা কণ্ঠে খালি গলায় গান গেয়ে পাড়া- পড়শিদের শোনাতেন। স্থানীয় স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পাঠকালে গান শেখার জন্য কলকাতায় গমন করেন। সেখানে ওস্তাদ নেসার হোসেন খানের কাছে সঙ্গীতে তালিম গ্রহণ এবং এরপর প্রথমে একজন নাপিতের কাছে, পরে ওস্তাদ নেসার হোসেন খানের কাছে দোতারা বাজানো শেখেন। ওস্তাদ মোহাম্মদ হোসেন খসরুর সহায়তায় সরকারের ‘সং পাবলিসিটি ডিপার্টমেন্ট যন্ত্রী হিসেবে চাকরি লাভ করেন। কিছুকাল ওস্তাদ আবদুল হালিম চৌধুরীর কাছে সঙ্গীত শিক্ষা গ্রহণ করেন। প্রাইভেট পরীক্ষা নিয়ে আই.এ. পাস করেন। একদা ‘সং পাবলিসিটির এক অনুষ্ঠানে তাঁর কণ্ঠে ‘আমার বন্ধুরে আগে বলিস সজনী/ আমি জন্মের মতো যমুনাতে যাই’ এই ভাটিয়ালি গানটি শুনে কবি জসীমউদ্দীন (সং পাবলিসিটি ডিপার্টমেন্টের অর্গানাইজার) তাঁর প্রতি খুশি হয়ে তাঁকে দশ টাকা পুরস্কার ও ‘সং পাবলিসিটি ডিপার্টমেন্টে গায়কের চাকরি দেন। কলকাতা বেতারের গায়ক হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য কন্ঠ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন (১৯৪৩)। অতঃপর কলকাতা বেতার কেন্দ্র থেকে নিয়মিত সঙ্গীত পরিবেশন করেন। গ্রামোফোন কোম্পানি থেকে ‘ও শ্যাম বন্ধুৱে’ ও ‘রাধে ভাবিলে কি হবে, শ্যাম তোমায় ফাঁকি দিয়েছে এ দু’খানি গান তাঁর কণ্ঠে রেকর্ডিং হলে খ্যাতি অর্জন করেন। ‘সং পাবলিসিটি বিভাগের চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে কলকাতা বেতারের স্টাফ আর্টিস্ট পদে যোগদান করেন। দাজার বছর (১৯৪৬) কলকাতা ত্যাগ করে ঢাকায় আগমন এবং ঢাকা বেতারের নিজস্ব শিল্পী নিযুক্ত হন। ১৯৬৫-তে পশ্চিম পাকিস্তানে পি.আই. এ. (পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারওয়েজ)- এর আর্টস একাডেমিতে সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৭১-এর ১৫ মার্চ ছুটি নিয়ে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ঢাকায় আগমন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যার প্রতিবাদে ও মুক্তিযুদ্ধের (১৯৭১) সমর্থনে চাকরিতে যোগদান থেকে বিরত থাকেন। স্বাধীনতা লাভের পর বাংলাদেশ বিমানে সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে যোগদান তিনি কণ্ঠশিল্পী হিসেবেও সুনাম অর্জন করেন। ‘আকাশ আর মাটি, ‘যে নদী মরু পথে’ ও ‘দয়াল মুরশিদ; ছবির একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। বাংলা পল্লীগীতিকে সমৃদ্ধ করে তোলার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি একুশে পদক লাভ করেন। মৃত্যু ৩১ আগস্ট ১৯৯০।




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ