শহীদুল্লাহ কায়সার(জীবনী)

প্রথম পাতা » জীবনী » শহীদুল্লাহ কায়সার(জীবনী)


শহীদুল্লাহ কায়সার

বাংলাদেশের প্রখ্যাত সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লাহ কায়সার। আসল নাম ছিল ল আবু নঈম মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ। কিন্তু পরিচিত হয়ে গিয়েছিলেন শহীদুল্লাহ কায়সার নামে। । তাঁর র জন্ম ফেনীতে, ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে ১৬ ফেব্রুয়ারি। পিতা মওলানা মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ছিলেন। ঐ মাদ্রাসা থেকেই প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাস করে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ১৯৪৪ সালে আই এ পাস শহীদুল্লাহ কায়সার। এরপর অর্থনীতীতিতেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং রিপন কলেজে ল’ পড়া শুরু করেন। কিন্তু পরবর্তীকালে পড়া ছেড়ে ঢাকায় চলে আসেন। তখন দেশ ভাগ হয়ে গেছে। ঢাকায় এসে ভর্তি হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে। কিন্তু অতি অল্প সময়ের মধ্যেই সম্পৃক্ত হলেন বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে। ফলে পড়াশুনা শেষ হয়ে যায়। এক সময় যুক্ত হন কম্যুনিস্ট পার্টির সঙ্গে। বিশ্বাসী ছিলেন মার্কসবাদে। প্রাদেশিক কম্যুনিস্ট পার্টির সদস্য হলেন। ৫২ তে ভাষা আন্দোলনে রীতিমত নেতৃত্ব দেন কোন কোন ক্ষেত্রে। ফলে ৩ জুন গ্রেফতার হন। বছর তিনেক থাকেন কারাগারে। তারপরে মুক্তি লাভ করেন। কিন্তু মুক্তিলাভের কয়েক দিন পরেই রাজনৈতিক কারণে পুনরায় গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। ৫৬ তে মুক্তিলাভ করেন। ৫৮ তে সামরিক আইন জারি হলে পুনরায় গ্রেফতার করা হয় তাঁকে সাত দিন পরে অর্থাৎ ১৪ অক্টোবর। ইতিমধ্যে তিনি সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি দিয়েছেন- সাপ্তাহিক ইত্তেফাকে কাজ শুরু করেন ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে। ১৯৫৮- তে জেল থেকে বেরিয়ে যোগ দিলেন দৈনিক সংবাদ’-এ সহকারী সম্পাদক রূপে। ষাটের দশকের এক সময়ে দায়িত্ব নেন সম্পাদকের। ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি বিবাহ করেন তৎকালীন সময়ে পশ্চিমবঙ্গের এক মন্ত্রী ডা. আর আহমদের কন্যা কম্যুনিস্ট কর্মী জোহরা বেগমকে। কিন্তু সময়ে তার সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। পরে ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে ১৭ ফেব্রুয়ারি তিনি পান্না চৌধুরীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। বর্তমানে পান্না কায়সার, লেখিকা ও সাংসদ হিসেবে সুপরিচিতা। সাংবাদিক হিসেবে খ্যাতিমান ও সফল সাংবাদিক ছিলেন শহীদুল্লাহ কায়সার। সফলতা অর্জননকরেছিলেন শেষাবছি কথা-সাহিত্যিক হিসেবেও। এদেশের বাঙ্গালীদের জীবন, তাদের জীবনের আশা-নিরাশা, দুঃখ কষ্ট, চাওয়া-পাওয়া, দ্বন্দ্ব সংঘাত আর সর্বোপরি
তাদের সংগ্রামী চেতনামুখর জীবন যাপনের বাস্তব চিত্র তিনি চিত্রিত করেছেন। অনন্য কুশলতার সঙ্গে তাঁর ‘সারেং বৌ’, ‘সংশপ্তক,’ ‘রাজবন্দীর রোজনামচা’ ও তার স্মৃতি কথার ভ্রমণ কাহিনী লিখেছেন তিনি পেশোয়ার থেকে তাসখন্দ’ গ্রন্থে। বাংলাদেশের সংগ্রামমুখর জেলে জীবনের উপর লেখা ‘সারেং বৌ’ উপন্যাসের জন্য তিনি ১৯৬২-তে পান আদমজী পুরস্কার । উপন্যাসের জন্য পান ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দেবাংলা একাডেমি পুরস্কার। ভাষা আন্দোলনসহ এদেশের প্রত্যেকটি প্রগতিশীল আন্দোলনের সঙ্গে তিনি সরাসরি যুক্ত ছিলেন আজীবন। গণতান্ত্রিক ও জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে তিনি পালন করেন সক্রিয় বলিষ্ট ভূমিকা। সমাজতান্ত্রিক মতবাদে বিশ্বাসী ছিলেন শহীদুল্লাহ কায়সার। এদেশের মুক্তিযুদ্ধ শেষ মর্মান্তিকভাবে মৃত্যু ঘটে তার অত্যন্ত রহস্যজনকভাবে। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয় সাধিত হবার মাত্র দুদিন পূর্বে পাকিস্তানি হানদার বাহিনীর সহযোগী এদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী কুখ্যাত আল বদর বাহিনীর সদস্যরা তাঁকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এরপর তিনি আর ফিরে আসেননি। উল্লেখ্য, তাঁকে খুঁজতে গিয়ে স্বাধীনতার ঠিক পরপরই তাঁর অনুজ জহির রায়হানও স্বাধীনতা বিরোধীদের দ্বারা অপহৃত ও নিহত হন। তাঁর মৃত্যুও ছিল রহস্যজনক। ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে একুশে পদক এবং ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দে তাকে স্বাধীনতা পুরস্কার (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়।




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ