এস.এম. সুলতান(জীবনী)

প্রথম পাতা » জীবনী » এস.এম. সুলতান(জীবনী)


এস.এম. সুলতান
চিত্রশিল্পী এস.এম সুলতান নড়াইল জেলার মাসুমদিয়া গ্রামে ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দের ৩ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে পিতার দেয়া নাম ছিল লাল মিয়া। বাল্যকাল ও কৈশোরে এই নামেই পরিচিত ছিলেন তিনি। এক নিম্নবিত্ত সাধারণ কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেও এস. এম. সুলতানের ছিল স্রষ্টা প্রদত্ত প্রতিভা। যে প্রতিভাবলে তিনি চিত্রশিল্পী হিসেবে সমগ্র বাংলায় পরিচিতি লাভ করেছিলেন। পিতা মেছের ধাউড়িয়া ছিলেন পেশায় রাজমিস্ত্রী। সুলতান শৈশবে স্থানীয় একটি প্রাইমারি বিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও শেষ পর্যন্ত সাংসারিক অবস্থার চাপে বিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে পিতার সঙ্গে রাজমিস্ত্রীর কাজে লেগে ‘যান। সারাদিন রাজমিস্ত্রির জোগানদার হয়ে কাজ করে যতটুকু অবসর পেতেন, সেই সময়ে তিনি নিজে মনের তাগিদে ছবি আঁকা শিখতেন। কালি বা রঙ হিসেবে নিতেন কাঠ কয়লা, কাঁচা হলুদ, পুঁই লতার ফলের রস ইত্যাদি। নিজ মনের তাগিদে ছবি আঁকতে আঁকতে প্রায় সময়ই বিভোর হয়ে থাকতেন সুলতান। ক্রমে ক্রমে পারদর্শী হয়ে ওঠেন তিনি ছবি আঁকায়। একদিন তাঁর আঁকা ছবি স্থানীয় জমিদার ধীরেন্দ্রনাথ রায়ের চোখে পড়ে যান। তিনি সুলতানের ছবি আঁকার অদম্য উৎসাহ দেখে নিজেই ছবি আঁকার জন্য রং, ইজেল প্রভৃতি কিনে দেন। তবে এটুকু করেই তিনি থেমে থাকেননি। সুলতানকে তিনি লেখাপড়া শেখার জন্য স্কুলে ভর্তি করে দিলেন। এই সময়ে একবার শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ছবি এঁকে বেশ সুনাম অর্জন করেছিলেন সুলতান। বড় হবার আকাঙ্ক্ষা ছিল তাঁর । মনে মনে আশা করতেন বড় শিল্পী হবার। এই দুর্দমনীয় আকাঙ্ক্ষার কারণে বিদ্যালয়ের পড়া শেষ না করেই তিনি পালিয়ে চলে যান কলকাতায় । সঙ্গে ধীরেন্দ্রনাথ রায়ের চিঠি। সেখানে গিয়ে তিনি শাহেদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে দেখা করেন। সোহরাওয়ার্দী সব শুনে তাঁর বাড়িতে সুলতানকে থাকার ব্যবস্থা করে দেন। ধীরেন্দ্রনাথের সাহায্যে এইভাবে সুলতান এক নবজীবনের সন্ধান লাভ করেছিলেন। এই সময়ে তাঁর ‘লাল মিয়া নাম বদলে শেখ মুহম্মদ সুলতান হয়। শাহেদ সোহরাওয়ার্দী সুলতানকে কলকাতা আর্ট স্কুলে ভর্তি করে দেন। কিন্তু আজন্ম খেয়ালী মনের শিল্পী সুলতান ধরাবাঁধা নিয়মকানুনের মধ্যে থেকে চিত্রাঙ্কন শিখতে রাজী হলেন না। বছর তিনেক পরে আর্ট স্কুল ছেড়ে কাউকে কিছু না বলে ভবঘুরে জীবন যাপন শুরু করেন। তখন দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময়।সুলতান শ্বেতাঙ্গ সৈন্যদের তাঁবুতে তাঁবুতে ঘুরে তাঁদের ছবি এঁকে দিতেন আর তা থেকে যা পেতেন তাই দিয়েই জীবিকা নির্বাহ করতেন। ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে সুলতান ভারত ছেড়ে চলে যান পশ্চিম পাকিস্তানের  লাহোরে। সেখানে তিনি খাকসার ক্যাম্পে মওলানা মাশরেকীর সঙ্গে পরিচিত হয়ে থাকেন কিছু দিন । এখান থেকে বিভিন্ন উপায়ে ইউরোপ আমেরিকায় গিয়ে বেশ কয়েকটি শহরে ঘুরে ঘুরে আধুনিক চিত্রকলার সঙ্গে পরিচিত হন। ছবি আঁকেন বেশ কিছু। ফলে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে প্রশংসাও পান । ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে পুনরায় জন্মভূমি নড়াইলে ফিরে আসেন এবং নিজ গ্রামেই স্থায়ী আবাস গড়ে তোলেন। এই আবাসেই তিনি পরবর্তী জীবন কাটিয়ে দেন। স্বনামধন্য চিত্রশিল্পী এস এম. সুলতান নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান ছিলেন। তিনি ছিলেন স্বতন্ত্র ধারার এক শিল্পী। তাঁর অনন্য সাধারণ চিত্রাবলীতে গ্রাম বাংলার কামার, কুমোর, জেলে, তাঁতি, চাষাভূষা আর অসহায় নিরন্ন জনগণের কঠিন জীবনযাপন, হয়ে উঠেছে।
তর প্রতিটি চিত্রের অনুসঙ্গ হিসেবে স্বাভাবিকভাবেই এসেছে প্রকৃতি, গাছপালা, খাল বিল, নদীনালা। জীবন সংগ্রামের প্রতীকরূপে এনেছেন ঢাল, সড়কি, বল্লম, দা, কাঁচি ইত্যাদি। সুলতানের চিত্রে অঙ্কিত সব মানুষই পেশীবহুল। বীরের ছাঁদে অঙ্কিত তার ছবির মানুষের মধ্য দিয়ে সুলতান সম্ভবত নিজের মনের কথাই প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন । বাংলাদেশের পটভূমিতে বিভিন্ন কারণেই এস. এম. সুলতানের চিত্রশিল্প এক নতুন মাত্রায় উদ্ভাসিত হয়ে থাকবে।




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ