মোহাম্মদ কিবরিয়া(জীবনী)

প্রথম পাতা » জীবনী » মোহাম্মদ কিবরিয়া(জীবনী)


 মোহাম্মদ কিবরিয়া

দেশের মাটি, ফুল, পাখি, গাছপালা প্রকৃতিকে যারা খুব ভালোবাসেন এবং ভালোবাসাকে যারা গভীর মমতায় পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে রঙের বৈচিত্র্যে, অসাধারণ টেক্সাচারে সুষমামণ্ডিত সমন্বয় আর অনিন্দ্য বিন্যাসের মাধ্যমে ছবিতে রূপ দিতে চান তাদের বলা হয় শিল্পী অর্থাৎ চিত্রশিল্পী। চিত্রশিল্পীদেরকে মূর্ত-বিমূর্তের কবি বলেও আখ্যা দিয়ে থাকেন কেউ কেউ। মোহাম্মদ কিবরিয়া হচ্ছেন সেই মূর্ত-বিমূর্তের কবি। প্রখ্যাত চিত্রশিল্পীর জন্ম ১৯২৯ খ্রি. ১ জানুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার সিউরে গ্রামে। তাঁর বাবার নাম মোহাম্মদ রফিক, মাতা সায়েরা বেগম। বীরভূম জেলা স্কুলের পাঠ শেষ করে ১৯৫৪ খ্রি. ভর্তি হন কলকাতার স্কুল অব আর্টস অ্যান্ড ক্রাফটসে। ১৯৫০ খ্রি. এখান থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৫১ খ্রি. ঢাকার নবাবপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে চারুকলার শিক্ষক হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু। ১৯৫৪ খ্রি. যোগ দেন সরকারি চারুকলা ইনস্টিটিউটে (যেটি বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ)। ১৯৫৯ খ্রি. বৃত্তি নিয়ে জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাপচিত্রের উপর উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেন। ১৯৮৭ খ্রি. চারুকলা অনুষদের অধ্যাপক হন এবং ১৯৮৭ খ্রি. অবসর গ্রহণ করেন এবং ২০০৮ খ্রি. তিনি এখানে ইমেরিটাস অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। তার শিল্পকর্মের দেশ-বিদেশে অনেকবার একক ও যৌথভাবে প্রদর্শনী হয়েছে। উল্লেখযোগ্য এককের মধ্যে রয়েছে। ১৯৬০ খ্রি. দিল্লিতে দক্ষিণ এশীয় সাংস্কৃতিক উৎসবে তাঁর ২০টি ছবির বিশেষ প্রদর্শনী, ঢাকায় ২০০০ খ্রি. বেঙ্গল ফাউন্ডেশনে। এছাড়া জাপানের মারুচিনি, যুগোশ্লোভিয়ার দ্য যোশেফ ব্রজ টিটো গ্যালারিতে তার একক প্রদর্শনী হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, লাহোর, করাচি, কলকাতা, জাপানসহ বিভিন্ন স্থানে হয়েছে যৌথ প্রদর্শনী। শিল্পী মোহাম্মদ কিবরিয়ার কাছে শিল্পকর্ম রচনা ছিল গভীর সাধনার বিষয়।বৈচিত্র্যে ভরা দ্যোতনায় উদ্ভাসিত ছিল তাঁর চিত্রকর্ম, তাতে ছিল গভীর আবেগের কোমলসঞ্চার। চারুকলায় তিনি এমন একটি স্বতন্ত্র ধারার সৃষ্টি করেছিলেন, যা কিবরিয়া ধারা’ হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছিল। গত পাঁচ দশকের চিত্রকলায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই ধারার প্রভাব ছিল সব থেকে গভীর ও ব্যাপক। বিশেষ করে জাপান থেকে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিয়ে ফিরে আসার পর তিনি নিজের কাজে ব্যাপক পরিবর্তন আনেন এবং নির্বস্তুক ছবির চর্চায় নিবেদিত হন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের শিল্পজগতে অত্যন্ত প্রতিভাবান শিল্পী। বিশ্বের বহু বিখ্যাত গ্যালারিতে তার চিত্রকলা বা কাজ সংগৃহীত আছে। সঙ্গীত এবং সাহিত্যেও ছিল তার অগাধ জ্ঞান। চিত্রকর্ম বা চারুকলায় তিনি ছিলেন অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত। তিনি তাঁর এই অসামান্য প্রতিভা বা কর্মকাণ্ডের স্বীকৃতিস্বরূপ বহু পুরস্কার ও পদকে ভূষিত হয়েছেন । ১৯৫৭ খ্রি. ঢাকায় আয়োজিত জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনীতে প্রথম পুরস্কার পেয়েছিলেন। ১৯৫৯ খ্রি. জাপানের টোকিওতে অনুষ্ঠিত প্রথম তরুণ শিল্পী প্রদর্শনীতে ‘স্টারলেম পুরস্কার পান। ১৯৬০ খ্রি. লাভ করেন সর্বজাপান প্রিন্ট প্রদর্শনীর পুরস্কার, ১৯৬৯ সালে পেয়েছেন প্রেসিডেন্ট পদক। ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে একুশে পদক, ১৯৯৯ খ্রি. স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার, ২০০২ খ্রি. জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দেয়া বিশেষ সম্মাননা পেয়েছেন। অসামান্য প্রতিভাবান এই মানুষটি আর আমাদের মাঝে নেই। স্ত্রী আনজুম কিবরিয়া, দুই পুত্র নাশরিদ কিবরিয়া ও জুনের কিবরিয়া এবং অসংখ্য গুণগ্রাহীকে শোক সাগরে ভাসিয়ে ১৯১১ খ্রি. ৭ জুন তিনি মৃত্যুবরণ করেন।




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ