হাসান হাফিজুর রহমান (জীবনী)

প্রথম পাতা » জীবনী » হাসান হাফিজুর রহমান (জীবনী)


হাসান হাফিজুর রহমান
হাসান হাফিজুর রহমানের জন্ম মাতুলালয়, জামালপুর শহরে ১৪ জুন ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে। তাঁর পৈতৃক নিবাস কুরকান্দি গ্রামে, জামালপুর। তিনি ছিলেন কবি ও সাংবাদিক। তাঁর পিতা আবদুর রহমান স্কুল শিক্ষক। তাঁর স্ত্রী সাঈদা হাসান ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট মফিজউদ্দিন ফকিরের কন্যা। তিনি ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে ম্যাট্রিক (১৯৪৬) ও ঢাকা কলেজ থেকে আই.এ (১৯৪৮) পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এ (১৯৫১) এবং বাংলায় এম. এ. (১৯৫৫) ডিগ্রি লাভ করেন । ফেব্রুয়ারি (১৯৫২) ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তিনি। তাঁর সম্পাদনায় ভাষা আন্দোলনের ওপর প্রথম সংকলন ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ (১৯৫৩) প্রকাশিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের নির্বাচিত সাহিত্য সম্পাদক (১৯৫৪-১৯৫৫)। ১৯৫২-তে বেগম পত্রিকায়, ১৯৫৩-১৯৫৪-তে সওগাত পত্রিকায় ও ১৯৫৫-১৯৫৭-তে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় সহকারী সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেন। মাসিক সাহিত্যপত্র ‘সমকাল’ (১৯৫৭)-এ সম্পাদক সিকান্দার আবু জাফরের সহযোগী হন। ১৯৫৭-তে জগন্নাথ কলেজের বাংলার প্রভাষক নিযুক্ত হন। ১৯৬৪-র গোড়ার দিকে চাকরিচ্যুত হন। অতঃপর কয়েক মাস দৈনিক পয়গামে সহকারী সম্পাদক হিসেবে কর্ম সম্পাদন করেন। ১৯৬৫-র ১ জানুয়ারি দৈনিক পাকিস্তানের সহকারী সম্পাদক পদে যোগদান করেন। প্রেস ট্রাস্ট পত্রিকায় (দৈনিক পাকিস্তান) সাংবাদিকতা করলে ও গণ চেতনা ও গণদাবির প্রতি ছিলেন শ্রদ্ধাশীল। বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও বাঙালি সংস্কৃতির প্রতি অনুরাগ প্রকাশ পায়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে (১৯৭১) শুরুর পরপরই কুমিল্লা জেলার এক গ্রামে গিয়ে আশ্রয় গ্রহণ এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে গ্রামবাসীদের মনোবল চাঙ্গা করার লক্ষ্যে কার্য সম্পাদন করেন। স্বাধীনতার পর দৈনিক পাকিস্তান ‘দৈনিক বাংলা’ নামে প্রকাশিত হলে এর সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতির পদ লাভ (১৯ ডিসেম্বর ১৯৭১) রাশিয়ায় মস্কোতে বাংলাদেশ দুতাবাসের প্রেস কাউন্সিলার (১৯৭৩-১৯৭৪) মস্কো থেকে দেশে প্রত্যাবর্তনের পর সংস্থাপন বিভাগের ও.এস.ডি. (১৯৭৪-১৯৭৫)। বাংলা একাডেমি কার্যনির্বাহী পরিষদের নির্বাচিত সদস্য (১৯৭৬-১৯৭৯)। ১৯৭৭-এ বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের ‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস প্রকল্প’-এর প্রধান নিযুক্ত হন। তাঁর সম্পাদনায় ১৬ খণ্ডে ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধঃ দলিলপত্র (১৯৮২- ১৯৮৩) প্রকাশিত হয়। তিনি কবি, সমালোচক ও গল্পকার হিসেবে খ্যাতি পাড় করেন। পূর্ব বাংলায় যে আধুনিক কাব্য আন্দোলনের উন্মেষ ঘটে তার অন্যতম স্থপতি। তাঁর সাহিত্যকর্মে জনজীবনের প্রত্যাশা, যন্ত্রণা, প্রতিবাদ এবং মানুষের সংগ্রামী জীবন চেতনার প্রকাশ ঘটেছে। সমাজ ও জীবনের অঙ্গীকারে তাঁর সাহিত্য প্রগতিশীল শিল্প পরিচর্যায় সমৃদ্ধ। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ কবিতা: বিমুখ প্রান্তর (১৯৬৩), আর্ত শব্দাবলী (১৯৬৮) অন্তিম শরের মতো (১৯৬৮), যখন উদ্যত সঙ্গীন (১৯৭২), বজ্রচেরা আঁধার আমার (১৯৭৬), শোকার্ত তরবারি (১৯৮৯), আমার ভেতরে বাঘ (১৯৮৩), ভবিতব্যের বাণিজ্য তরী (১৯৮৩), প্রবন্ধ: আধুনিক কবি ও কবিতা (১৯৬৫) মূল্যবোধের জন্য (১৯৭০), সাহিত্য প্রসঙ্গ (১৯৭৩), আলোকিত গঙ্গার (১৯৭৭), গল্প: আরো দু’টি মৃত্যু (১৯৭০)। পুরস্কার: লেখক সংঘ পুরস্কার (১৯৬৭), আদমজী পুরস্কার (১৯৬৭) বাংলা একডেমী পুরস্কার (১৯৭১), মুন্সী মোতাহার হোসেন স্মৃতি পুরস্কার (১৯৭৬), অলভ সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮১), নাসিরুদ্দীন স্বর্ণপদক (১৯৮২), একুশে পদক (১৯৮৪) (মরণোত্তর) (মরণোত্তর) ১৯৭৮ লাভ । হার্ট লিভার ও কিডনির চিকিৎসার জন্য মস্কো গমন  (১৭ জানুয়ারি)১৯৮৩। সেখানকার সেন্ট্রাল ক্লিনিক হাসপাতালে পরলোকগমন করেন ১ এপ্রিল ১৯৮৩ খ্রি.।




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ