সাবিনা ইয়াসমীন (আন্তর্জাতিক অঙ্গনের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী)
প্রথম পাতা » জীবনী » সাবিনা ইয়াসমীন (আন্তর্জাতিক অঙ্গনের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী)
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খ্যাত ও স্বীকৃত সুধাকণ্ঠী সংগীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমীন সাতক্ষীরা হয়ে থাকে গানের সাধনা অনেকেই করেন, কিন্তু গান সবাইকে ধরা দেয় না। সাবিনা ইয়াসমীনের ক্ষেত্রে বলা যায় শুধু ধরাই দেয়নি সুর স্বায়ী বসতি স্থাপন করেছে তাঁর কণ্ঠে। আমাদের সংগীত জগতে সাবিনা ইয়াসমীনের তুলনা সাবিনা ইয়াসমীন একাই। এমনকি এই উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ কণ্ঠশিল্পীদের তালিকায় সাবিনা ইয়াসমীনের নাম সংযোজিত হয়েছে অনায়াসে। একটা ঘটনার চিত্র দিয়ে সাবিনা ইয়াসমীনের কথা শুরু করা যাক। ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময়। তখন চলচ্চিত্রের গান এফ.ডি.সি’তেই রেকর্ড করা গান হলে ঐ একই মাইক্রোফোনের দুদিকে দু’জন শিল্পী দাঁড়িয়ে গান করতেন। এমনই এক দ্বৈত গানের রেকর্ডিং-এ একপাশে পুরুষ শিল্পী দাঁড়িয়ে। অন্যপাশে একটি ছোট্ট মেয়ে একটা টুলের উপর দাঁড়িয়ে। অথচ গানটির মেয়ে কণ্ঠ ও চলচ্চিত্র শিল্পীর ঠোঁটে যাবে সে কোন শিশু শিল্পী নয়-ছবির নায়িকা। নায়িকার ঠোঁটে কণ্ঠ দেয়া ঐ ছোট্ট বালিকাটি আর কেউ নন, সাবিনা ইয়াসমীন। স্কুলপড়ুয়া সেই বালিকা তখনই জানিয়ে দিয়েছিলেন- উপমহাদেশের এক স্বর্ণকণ্ঠী গায়িকার আবির্ভাবের কথা। স্কুল-কলেজ ছাড়িয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যতদিনে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছেন তিনি, ততদিনে বেতার, টেলিভিশন, চলচ্চিত্রে কণ্ঠশিল্পী হিসেবে সম্রাজ্ঞীর আসনে অধিষ্ঠিত হয়ে গেছেন। সাবিনা ইয়াসমীনের জন্ম ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে ঢাকায়। সঙ্গীতচর্চার শুরু শৈশব থেকেই। ওস্তাদ পি.সি গোমেজের কােছ তাঁর উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে হাতেখড়ি। প্রশিক্ষিত কণ্ঠ এবং স্রষ্টার দান তাঁকে সক্ষমতা দিয়েছে যে কোনো ধরনের গানে সহজ কর্তৃত্বের। শিশুশিল্পী হিসেবেই বেতারে তাঁর প্রথম আত্মপ্রকাশ। টেলিভিশনে গান করছেন ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে। আর শিশু শিল্পী হিসেবে ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে মাত্র আট বৎসর বয়সে ‘নতুন সুর’ ছায়াছবিতে গান গাওয়ার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে কণ্ঠ দান শুরু তাঁর। বাংলা-উর্দু-হিন্দি মিলিয়ে তিনিবাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারতের সহস্রাধিক ছায়াছবিতে কণ্ঠ দিয়েছেন, আজও গেয়ে চলেছেন অবিরাম। বাংলাদেশ কণ্ঠশিল্পীদের মধ্যে তিনিই সর্বাধিক নয় বার অর্জন করেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি (বাচসাস) পুরস্কার পেয়েছেন পাঁচ বার। জহির রায়হান চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন ১৯৭৪-৭৫ খ্রিস্টাব্দে। ১৯৯০- খ্রিস্টাব্দে শের-এ বাংলা পদক ও জিয়া স্মৃতি পদক লাভ করেন। ভারত থেকে তিনি অর্জন করেন ভারত চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার’ ৯১ ও উত্তমকুমার পদক’ ৯১। এই ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দেই ভারতের ই.এম.আই গ্রুপ তাকে ডবল প্লাটিনাম ডিস্ক দিয়ে সম্মানিত করে। এর আগেই ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে ভারতের পশ্চিম বাংলার বিশ্ব উন্নয়ন সংসদ সাবিনা ইয়াসমীনকে প্রদান করেছে সম্মানসূচক অনারারি ডক্টরেট ডিগ্রি। আর ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি বাংলাদেশের অন্যতম সর্বোচ্চ সম্মানিত পুরস্কার একুশে পদকে ভূষিত হয়েছেন। ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক দলের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন। তাঁর মধ্যে চিন, জাপান, হংকং, থাইল্যান্ড, সৌদি আরব, ভারত, পাকিস্তান, সুইডেন, নরওয়ে, গ্রিস, উল্লেখযোগ্য। “বাংলাদেশ লিগ অব আমেরিকা- বাংলাদেশ সমিতি” তাকে ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে ভূষিত করে বিশেষ সম্মানে। সম্ভবত কিংবদন্তী শিল্পী লতা মুঙ্গেশকর, আশা ভোঁসলে এবং নূরজাহান ছাড়া সাবিনা ইয়াসমীনের মত এত বেশি সংখ্যক গানে এই উপমহাদেশের আর কোন শিল্পীই কণ্ঠ দান করেননি। চলচ্চিত্রের গানে অতিশয় ব্যস্ত থাকা সত্ত্বেও সাবিনা ইয়াসমীন অনেক দেশের গান ও আধুনিক গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। “সব কটা জানালা খুলে দাও না”, ‘সেই রেল লাইনের ধারে”, “একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার”, “যদি মরণের পরে কেউ প্রশ্ন করে”, “ও মাঝি নাও ছাইড়া দে”, “ক্ষয়ে ক্ষয়ে গেলেও তবু”, সহ বহু দেশাত্মবোধক, “এই তো এই চলে গেল আরো কিছুটা সময়”, “দুঃখ আমার বাসর রাতের পালঙ্ক”, “তুমি এলে, বহুদিন পর আমি কাঁদলাম” সহ অনেক আধুনিক গান অমর হয়ে গেছে তাঁর কণ্ঠে। চলচ্চিত্রেতিনি এত বেশি এবং বিচিত্র ধরনের গান গেয়েছেন যে, তা থেকে পুরস্কার লাভই জানিয়ে দেয় সেই ব্যাপ্তির কথা। নিয়মিত কণ্ঠশিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্রে বিগত ৩০ বছরে তিনি নয় হাজারের অধিক গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। আজও তিনি অক্লান্ত ।