ড. মুহম্মদ কুদরাত-ই-খুদা (জীবনী)

প্রথম পাতা » জীবনী » ড. মুহম্মদ কুদরাত-ই-খুদা (জীবনী)


ড. মুহম্মদ কুদরাত-ই-খুদা

ড. মুহম্মদ কুদরাত-ই-খুদা
খ্যাতিমান বিজ্ঞানী ও আবিষ্কারক বুদ্ধিজীবী, বিজ্ঞানী এবং লেখক মুহম্মদ কুদরাত-ই-খুদা বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবী ব্যক্তিত্ব হিসেবে স্বীকৃত। ১৯০০ খ্রিস্টাব্দের ১ ডিসেম্বর তিনি পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা খোন্দকার আব্দুল মুকিত একজন পীর রূপে খ্যাতি লাভ করেছিলেন। ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা মাদ্রাসা থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করে ভর্তি হন কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে। এই কলেজ থেকে তিনি ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে রসায়নশাস্ত্রে এম.এস.সিতে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করে সবাইকে বিস্মিত করে দেন। কারণ পীর বংশের কুদরাত-ই-খুদার এই অসামান্য সফলতা সে সময়ে অবাক করার মতই ঘটনা ছিল। এর পরপরই তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর গবেষণার জন্য রায়চাঁদ
প্রেমচাঁদ বৃত্তি লাভ করেন। ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে কুদরাত-ই-খুদা লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ Stainless Configuration of multiplannet Ring’ বিষয়ে গবেষণা করে ডিএস সি অর্থাৎ ‘ ডক্টর অব সায়েন্স ‘ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি বিয়ে করেন আকরাম-উন-নেসাকে। দেশে ফিরে এসে তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজের রসায়ন বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে উন্নীত হন বিভাগীয় প্রধান পদে। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যক্ষ হন। এটা ছিল তাঁর জন্য তখন এক বিরল সম্মান। দেশ বিভাগের পর ঢাকায় এসে তিনি পূর্ব পাকিস্তান সরকারের জন শিক্ষা পরিচালক হন। পরে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞান বিষয়ক উপদেষ্টা হন। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৫৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ড. কুদরাত-ই-খুদা মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন তারপরে ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে অবসর গ্রহণ-পূর্ব পাকিস্তানের বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের পূর্বাঞ্চলীয় গবেষণাসমূহের পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এরপরে তিনি কেন্দ্রীয় বাংলা উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। বিজ্ঞানী ড. মুহম্মদ কুদরাত-ই-খুদা বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে মাতৃভাষার ব্যবহারকে উপযুক্ত মনে করতেন। কারণ তাতে বাংলাভাষায় রচিত হবে বিজ্ঞান বিষয়ক গ্রন্থাদি এবং বাংলা ভাষা-ভাষীরা সহজেই তা আয়ত্ব করতে পারবে। তিনি নানা বিষয়ে বেশ কয়েকটি গ্রন্থ রচনা করেন। তাঁর শতাধিক বিজ্ঞান বিষয়ক মৌলিক রচনা দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
বিজ্ঞানী হিসেবে তাঁর ও তার সহযোগী সহকর্মীদের ১৮ টি আবিষ্কারের পেটেন্ট রয়েছে। এর মধ্যে পাট সংক্রান্ত আবিষ্কার আছে ন’টি। আঁখের রস ও গুড় থেকে মল্ট ভিনিগার, পাট ও পাটকাঠি থেকে রেয়ন এবং কাগজ উৎপাদন তাঁর উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার হিসেবে পরিগণিত। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে তার অনবদ্য ভূমিকা বুদ্ধিজীবি মহলে
প্রশংসিত হয়েছে।
প্রখ্যাত এই বিজ্ঞানীর জীবদ্দশায় তাঁর আরেকটি উল্লেখযোগ্য বড় কাজ হল ৭২ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা পুনর্গঠনের জন্য যে কমিশন গঠিত হয়, তিনি তার সভাপতি রূপে অল্প সময়ের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট প্রদান করেন, যা সর্বমহলের মানুষের কাছে সমাদৃত হয়। ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি একুশে পদক লাভ করেন। তিনি সবসময় রাষ্ট্র ভাষা ও শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে বাংলাভাষাকে অগ্রাধিকার দিতেন এবং মতামত প্রকাশ করতেন। ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দের ৩ নভেম্বর বাংলাদেশের এই কৃতী বিজ্ঞানী, গবেষক ও আবিষ্কারক ঢাকায় লোকান্তরিত হন। ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে তাকে স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়।




আর্কাইভ