পল্লীকবি জসীমউদদীন (জীবনী)

প্রথম পাতা » জীবনী » পল্লীকবি জসীমউদদীন (জীবনী)


পল্লীকবি জসীমউদদীন

পল্লীকবি জসীমউদদীন। আবহমান বাংলা ও বাঙালির কবি পল্লীকবি জসীমউদদীন ১ জানুয়ারি ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ ফরিদপুরের তাম্বুলখানা গ্রামের মামা বাড়িতে। যদিও আদি নিবাস ছিল ফরিদপুরের গোবিন্দপুর গ্রামে। পিতা আনসার উদ্দীন ফরিদপুরের হিতৈষী পাঠশালার শিক্ষক ছিলেন।
জসীম উদ্দীন ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন ফরিদপুর জিলা স্কুল থেকে। তারপর ভর্তি হন রাজেন্দ্র কলেজে এবং এই কলেজ থেকেই আই এ ও বি.এ পাস করেন। ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এম.এ পাস করেন। স্কুল জীবন থেকেই কবিতা লেখা শুরু করেছিলেন জসীম উদ্দীন। ফরিদপুরের ঈশান বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের কাছে তিনি কবিতা লেখার ব্যাপারে যথেষ্ট অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন বলে জানা যায়। দেশব্যাপী তখন ইংরেজদের বিরুদ্ধে স্বদেশী আন্দোলনের সময় চলছে। ইংরেজি শিক্ষা বর্জনের জন্য বলেছেন নেতৃবৃন্দ। এ সময়ে হঠাৎ একদিন চলে গেলেন কলকাতায়। পরিচয় হল ভোলার বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব কবি মোজাম্মেল হকের সঙ্গে। তিনি তখন ওখানে বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য পত্রিকা নামের একটি পত্রিকা সম্পাদনা করতেন। তার কাছে জসীম উদ্দীন নিজের কিছু কবিতা দিলেন- এ সময়ই বিদ্রোহী কবি নজরুলের সঙ্গে পরিচয় হয়। এ ব্যাপারে মোজাম্মেল হক সাহেবের কিছু অবদান ছিল ।তখন নজরুল জসীম উদ্দীনের বেশ কিছু কবিতা দেখলেন এবং কয়েকটি কবিতা রেখে দিলেন কবির মৌলিকত্ব লক্ষ্য করে। পরে তা প্রকাশিত হয়। এর কিছু দিন পরে তিনি চলে যান ফরিদপুরে। পরে আবার ফিরে আসেন।কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ পাসের পর কলকাতাতেই তাঁর শুরু হয় আরেক জীবন। এ সময় তিনি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে দেখা করে পরিচিত হন এবং সে সময়ে প্রকাশিত হয় ‘রাখালী’ ও ‘নকশী কাঁথার মাঠ’। কাব্যগ্রন্থ দু’টি কবিগুরুকে উপহার হিসেবে দেন। কবিগুরু তাঁর কবিতায় পল্লীর মানুষ ও তাদের জীবন যাপন, হাসিকান্নার চমৎকার রূপায়ন দেখে মুগ্ধ হন।পরবর্তীকালে ড. দীনেশচন্দ্র সেনের অধীনে গবেষণা সহকারী হিসেবে কিছু দিন কাজ করেছিলেন জসীম উদ্দীন। এরপর ঢাকায় এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার কাজ নেন। প্রায় তিন বছর পরে বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে সরকারি প্রচার বিভাগে চলে আসেন। দীর্ঘদিন তিনি এই চাকরিতেই বহাল ছিলেন। এই চাকরির মাধ্যমে তিনি ব্যাপকভাবে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ গ্রামাঞ্চলে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ লাভ করেন, যার প্রতিচ্ছবি পরবর্তীকালে তার বেশ কয়েকটি কাব্যগ্রন্থে লক্ষ্য করা যায়। এক সময় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের সংকলিত একটি সংকলন গ্রন্থে জসীম উদ্দীনের ‘উড়ানীর চর’ কবিতাটি অন্তর্ভূক্ত হয়। এটি কবির জীবনে একটি অসামান্য ঘটনা। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ রচনার মধ্যে রয়েছে- নকশী কাঁথার মাঠ, সোজন বাদিয়ার ঘাট, বালুচর, ধানক্ষেত, চলে মুসাফির, ঠাকুরবাড়ির আঙ্গিনায়, হলদে পরীর দেশে, যে দেশে মানুষ বড় ইত্যাদি ।পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় তাঁর কবিতা অনুদিত হয়েছে। পল্লীকবি জসীম উদ্দীন ছিলেন অসাম্প্রদায়িক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের এক নিষ্ঠাবান কর্মী। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি লাভ করেন সম্মানসূচক ডি-লিট উপাধি। তার সারা জীবনের সাহিত্য সাধনার স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে পান ‘একুশে পদক’ । ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দের ১৩ মার্চ তিনি লোকান্তরিত হন।১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে তাকে স্বাধীনতা পুরস্কার (মরণোত্তর) প্রদান করা হয় ।




আর্কাইভ