তফাজ্জল হোসেন (মানিক মিয়া)

প্রথম পাতা » জীবনী » তফাজ্জল হোসেন (মানিক মিয়া)


তফাজ্জল হোসেন (মানিক মিয়া)

তফাজ্জল হোসেন (মানিক মিয়া)। সাংবাদিক ও রাজনীতিক ।সম্পাদক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট তফাজ্জল হোসেন ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মানিক মিয়া নামেই সমধিক পরিচিত ছিলেন। পিরোজপুরের সরকারি হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন ও পরে বরিশালের ব্রজমোহন মহাবিদ্যালয় থেকে ডিস্টিংশনসহ বি.এ পাস করেন।পাস করার পর নানা কাজে নিয়োজিত থাকেন। পরে এক সময় হোসেন সোহরাওয়ার্দীর পরামর্শে সরকারি চাকরি ছেড়ে দেন। সোহরাওয়ার্দী তাঁকে তখন কলকাতায় নিয়ে গিয়ে প্রাদেশিক মুসলিম লীগ অফিসের সেক্রেটারির পদে নিয়োগ করেন। বলা বাহুল্য, প্রথম থেকেই মানিক মিয়া ছিলেন সোহরাওয়ার্দীর ভাবশিষ্য এবং রাজনৈতিক মতানুসারী । ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে সোহরাওয়ার্দী মন্ত্রীত্বের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পরাজিত হলে মানিক মিয়া অফিস সেক্রেটারি পদ থেকে পদত্যাগ করেন। পরে সোহরাওয়ার্দীর দৈনিক ইত্তেহাদ’ পত্রিকার পরিচালনা বোর্ডের সেক্রেটারি হিসেবে যোগ দেন। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে ইত্তেহাদ বন্ধ হয়ে যায়। মানিক মিয়া তখন কলকাতায় কোন চাকরির চেষ্টা না করে সোজা ঢাকায় চলে আসেন।১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হলে দলীয় মুখপত্র হিসেবে ‘সাপ্তাহিক ইত্তেফাক’ প্রকাশিত হয়। ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দের ১৪ আগস্ট মানিক মিয়া এই পত্রিকার সম্পাদক নিযুক্ত হন। ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দের ২৪ ডিসেম্বর সাপ্তাহিক রূপান্তরিত হয়দৈনিক ইত্তেফাক-এ। ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দের ৭ অক্টোবর পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি হয়। এই সময়ে
রাজনৈতিক কারণে গ্রেফতার হন মানিক মিয়া। কারাগারে থাকেন একবছর। ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলনের সময় পুনরায় গ্রেফতার হন। এই সময়ে ছাত্রদের আন্দোলন চলছিল। তিনি তাদের আন্দোলনকে সমর্থন করেছিলেন।

১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে শেখ মুজিবের নেতৃত্বে ৬ দফা আন্দোলন শুরু হয়। ইত্তেফাক ৬ দফা আন্দোলন সমর্থন করলে সামরিক সরকার ইত্তেফাকের প্রকাশনা বন্ধ করার নির্দেশ দেয়। সেই সঙ্গে বাজেয়াপ্ত করা হয় নিউ নেশন প্রিন্টিং প্রেস। এর ফলে এই প্রতিষ্ঠানের অন্য দু’টি প্রকাশনা ‘ঢাকা টাইমস’ ও ‘সাপ্তাহিক পূর্বাণী’ বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে শারীরিক অসুস্থতার পরিপ্রেক্ষিতে মুক্তি দেয়া হয় মানিক মিয়াকে।এরপর ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দ গণ আন্দোলনের কাল। এই সময়ে ১০ ফেব্রুয়ারি ইত্তেফাক প্রকাশনা পুনরায় শুরু হয়। প্রত্যাহৃত হয় সরকারি বিধিনিষেধ। ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে মানিক মিয়া আন্তর্জাতিক প্রেস ইনস্টিটিউট, পাকিস্তান শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন। এক সময় পি.আই.এ’র ডাইরেকটর ছিলেন বছর দুয়েক। কিন্তু সব কিছুর উর্ধ্বে তিনি ছিলেন নির্ভীক সাংবাদিক। ‘মঞ্চে-নেপথ্যে’ ইত্তেফাকের উপসম্পাদকীয় কলামের জন্য তিনি এদেশের সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে কিংবদন্তী হয়ে আছেন। এ দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের পুরোধা ছিলেন তিনি। মানিক মিয়া ছিলেন অসাম্প্রদায়িক, নিপীড়নমুক্ত শোষণহীন সমাজ ব্যবস্থায় বিশ্বাসী দৃঢ়চেতা এক বাঙালি। ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে ভারতের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাকে উপলক্ষ করে এদেশের প্রতিক্রিয়াশীল সাম্প্রদায়িক শক্তি হিন্দু মুসলমানদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সূত্রপাত ঘটালে তিনি সে দাঙ্গা প্রতিরোধে সাহসী ভূমিকা পালন করেন।মানিক মিয়া ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক সহকর্মী এবং বন্ধুস্থানীয় পরামর্শদাতা।
১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে ইত্তেফাকের কাজে রাওয়ালপিন্ডি যান তিনি। সেখানে ২৬ মে হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এই অসুস্থতাকে তিনি আর কাটিয়ে উঠতে পারেননি । ৩১ মে রাতে তিনি রাওয়ালপিণ্ডিতেই মৃত্যুবরণ করেন। এইভাবেই
বিদেশের মাটিতে অস্তমিত হয় একজন আপোষহীন বাঙালি সাংবাদিকের জীবন সূর্য।১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে তাকে একুশে পদক (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়।




আর্কাইভ