আবুল কালাম শামসুদ্দীন (জীবনী)

প্রথম পাতা » জীবনী » আবুল কালাম শামসুদ্দীন (জীবনী)


আবুল কালাম শামসুদ্দীন

আবুল কালাম শামসুদ্দীন।সাংবাদিক, সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ। ত্রিশ ও চল্লিশের দশকে অবিভক্ত বঙ্গেমুসলমান সমাজের নবজাগরণে যাদের অবদান স্মরণীয় হয়ে আছে আবুল কালাম শামসুদ্দীন তাদের একজন। একাধারে তিনি সাংবাদিক, সাহিত্যিক এবং রাজনৈতিক নেতা। বলা যায়,বাঙালি মুসলমান সমাজের সাংবাদিকতার অন্যতম পথিকৃৎ তিনি। জন্ম ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা গ্রামে ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দের ৩ নভেম্বর। ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে এফ.এ., কলকাতা রিপন কলেজে বি.এ শ্রেণিতে ভর্তি হন, কিন্তু কংগ্রেসের আহ্বানে বি.এ পরীক্ষা বর্জন করে অসহযোগ আন্দোলনে যোগদান করেন। তবে ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার ‘দৈনিক মোহাম্মদী’ পত্রিকার সহযোগী সম্পাদক হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু। ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার সাপ্তাহিক ‘মুসলিম জগৎ’ পত্রিকার সম্পাদনা বিভাগে যোগদান করেন। ১৯২৫-১৯২৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ইংরেজি সাপ্তাহিক ‘দি মুসলমান’-এর সহকারী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং একই সঙ্গে সাংবাদিক, সাহিত্যিক মোহাম্মদ নাসিরুদ্দীন-প্রতিষ্ঠিত ও সম্পাদিত ‘সওগাত’-এর সম্পাদনা বিভাগে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে ‘দৈনিক সুলতান’-এর সম্পাদনা বিভাগে যোগদান করেন এবং সহকারী সম্পাদক পদে নিযুক্তি লাভ করেন। একই সঙ্গে মাসিক মোহাম্মদী’র সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে মওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ প্রতিষ্ঠিত ও সম্পাদিত ‘দৈনিক আজাদ’-র সম্পাদনা বিভাগে যোগদান করেন। ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে এই পত্রিকার সম্পাদক নিযুক্ত হন। দীর্ঘ ২২ বছর এ পত্রিকায় সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে প্রেস ট্রাস্ট অব পাকিস্তান পরিচালিত দৈনিক পাকিস্তান (দৈনিক বাংলা’) এর সম্পাদক নিযুক্ত হন।
১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে অবসর নেন।ত্রিশের দশকে মুসলিম লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন এবং পাকিস্তান আন্দোলনে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। বাঙালি মুসলমান সমাজকে ইসলামী ভাবধারায় অনুপ্রাণিত করার প্রয়াসে কলকাতায় ‘পূর্ব বাংলা রেনেসাঁ সোসাইটি’ প্রতিষ্ঠা করেন ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে এবং এটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে মুসলিম লীগের মনোনয়নে ময়মনসিংহ জেলা থেকে বঙ্গীয় আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ২১ ফেব্রুয়ারি (১৯৫২) ঢাকার রাজপথে বিক্ষোভ প্রদর্শনরত ছাত্র-জনতার উপর পুলিশের গুলিবর্ষণ ও ছাত্র-হত্যার প্রতিবাদে পূর্ববঙ্গ পরিষদের সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন। তিনিই প্রথম কেন্দ্রীয়শহীদ মিনার উদ্বোধন করেন।লেখক হিসেবেও তিনি যথেষ্ট প্রতিভাবান ছিলেন। সাহিত্য, সমাজ, সংস্কৃতি বিষয়ে বহু চিন্তামূলক সরস প্রবন্ধ রচনা করে লেখনি শক্তির প্রমাণ তিনি দিয়েছেন। অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন সাহিত্য সমালোচক হিসেবেও খ্যাত তিনি। বাংলা সাহিত্যে মুসলিম ধারার ওনজরুল কাব্যের বিচার-বিশ্লেষণ ও নব মূল্যায়নে কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন।বিদেশী সাহিত্যের বঙ্গানুবাদ করে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থাবলীর মধ্যে-কচিপাতা (শিশুসাহিত্য), অনাবাদী জমি (অনুবাদ), খরতরঙ্গ,ইলিয়ড (অনুবাদ) পলাশী থেকে পাকিস্তান (ইতিহাসগ্রন্থ), অতীত দিনের স্মৃতি(স্মৃতিচারণ), উল্লেখযোগ্য। অনুবাদ সাহিত্যের জন্য ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে বাংলা একাডেমি পদক, ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে সাংবাদিকতা ও সাহিত্যে অনন্য অবদানের জন্য একুশে পদক লাভ করেন। ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দের ৪ মার্চ তিনি মৃত্যুবরণ করেন।




আর্কাইভ