মোহাম্মদ নাসিরুদ্দীন (জীবনী)

প্রথম পাতা » জীবনী » মোহাম্মদ নাসিরুদ্দীন (জীবনী)


মোহাম্মদ নাসিরুদ্দীন

মোহাম্মদ নাসিরুদ্দীন।দেশবরেণ্য সাংবাদিক ও সাহিত্যিক।কিংবদন্তীপ্রায় নামের পুরুষ ছিলেন মোহাম্মদ নাসিরুদ্দিন। তাঁর সম্পাদনায় ‘সওগাত’ বিভিন্ন পর্যায়ে প্রকাশিত হয়েছে যুগের পর যুগ। এই পত্রিকায় লিখে পাঠক সমাজে পরিচিতি লাভ করেছেন সে যুগের অনেক বরেণ্য সাহিত্যিক।মোহাম্মদ নাসিরুদ্দীন ১২৯৫ বঙ্গাব্দের ৩ অগ্রহায়ণ চাঁদপুরের পাইকারদী গ্রামে এক সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করলেও পিতার মৃত্যুর পর আর লেখাপড়া বেশি দূর এগোয়নি। স্কুলের বিদ্যাশিক্ষা ওখানেই শেষ করে সংসারের চাপে চাকরির চেষ্টায় ঘোরাঘুরি শুরু করেন। এক সময় স্টিমার কোম্পানির নরসিংহপুর স্টেশনে সহকারী স্টেশন মাস্টারের পদে চাকরি পান। কিছুপরে স্টেশন মাস্টারের পদে উন্নীত হন। ১৩৩৭ বঙ্গাব্দে ওরিয়েন্টাল ইনস্যুরেন্স কোম্পানির চাঁদপুর শাখার এজেন্ট নিযুক্ত হন। এই চাকরিতে কপাল ফিরল মোহাম্মদ নাসিরুদ্দীনের। বেশ কিছু অর্থ উপার্জন হতেই অন্যদিকে মনোনিবেশ করলেন তিনি। প্রকাশ করলেন সাময়িক পত্র ‘সচিত্র মাসিক সওগাত’। সে সময়ে তিনি মুসলিম সমাজের গোঁড়ামী, কুসংস্কার, অশিক্ষা-কুশিক্ষা ইত্যাদি দেখে মর্মবেদনায় ভুগছিলেন। তার নিজ সম্পাদনায় এবং প্রকাশনায় ১৩২৫ বঙ্গাব্দে ‘সওগাত’ প্রকাশিত হয় ।বলা বাহুল্য, সওগাত পত্রিকায় লেখা কার্টুন ছবি ইত্যাদি প্রকাশ করে পশ্চাদপদ তৎকালীন মুসলমান সমাজকে যতটা সম্ভব প্রগতির পথে, আলোর পথে নিয়ে যাবার চেষ্টা করেন তিনি । ১৩৩৩ বঙ্গাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘সওগাত সাহিত্য মজলিশ’ এবং ‘সওগাত প্রেস’। সওগাত সাহিত্য মজলিশ প্রতিষ্ঠার অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। নজরুল তখন মোহাম্মদ নাসিরুদ্দীনের অন্যতম সুহৃদ ছিলেন। সেই সঙ্গে ছিলেন মজলিশের মধ্যমণি। অনেক নামকরা কবি সাহিত্যিক প্রায় নিয়মিতই তখন ঐ মজলিশে আসা-যাওয়া করতেন ।
১৩৫৪ বঙ্গাব্দে মহিলাদের জন্য প্রকাশ করেন সাহিত্যপত্র ‘সাপ্তাহিক বেগম’। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশ বিভাগ হলে ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে ‘সওগাত’ ও ‘বেগম’-এর প্রকাশনা স্থানাস্সা করা হয় ঢাকায়। তার ফলে অচিরেই মোহাম্মদ নাসিরুদ্দীন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে মুসলিম করি সাহিত্যিকদের মধ্যমণি হিসেবে আসন করে নেন। তিনি বাংলা একাডেমির ফেলো এবং জাতীয় যাদুঘর ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। স্বাধীনতার পরে ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলা একাডেমীর সম্মাননা লাভ করেন।১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে লাভ করেন ‘একুশে পদক’। ১৯৮৪ খ্রি. স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার, ঢাকা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন পুরস্কার। তাঁর শেষ জীবনে ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে কবি সাহিত্যিক ও সাংবাদিকদের অসামান্য কৃতিত্বের পুরস্কার স্বরূপ প্রবর্তন করেন নাসিরুদ্দীন স্বর্ণপদক’। এখানকার বাংলাদেশের প্রায় সব খ্যাতিমান কবি সাহিত্যিকই কোন না কোন সময়ে ‘সওগাত’ পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। অন্যদিকে মুসলিম মহিলা লেখকদের মধ্যে আজ যারা বিখ্যাত হয়েছেন তাঁদের প্রায়ই ‘বেগম’-এ লিখে লিখে খ্যাতি লাভ করেছেন। সেক্ষেত্রে ‘বেগম’-এর ভূমিকা ছিল এককথায় অসামান্য। এখন মহিলাদের জন্য সত্যিকার অর্থে কোনো পত্রিকাই প্রকাশিত হয় না। মোহাম্মদ নাসিরুদ্দীনের উল্লেখযোগ্য রচনাবলীর মধ্যে রয়েছে - শিরি ফরহাদ, আল্লার নবী মোহাম্মদ (দঃ)। বাংলা সাহিত্যে সওগাত যুগ, সওগাত যুগে নজরুল ইসলাম।বঙ্গীয় মুসলিম সমাজে অগ্রগণ্য মানুষ ছিলেন মোহাম্মদ নাসিরুদ্দীন।১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দের ২১ মে (১৪০১ বঙ্গাব্দের ৭ জ্যৈষ্ঠ) তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।




আর্কাইভ