কবি শামসুর রাহমান(জীবনী)

প্রথম পাতা » জীবনী » কবি শামসুর রাহমান(জীবনী)


কবি শামসুর রাহমান

বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি শামসুর রাহমান। ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের ২৪ অক্টোবর কবি ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন চার ভাই ছ’বোনের জ্যেষ্ঠ। শামসুর রাহমান ঢাকার পগোজ স্কুল থেকে ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। বি.এ পাস করেন ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে । এম.এ দ্বিতীয় পর্ব পাস করার পূর্বেই তিনি কাজে ব্যাপৃত হয়ে চলে আসেন, অথচ প্রথম পর্বে তিনি যথেষ্ট ভালো ফল করেছিলেন। ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে তিনি জোহরা বেগমকে বিয়ে করেন। কবির দু’পুত্র ও তিন কন্যার মধ্যে এক পুত্র দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন। দৈনিক ‘মর্নিং নিউজ’ পত্রিকা থেকেও কর্মজীবনের শুরু। ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে সরকারের প্রেস ট্রাস্ট থেকে প্রকাশিত দৈনিক পাকিস্তান’ পত্রিকায় সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীকালে বাংলাদেশ স্বাধীন হলে দৈনিক পাকিস্তান-এর নাম বদল করে রাখা হয়, ‘দৈনিক বাংলা’। ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে শামসুর রাহমান দৈনিক বাংলা’র প্রধান সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। পরে রাজনৈতিক কারণে পদত্যাগ করেন। বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এই আধুনিক কবি শামসুর রাহমান বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রচুর লিখেছেন কবিতা, ব্যক্তিগত নিবন্ধ এবং সাহিত্য বিষয়ক রচনা। কবির প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় নলিনী কিশোর গুহ সম্পাদিত ‘সোনার বাংলা’ পত্রিকায়। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তার অনেক কবিতা মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। শামসুর রাহমান বিভিন্ন সময়ে পুরস্কৃত হয়েছেন। যেমন আদমজী সাহিত্য পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, জীবনানন্দ দাশ পুরস্কার, মিতসুবিশি পুরস্কার ইত্যাদি। ভ্রমণ করেছেন পৃথিবীর অনেক দেশ। যেমন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সোভিয়েত ইউনিয়ন, তুরস্ক, জার্মানি প্রভৃতি। ইতিমধ্যেই কবির অর্ধশতাধিক কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। উলেখযোগ্য কাব্য গ্রন্থগুলির মধ্যে আছে, প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে, বিধ্বস্ত নীলিমা, দুঃসময়ের মুখোমুখি, উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ, ফিরিয়ে নাও ঘাতক কাঁটা, রৌদ্র করোটিতে, নিজ বাসভূমে, নিরালোকে দিব্যরথ, বন্দী শিবির থেকে, আমি অনাহারী, প্রতিদিন ঘরহীন ঘরে, একফোঁটা কেমন অনল, ইচ্ছে হয় একটু দাঁড়াই, শূন্যতায় তুমি শোকসভা, ঝর্ণা আমার আঙ্গুলে, বাংলাদেশ স্বপ্ন দ্যাখে, এক ধরনের অহংকার, স্বপ্নেরা ডুকরে ওঠে বারবার, দেশদ্রোহী হতে ইচ্ছে করে, রাজনৈতিক কবিতা সংকলন, প্রেমের কবিতা সংকলন ইত্যাদি। । এক সময় বেশ বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বশীল কবি শামসুর রাহমান আমাদের কিছু গান রচনা করেছিলেন। গীতিকার হিসেবেও তিনি বিখ্যাত ছিলেন। কবি খ্যাতির পাশাপাশি তিনি পেয়েছেন একজন অকুতোভয় সাংবাদিকের স্বীকৃতি। কবিকে ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে একুশে পদক এবং ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। দেশের যে কোন প্রগতিশীল, সাংস্কৃতিক ও সাহিত্য বিষয়ক আন্দোলনে তিনি অগ্রণী ছিলেন। ২০০৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি সাম্প্রদায়িকতাবাদী সন্ত্রাসীদের দ্বারা আক্রান্ত হন এবং পরে মৃত্যুবরণ করেন।




আর্কাইভ