রশিদ চৌধুরী(জীবনী)

প্রথম পাতা » জীবনী » রশিদ চৌধুরী(জীবনী)


রশিদ চৌধুরী

রশিদ চৌধুরী ,প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী  বাংলাদেশে ট্যাপিস্ট শিল্প মাধ্যমের সার্থক প্রবর্তক। বাংলার লোকসংস্কৃতি ও লোকগাঁথা থেকে নিজের চিত্রকর্মের আখ্যানবস্তু গ্রহণ করেছিলেন তিনি। ‘সোনাভানু ভয় বাংলার বিদ্রোহ ইত্যাদি চিত্রে লোকজ ঐতিহ্যের সার্থক প্রয়োগ ঘটিয়ে খ্যাতি অর্জন করেছেন। জমিদার পরিবারের সন্তান রশিদ চৌধুরীর জন্ম ফরিদপুর জেলার রতনদিয়া গ্রামে ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের ১ এপ্রিল। আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ ইউসুফ হোসেন চৌধুরী তাঁর পিতা। জমিদার পরিবারে জন্ম। পঞ্চাশের দশকের প্রথম ভাগে পদ্মার ভাঙ্গনে বসতবাড়ি বিলীন হলে গোটা পরিবার ঢাকায় সরে আসে। নদীর ভাঙ্গন, জমিদারি প্রথার বিলুপ্তি ও পিতা যক্ষ্মারোগে আক্রান্ত হলে তাঁদের পরিবারে অর্থনৈতিক বিপর্যয় নেমে আসে। তিনি ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা আর্ট স্কুলে ভর্তি (১৯৫০) হন। চারুকলায় প্রথম বিভাগে স্নাতক ডিগ্রি লাভ (১৯৫৪) করেন। অতঃপর আর্ট স্কুলের চিত্রাঙ্কন বিদ্যার শিক্ষক নিযুক্ত হন। স্পেন সরকারের বৃত্তি পেয়ে মাদ্রিদ গমন (১৯৫৬) করেন। সেখানকার চারুকলা বিদ্যালয়ে প্রতিকৃতি ও ভাস্কর্যের ওপর এক বছর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে দেশে প্রত্যাবর্তন করে ঢাকা চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ের (সাবেক ঢাকা আর্ট স্কুল) প্রাচ্যশিল্পের প্রভাষক পদে যোগদান (১৯৫৮) করেন। কিছুকাল পর ফরাসি সরকারের বৃত্তি পেয়ে প্যারিস গমন (১৯৫৮) করেন। সেখানকার চারুকলা একাডেমি অব জুলিয়াতে ভাস্কর্য, ফ্রেসকো ও ট্যাপেস্ট্রি বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন। ১৯৬৪তে প্যারিস থেকে ঢাকা প্রত্যাবর্তন করে পুনরায় আর্ট কলেজে অধ্যাপনায় যোগদান গ্রহণ করে সরকারি নিয়ম ভঙ্গ করার দায়ে ১৯৩৫ সরকারি আর্ট কলেজের চাকরি হারান। ঢাকা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য অনুষদের পার্টটাইম লেকচারার পদে যোগদান করেন। ১৯৬৯-এ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। ১৯৮১ পর্যন্ত এ পদে অধ্যাপনা করেন। উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের সভাপতি (১৯৭১-১৯৮১) ছিলেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ (১৯৭১) চলাকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষার জন্য চট্টগ্রাম থেকে ফ্রান্সে গিয়ে বাস করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ফ্রান্স থেকে চট্টগ্রাম প্রত্যাবর্তন (১৯৭২) করেন। তিনি চট্টগ্রাম চারুকলা মহাবিদ্যালয়ের (১৯৭৩) প্রতিষ্ঠাতা। শেষ জীবনে জিন্নাত চৌধুরীকে দ্বিতীয় স্ত্রীরূপ গ্রহণ করেন। ‘সোনাভানুতে’পুঁথি সাহিত্যের সোনাভানের প্রতীকে নারীর বীরত্ব ‘ভয়ে গ্রামের বট গাছের নীচে সংস্থাপিত কালীর শক্তি ও তার ভয়াল আকৃতি এবং ‘বাংলার বিদ্রোহ’- এ ষাঁড়, কাস্তে, লাঠি, হাত ও সাপের প্রতিচিত্রে ভয়ঙ্কর রূপে অঙ্কিত। রশিদ চৌধুরীর চিত্রকলা লোকজ সংস্কৃতির আদলে সমকালীন মানুষের বিক্ষুব্ধ মানসিকতার প্রতিভাস। ঢাকা, চট্টগ্রাম, প্যারিস (ফ্রান্স), রাওয়ালপিণ্ডি, লন্ডন প্রভৃতি স্থানে তাঁর একক দশটি চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত। চিত্রকলায় অবদান রাখায় ‘একুশে পদক’ লাভ ১৯৭৭ । মৃত্যু, ঢাকা ক্যান্সারে, ১২ ডিসেম্বর, ১৯৮৬।




আর্কাইভ