ড. হূমায়ুন আহমেদ

প্রথম পাতা » জীবনী » ড. হূমায়ুন আহমেদ


ড. হূমায়ুন আহমেদ
জনপ্রিয় কথাশিল্পী ও চলচ্চিত্রকার
ড. হূমায়ুন আহমেদ। তিনি ‘নন্দিত নরকে’ ও শঙ্খনীল কারাগার খ্যাত ঔপন্যাসিক। কথাশিল্পী হিসেবে ছিলেন জীবন্ত কিংবদন্তি। দেশের সবচেয়ে বেশি পাঠকপ্রিয় ঔপন্যাসিক। দেশের সবচেয়ে বেশি পাঠকপ্রিয় লেখক। দেশের নাটক ও উপন্যাসকে ব্যাপক শ্রেণির পাঠকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেবার কৃতিত্ব তার অনেকখানি। অন্যদিকে বাংলাদেশের প্রকাশনা ‘ইন্ডাস্ট্রি’ হিসেবে গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। দেশের নন্দিত নাট্যকার, কথাশিল্পী চলচ্চিত্র নির্মাতা হুমায়ুন আহমেদ- এর জন্ম ১৩ নভেম্বর ১৯৪৮, শনিবার রাত ১০টা ৩০ মিনিট। তার পৈত্রিক নিবাস নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুর গ্রামে। আমরা যাকে আজ হুমায়ুন আহমেদ জানি তাঁর এ নাম ছিল না ছেলেবেলায়। নাম নিয়ে রয়েছে মজার ব্যাপার-স্যাপার। হুমায়ুন আহমেদ ‘আমার ছেলেবেলা’ গ্রন্থে তাঁর নাম বদলের বিবরণ দিয়েছেন এভাবেই আমার ভালো নাম রাখা হলো শামসুর রহমান, বাবার নাম ফয়জুর রহমান। বাবার নামের সঙ্গে মিলিয়ে ছেলের নাম। ছয় বছর বয়স পর্যন্ত আমাকে শামসুর রহমান নাম নিয়েই চলাফেরা করতে হলো। সপ্তম বছরে বাবা হঠাৎ সেই নাম বদলে রাখলেন হুমায়ুন আহমেদ।’ বছর দুই হূমায়ুন আহমেদ নামে চলার পর তার নাম আবারও বদলের প্রচেষ্টা। মুখে কার্যকর হতে পারেনি। হুমায়ুনের আপত্তির দাদা : আজিমুদ্দিন আহমেদ। চাকরি করতেন পুলিশ বিভাগে। পদ মর্যাদায় ছিলেন দারোগা। তবে প্রথম জীবনে ছিলেন ময়মনসিংহের কুতুবপুরে মীর কাশেম নগরের এক স্কুলের শিক্ষক। চাকরি জীবনে কর্তব্যপরায়ণ ও নিষ্ঠাবান অফিসার। তিনি চিলেন অনুসন্ধিৎসু মনের মানুষ। ছাত্র জীবনে ছিলেন কৃতী ছাত্র। বিএ পাস করেন ডিসটিংশনে। খুব শখ ছিল ইংরেজি সাহিত্যে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএ পড়বেন। অর্থের অভাবে তা হয়ে ওঠেনি। অনেকটা বাধ্য হয়েই চাকরিটা করেছেন। তবে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত পুলিশের চাকরিটি তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে করেছেন সৎ ও আলোকিত মানুষ ফয়জুর রহমান আহমেদ ছিলেন একজন বইপ্রেমিক। উপার্জনের একটা বড় অংশ দিয়ে বই কিনতেন। তার একটা বিশাল লাইব্রেরি ছিল। স্বচ্ছ ধ্যানধারণাকে অধিকতর শানিত করার জন্যে তার প্রচেষ্টা ছিল প্রতিনিয়ত। সেক্ষেত্রে সফলতাও পেয়েছেন অনেকখানি। সময়টা ১৯৭১, তিনি চাকরিসূত্রে পিরোজপুরে কর্মরত। একদিন হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী ধরে নিয়ে যায় তাঁকে। পাকিস্তান বাহিনীর বিরুদ্ধাচারণ করাই তার অপরাধ। দেশপ্রেমিক ফয়জুর রহমান আহমেদকে সেখানকার বলেশ্বরী নদীর তীরে গুলি করে হত্যা করে পাক সেনারা। মা: আয়েশা। তাঁর পরিবারের প্রথম সন্তান। স্বচ্ছতার মধ্যেই বেড়ে উঠেছেন ছেলেবেলায়। তাঁর পৈতৃক নিবাস নেত্রকোণা জেলায় মোহনগঞ্জ থানায়। সংকীর্ণ অনুশাসনের জালে আটকা পড়ে তাঁর লেখাপড়া বেশি দূর এগোয়নি। ক্লাস টু পর্যন্ত পড়েছেন। ছাত্রী হিসেবে ভালো ছিলেন। বৃত্তিও পেয়েছিলেন। উল্লেখ্য, ক্লাস টু’ তে তখন সরকারি পর্যায়ে দু’টাকা হারে বৃত্তি দেওয়া হত। সেদিন তাঁর বৃত্তি পাওয়ার ঘটনাটি এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল। তিনি ছিলেন উদাস প্রকৃতির। ফলে সংসার পরিচালনায় ও সন্তানদের যোগ্য মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কঠিন চ্যালেঞ্জের মধ্যে এগোতে হয়েছে তাঁকে। তবুও হাল ছাড়েননি। তাঁর নিরলস প্রচেষ্টায় সন্তানেরা আজ দেশের নন্দিত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠেছেন। তিনি একজন বিদূষী মা। ভাইবোন : ৩ ভাই ২ বোন। মুহাম্মদ জাফর ইকবাল : স্বনামধন্য লেখক ও বিজ্ঞানী। দেশে সায়েন্স ফিকশন লেখালেখির পথিকৃৎ। একজন প্রজ্ঞাবান শিক্ষক। বর্তমানে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট-এর ইনফরমেশন টেকনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান। আহসান হাবীব : বিশিষ্ট কার্টুনিস্ট। রম্য লেখক। উন্মাদ পত্রিকার সম্পাদক- প্রকাশক। বোন : শেফু আহমেদ অধ্যাপনায় জড়িত স্ত্রী : গুলতেকিন আহমেদ, ২য়- শাওন আহমেদ সন্তান : ৩ মেয়ে ১ ছেলে। নোভা আহমেদ, শীলা আহমেদ, বিপাশা আহমেদ ও পুত্র নূহাশ। দ্বিতীয় পক্ষে দুই পুত্র। হুমায়ূন আহমেদ-এর শিক্ষাজীবন : ম্যাট্রিকুলেশন ১৯৬৫, বগুড়া জেলা স্কুল, বগুড়া। আইএসসি ১৯৬৭, ঢাকা কলেজ। বিএসসি (অনার্স) রসায়নবিদ্যা, ১৯৭০ এমএসসি ১৯৭২, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পিএইচ. ডি. নর্থ ডেকোটা বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৮২। থিসিস, ক্লে পলিমার ইন্টারাকশনস। কর্মজীবন : ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে শিক্ষকতা দিয়ে শুরু। অধ্যাপক, রসায়ন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। স্বেচ্ছায় অবসর। বর্তমানে নিরলস সাহিত্য সাধনায় আত্মনিবেদিত। প্রকাশিত গ্রন্থ : ইতোমধ্যে দুই শতাধিক গ্রন্থ প্রকাশিত। নন্দিত নরকে, শঙ্খনীল কারাগার, জনম জনম, কোথাও কেউ নেই, তুমি আমায় ডেকেছিলে ছুটির নিমন্ত্রণে, অনন্ত নক্ষত্র বীথি, আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই, এই আমি, কবি, অনন্ত অম্বরে, গৃহত্যাগী, জল জোছনা, ময়ূরাক্ষী, ১৯৭১, প্রথম প্রহর, ইস্টিশান, গৌরিপুর জংশন, হিমু, আমার আছে জল, আশাবরী, তিথির নীল তোয়ালে, হোটেল গ্রেভার ইন, যশোহা বৃক্ষের দেশে, মৃম্ময়ী, তেঁতুল বনে জোছনা, আমিই মিসির আলী, বৃষ্টি বিলাস, শুভ্র, রূপার পালংক, জোছনাত্রয়ী, নির্বাচিত কিশোর উপন্যাস, ভূত সমগ্র, কোয়ান্টাম রসায়ন, তোমাদের জন্য ভালবাসা, নীল মানুষ, কুটু মিয়া, কেজন মিসির আলী, চলে যায় বসন্তের দিন বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। নাটক : অয়োময়, এইসব দিনরাত্রি, কোথাও কেউ নেই, রবিবার, মহাপুরুষ ইত্যাদি। চলচ্চিত্র : বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পে হুমায়ূন আহমেদ উজ্জ্বল নক্ষত্র। চলচ্চিত্রের দুর্দিনে দর্শকদের হলমুখী করার ক্ষেত্রে তার রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। সুস্থ চলচ্চিত্র নির্মাণে হুমায়ূন আহমেদ দেশের অন্যতম পথিকৃত। তার উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র : আগুনের পরশমণি, শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারী ও চন্দ্রকথা। পুরস্কার : লেখক শিবির পুরস্কার ১৯৭৩; বাংলা একাডেমি পুরস্কার ১৯৮১; মাইকেল মধুসূদন মেডেল ১৯৮৭; হুমায়ূন কবীর স্মৃতি পুরস্কার ১৯৯০, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (শ্রেষ্ঠ সংলাপ) ১৯৯৪; একুশে পদক ১৯৯৪; জয়নুল আবেদিন স্বর্ণপদক, অতীশ দীপঙ্কর স্বর্ণপদক ইত্যাদি। ২০১২ খ্রিস্টাব্দের ১৯ জুলাই তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে আমেরিকার হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন ।




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ