এ্যাডভোকেট কাজী গোলাম মাহবুব

প্রথম পাতা » জীবনী » এ্যাডভোকেট কাজী গোলাম মাহবুব


এ্যাডভোকেট কাজী গোলাম মাহবুব
১৯২৭ খ্রিস্টাব্দের 27 মার্স বরিশালের গৌরনদী উপজেলার কাজী কসবা গ্রামে এ্যাডভোকেট কাজী গোলাম মাহবুবের জন্ম। আন্দোলনে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। মাতার নাম আছিয়া খাতুন। তিনি ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে টরকি বন্দর হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। তিনি ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে বি.এ. এবং ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে এল.এল.বি. ডিগ্রি লাভ করেন। ছাত্রাবস্থাতেই কাজী গোলাম মাহবুবরাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাশিমের নেতৃত্বে বিভিন্ন আন্দোলনে যোগ দেন। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ১১ মার্চের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করার কারণে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রশমনে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্র নেতৃত্বে গঠিত পূর্ববাংলা শান্তি কমিটির জয়েন্ট সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য পূর্বপাকিস্তানে যে ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্ম পরিষদ গঠিত হয় তিনি ছিলেন তাঁর আহ্বায়ক। এজন্য তাঁকে পুনরায় গ্রেপ্তার করা হয় এবং পটুয়াখালীর সাবজেলে আটক রাখা হয়। ভাষা-সংগ্রামে সক্রিয় অংশগ্রহণের কারণে অ্যাডভোকেট কাজী গোলাম মাহবুব পাকিস্তান প্রতিরক্ষা আইনে কয়েকবার গ্রেপ্তার হন। কাজী গোলাম মাহবুব এমন এক জীবন অতিবাহিত করেছেন যাকে এক শব্দে ‘বর্ণাঢ্য’ বললে ভুল হবে। কারণ তাঁর জীবনটা সংগ্রামের, যে সংগ্রাম তিনি আজীবন করছেন। সেই বিগত বিংশ শতাব্দীর ৪০-এর দশক থেকেই রাজনীতি ও সমাজকে দেখেছেন, ‘কুইট ইন্ডিয়া মুভমেন্ট’, ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের দুর্ভিক্ষ কেবল দেখাই নয়, সে সময় ছাত্রাবস্থাতেই একাধারে সংগ্রামী এবং দায়িত্বশীল নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করতে শুরু করেন। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দ থেকেই কাজী গোলাম মাহবুব বাঙালি মুসলমান। ছাত্রদের ঐক্যবদ্ধ করার দায়িত্ব স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। ১৯৪৬ এর দাঙ্গার সময় তাঁকে দেখা গেছে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে, হিন্দু- মুসলমান ঐক্যের প্রশ্নে তিনি ছিলেন আপোষহীন এবং গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের স্বাধীন বাংলা আন্দোলনে তাঁর ভূমিকা এবং অগ্রণী নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল। কাজী গোলাম মাহবুবের জীবনের দেশ বিভাগ পরবর্তী সময়টাকেও প্রাইম টাইম বলা যায়। এ সময় তাঁর দূরদর্শিতার পরিচয় মেলে। বস্তুত ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ থেকেই তিনি মাতৃভাষার দাবিতে ছাত্র-গণমানুষকে সংগঠিত করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। সে উদ্যোগের তিনি যে ছিলেন নিরবচ্ছিন্ন এবং একনিষ্ঠ তার প্রমাণ মিলে ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক হন তিনি। এই মহান দায়িত্ব তিনি কৌশল ও তারুণ্যের সমন্বয় ঘটিয়ে পালন করেন। কাজী গোলাম মাহবুবই এক সময় মহান ২১শে ফেব্রুয়ারিকে মহান মে দিবসের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন, তার সে তুলনা যে যথার্থ ছিল তা প্রমাণ করেছে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণার মধ্য দিয়ে। অনেকের কাছে আবেগের বিষয় মনে হলেও মহৎ অর্জনের জাতীয় দিবসটিকে সংগ্রামী এই মানুষটি ঠিকই চিনেছিলেন। রাজনীতির ক্ষেত্রে প্রথম থেকেই কাজী গোলাম মাহবুব সততা ও ন্যায় নিষ্ঠার প্রতি ছিলেন একনিষ্ঠ ও আপোষহীন। সে কারণেই তিনি বাংলাদেশের মূলধারার রাজনীতির অন্যতম প্রাণপুরুষ হয়েও কোন সুবিধাবাদকে প্রশ্রয় দেননি। তাঁর ভাষায় জাতির প্রতি গভীর মমত্ববোধের কারণেই’ তিনি আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি এ যাবৎ কালের প্রায় সব রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানেরই ঘনিষ্ঠজন ছিলেন কিন্তু তাদের কাছে তাঁর কোন চাওয়াপাওয়া ছিল না। সে জন্যই তিনি আদর্শ ব্যক্তিত্ববান মানুষ হিসাবেই এ সমাজে পরিগণিত ছিলেন। তাঁর উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে ভাষা আন্দোলন মিউজিয়াম। ভাষা আন্দোলনের উদ্দেশ্য আদর্শের বাস্তবায়ন, ইতিহাস ঐতিহ্য সংরক্ষণ এবং নিরন্তর গবেষণা ও বিকাশে যা প্রশংসনীয় কাজ করে যাচ্ছে।তিনি ২০০৬ খ্রিস্টাব্দের ১৯ মার্চ ঢাকায় ইন্তেকাল করেন। ভাষা-সংগ্রামের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ্যাডভোকেট কাজী গোলাম মাহবুবকে ‘একুশে পদক- ২০০২’ প্রদান করা হয়।




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ