ফরিদা হোসেন

প্রথম পাতা » জীবনী » ফরিদা হোসেন


ফরিদা হোসেন
বহুমাত্রিক ব্যক্তিত্ব

ফরিদা হোসেন বহুমুখী প্রতিভার একজন আলোকিত মানুষ। তিনি একাধারে গল্পকার, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, নাট্য পরিচালক, গীতিকার, সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক, আবৃত্তিকার এবং একজন সংবাদ পাঠক অর্থাৎ ফরিদা হোসেন শুধু একটি নাম নয়, বহুমুখী প্রতিভায় উদ্ভাসিত নিভৃতচারিণী এক বিরল ব্যক্তিত্ব। শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিভিন্ন শাখায় যাঁর অবাধ এবং সার্থক
পদচারণা ।
পিতার কর্মস্থল অবিভক্ত ভারতের কলকাতায়
১৯ জানুয়ারি জন্ম হলেও তিনি চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলার সাহেরখানী গ্রামের এক মুসলিম পরিবারের সন্তান। বাবা আলহাজ ফয়েজ আহমেদ ছিলেন তৎকালীন অবিভক্ত ভারতের একজন বিশিষ্ট আইনজ্ঞ এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শ্রমিকনেতা। পুরো পাক-ভারত উপমহাদেশে ফয়েজ আহমেদ ছিলেন একমাত্র বাঙালি মুসলমান। মা বেগম ফয়জুন্নেছা এক অসাধারণ ব্যক্তিত্বের মহিলা ছিলেন।
ফরিদা হোসেনের জীবন কেটেছে প্রধানত শহরে। বাংলাদেশের মাটির রস-রূপ গন্ধ মেশানো তাঁর জীবনটা শহরকেন্দ্রিক হলেও গ্রাম বরাবরই তাঁকে হাতছানি দিয়ে ডাকে। আবার বৈকালী রোদ ডুবন্ত সূর্য নির্মেঘ আকাশে চাঁদের একাকী অবস্থান, বর্ষার অক্লান্ত বর্ষণ, ভোরের শিউলিতলা, হিমেল বাতাস উদাস দুপুর ভীষণ রকম ভাবিয়ে তুলতো তার শিশু মনকে।
তিনি সবার অগোচরে আহরণ করতে লাগলেন চারিদিকের রূপ, রং, গন্ধ । ছড়া, গল্প আর গান লিখতে লাগলেন সঙ্গোপনে। কলেজ জীবনে এসে স্থানীয় পত্র-পত্রিকায় লিখতে লাগলেন ।
যখন তিনি ইডেন কলেজের ছাত্রী তখন শিশু দিবসে শিশুদের অনুষ্ঠান করেন। এই অনুষ্ঠানের নাট্যকার, পরিচালক সুরকার গীতিকার অঙ্গসজ্জা শিল্প নির্দেশক সবই তিনি ছিলেন। অনুষ্ঠানটি সফল হয়। এরপরই রেডিও টেলিভিশন থেকে এই তরুণ ব্যক্তিত্বকে স্বাগত জানাল। এরমধ্যেই তার প্রথম গল্প গ্রন্থ অজন্তা প্রকাশিত হলো। উন্মোচিত হলো আর এক নতুন দিগন্ত। লেখনি হলো ক্ষুরধার তরবারি। বিরল
ব্যক্তিত্বে আলোকিত ফরিদা হোসেনের মধুফরা কণ্ঠকে কাজে লাগালো বেতার ও টিভি। সংবাদ পাঠ, আবৃত্তি, ধারা বর্ণনা অনুষ্ঠান, পরিচালনা অনেক কিছু করতে লাগলেন তিনি ।
১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে বিশিষ্ট শিল্পপতি, সমাজসেবক ও সংসদ সদস্য মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেনের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের দাম্পত্য জীবনে তিন কন্যা সন্তান যথাক্রমে ফারাহ আঞ্জুম রুচি, ফারজানা আঞ্জুম রুখী ও ফারহানা আঞ্জুম সুমি । এরা প্রত্যেকেই সুশিক্ষিত এবং সুপ্রতিষ্ঠিত নিজ নিজ ক্ষেত্রে। সংসার জীবনেও ফরিদা হোসেন একজন সুখী মানুষ ।
তাঁর বহুমুখী প্রতিভার বিচ্ছুরণ করেছে সবাইকে। ফরিদা হোসেন নিঃসন্দেহে কাজ করেছেন সমাজের কল্যাণে। সমাজের দুঃস্থ এবং সাধারণ মানুষ, মুক্তিযুদ্ধের বীরাঙ্গণাদের নিয়ে সাধারণ সব গল্প রয়েছে তাঁর। তিনি বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসাবে ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গে এবং ২০০৩ খ্রিস্টাব্দে মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত পিইএন-এর আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মিলনে যোগদান করেন। ২০০৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি সাহিত্যে একুশে পদক লাভ করেন। ২০০৫ খ্রিস্টাব্দে বিটিভিতে শুরু হয় তার রচনা ও পরিচালনায় ধারাবাহিক শিশুতোষ নাটক রূপকথার দেশে ।
পরিশেষে বলা যায়, ফরিদা হোসেন একজন সার্থক নারী। যিনি ঘর সংসার সন্তান ও স্বামীর প্রতি মনোযোগী থেকে আলোকিত কর্মের দিকে ধাপে ধাপে এগিয়ে গিয়েছেন। জয় লাভ করেছেন ঘরে ও বাইরে।
তিনি পুরোপুরি একজন মানবিক মানুষ। মানুষের কল্যাণ সাধনই তার জীবনের একমাত্র ব্রত । সৌম্য শান্ত সদালাপী ফরিদা হোসেন সহজেই অন্যের অন্তর্লোক স্পর্শ করেন। প্রত্যেকের জন্যই আলাদা আলাদা মমতা পোষণ করেন। এটি তার চরিত্রের বিশেষ বৈশিষ্ট্য।




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ