ডা. যোবায়দা হান্নান

প্রথম পাতা » জীবনী » ডা. যোবায়দা হান্নান


ডা. যোবায়দা হান্নান
প্রখ্যাত চিকিৎসক ও সমাজসেবী

ডা. যোবায়দা হান্নান, তদানীন্তন পাকিস্তান সরকারের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য পরিবার সমাজকল্যাণ মন্ত্রী মাহফুজুল হক এবং শরফ জাহান খানমের কন্যা। স্বামীর নাম ডা. এম. ওয়ালীউল্লাহ। কুমিল্লা শহরের বাদুরতলায় বসবাস করছেন। যোবায়দা হান্নান ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে ১৪ নভেম্বর চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করলেও তার পেশাগত ও কর্মজীবন পুরোটাই কুমিল্লাকে ঘিরে। স্বামীর বাড়ি কুমিলার নাঙ্গলকোট উপজেলার আশারকোটা গ্রামে। ওই গ্রাম ও এলাকার মানুষকে স্বনির্ভর করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে তিনি বহুমুখী প্রচেষ্টায় সফলতা অর্জন করেন। অজ পাড়াগাঁয়ে নারী শিক্ষার প্রসার ঘটাতে তিনি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। ওই গ্রামে নিজের জমি দান করে তিনি স্বাস্থ্য উপকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। মফস্বল অঞ্চলের অগণিত ডায়াবেটিক রোগীদের কল্যাণে তিনি কুমিল্লায় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ডায়াবেটিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন এবং গরীব জনগণের দৃষ্টিশক্তি লাভের লক্ষ্যে বিনামূল্যে চিকিৎসার জন্যে কুমিল্লায় ৫০ শয্যাবিশিষ্ট চক্ষু হাসপাতাল ও চক্ষু চিকিৎসা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন
করেন।
দেশ ও সমাজের কল্যাণে ডা. যোবায়দা হান্নান বহুমুখী সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনে অর্ধশতাধিক সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠনের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত রয়েছেন। সমাজের কল্যাণে নিবেদিত প্রাণ ডা. যোবায়দা হান্নান কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করেছেন ডা. যোবায়দা হান্নান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে ডা. যোবায়দা হান্নান মহিলা কলেজ, ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে ডা. যোবায়দা হান্নান প্রাথমিক বিদ্যালয়। কুমিল্লা ডায়াবেটক হাসপাতালের উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ডা. যোবায়দা হান্নান ঝিনাইদহ ও ঢাকাস্থ বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি, কুমিল্লাস্থ সমন্বিত অন্ধ কল্যাণ প্রকল্প, বাংলাদেশ পরিবার পরিকল্পনা সমিতি কুমিল্লা, বিএসএ-কুমিল্লা শাখা ও বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির আজীবন সদস্যের দায়িত্ব পালন করেছেন। তাছাড়াও তিনি বাংলাদেশ গাইনী ও অবস্টেটিক সোসাইটি, সামাজিক পুনরুদ্ধার ও সংশোধন সমিতি, নারী দীপিতা-কুমিল্লা, নবাব ফয়জুন্নেছা মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সভাপতি এবং রুরাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট ও জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থা কুমিল্লার সহ-সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। বাংলাদেশ জাতীয় অন্ধ কল্যাণ সমিতি ও বাংলাদেশ গার্লস গাইড এসোসিয়েশন কুমিল্লা শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. যোবায়দা হান্নান মানসিক প্রতিবন্ধী শিক্ষা ও কল্যাণ সমিতির উপদেষ্টা এবং আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিক ফেডারেশন, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর কুমিল্লা, বেইস- ঢাকা ও জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্য। তিনি কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের বেসরকারি পরিদর্শক, চাইল্ড সাইট ফাউন্ডেশনের সভাপতি ও বাংলাদেশ জাতীয় অন্ধ কল্যাণ সমিতি, কুমিল্লার প্রশিক্ষণ অনুষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন ।
ডা. যোবায়দা হান্নান নারী শিক্ষা কল্যাণ ও উন্নয়ন, গ্রাম উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম, শিক্ষা কার্যক্রম, দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে অসামান্য অবদান রাখছেন। তিনি আমেরিকা, নেপাল, ভারত, মালয়েশিয়া, ইংল্যান্ড, জাপান, ফিনল্যান্ড, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, মেক্সিকো, দুবাই ও প্যারিসে বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত বিষয়ভিত্তিক সেমিনারে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন এবং প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন । তাছাড়া তিনি চিকিৎসা বিষয়ে কয়েকটি পুস্তক প্রকাশ করেছেন ।সামাজিক কর্মকাণ্ডে তথা সমাজসেবায় বিশেষ অবদান রাখার জন্যে ডা. যোবায়দা হান্নান ২০০৪ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় ভাবে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক একুশে পদক লাভ করেন। তিনি ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ত্রিরত্ন পুরস্কার, ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক সমাজ সেবা পুরস্কার লাভ করেন। তাছাড়াও ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দে আমেরিকায়, ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে নেপাল, ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে মালয়েশিয়ায় ও জাপানে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বাংলাদেশের পক্ষে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের জন্য আন্তর্জাতিক প্রশংসাপত্র লাভসহ শিক্ষা কার্যক্রম ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখার জন্য ২০০৫ খ্রিস্টাব্দে রোটারি ক্লাব অব মেট্রোপলিটন ঢাকা ফাউন্ডেশন কর্তৃক ‘সিড এ্যাওয়ার্ড ২০০৪- ২০০৫’ লাভ করেন। ২০১১ খ্রিস্টাব্দে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ