পার্থপ্রতিম মজুমদার

প্রথম পাতা » জীবনী » পার্থপ্রতিম মজুমদার


পার্থপ্রতিম মজুমদার
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মূকাভিনেতা

না, কোন চলচ্চিত্র কিংবা নাটকে অভিনেতা হিসেবে নয়, ফুটবল কিংবা ক্রিকেটের খেলোয়াড় হিসেবেও নয়। পার্থ প্রতিম যে বিষয়টিতে পারফর্ম করে বিশ্বের অগণিত মানুষের মন জয় করেছেন, পেয়েছেন তারকা খ্যাতি, সেটিও কোন প্রচলিত বা মানুষের কাছে অতি পরিচিত বিষয় নয়। তিনি বিশ্বের দরবারে দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন মূকাভিনয় দিয়ে। বাংলাদেশে পার্থ প্রতিম আর মূকাভিনয় এতটাই সমার্থক হয়ে গেছে যে, একজন বা একটির নাম নিলেই আমরা অন্যজন অন্যটিকে আমরা ঠিকই বুঝে নেই ৷
বাংলাদেশের মানুষের কাছে মূকাভিনয়ের মত অচেনা বিষয়টিকে শিল্পের পর্যায়ে উন্নীতকরণে মুখ্য ভূমিকা রেখেছেন পার্থপ্রতিম মজুমদার ।
পার্থপ্রতিম মজুমদারের জন্ম ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দের ১৮ জানুয়ারি পাবনা জেলার কালচাঁদ পাড়ায়। তবে তার দাদার বাড়ি ছিল রাজবাড়ি জেলার পাংশা উপজেলাধীন বাগদুলী গ্রামে। ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে তার দাদা মারা গেলে পার্থ প্রতিমের মা বাবাকে নিয়ে পাবনার কালাচাঁদ পাড়াতে চলে আসেন, এখানে বিখ্যাত ঠাকুরবাড়ির মেয়ে ছিলেন তিনি। পাবনাতেই গড়ে ওঠে পার্থ প্রতিমদের পৈতৃক বাড়ি। প্রতিম এর ডাক নাম রাখা হয়েছিল মহাভারতের শক্তিশালী চরিত্র ভীমের নামে। তার কেতাবি নাম রাখা হয়- প্রেমাংশু কুমার বিশ্বাস। পার্থ প্রতিম মজুমদারের বাবা হিমাংশু কুমার বিশ্বাস ছিলেন নামকরা ফটো সাংবাদিক এবং মনে প্রাণে একজন সংস্কৃতিমনা মানুষ, মা সুশ্রিকা বিশ্বাস ছিলেন গান পাগল । ভজন বেশ ভালো গাইতে পারতেন তিনি। বাড়ির পাশের মহিমচন্দ্র জুবিলি উচ্চ বিদ্যালয়ে পার্থ প্রতিমের শিক্ষা জীবন শুরু, শহরের জিসিআই স্কুল থেকে এস.এস.সি পাস করেন।
পার্থপ্রতিমের মূকাভিনয়ের হাতেখড়ি কোলকাতার নামকরা মুকাভিনয় শিল্পী গোগেশ দাশের কাছে। তবে দেশ স্বাধীন হবার পর পার্থ তার বাবার বন্ধু বিশিষ্ট সঙ্গীতজ্ঞ বারীণ মজুমদারের মাধ্যমে ঢাকায় চলে আসেন। এখানে সেগুনবাগিচা মিউজিক কলেজে ভর্তি হন। তার পুরনো নাম প্রেমাংশু কুমার বিশ্বাস ওরফে ভিম পাল্টে হয়ে যায় পার্থপ্রতিম মজুমদার। চেষ্টা ও সাধনার মধ্যে দিয়ে গান আর মূকাভিনয়ে নিজের দখল পোক্ত করতে থাকলেন পার্থ। সুফলও পেতে শুরু করলেন রাতারাতি। ডাক পেলেন টিভি থেকে। বাংলাদেশ টেলিভিশনের রংধনু অনুষ্ঠানে তার প্রথম পরিচিতি হলো মূকাভিনয়ের সঙ্গে, সালটা ১৯৭৫ । এরপর থেকে নিয়মিত টিভিতে ডাক পড়তে থাকে তার। ‘যদি কিছু মনে না করেন’ আপন প্রিয়’র মতো জনপ্রিয় অনুষ্ঠানগুলোতে তিনি ছিলেন নিয়মিত পারফর্মার। জীবন যাপনের নানামুখী বিড়ম্বনা, যেমন- লোডশেডিং, বাসযাত্রীর দুর্ভোগ ইত্যাদি কত সমস্যার চিত্রই না ফুটে উঠেছে তার মূকাভিনয়ে। ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে সরকারি বৃত্তি নিয়ে ফ্রান্সে যখন পাড়ি জমালেন পার্থ তখন তিনি দেশে তারকা হিসেবেই পরিচিত। ফ্রান্সে মাইম বা মুকাভিনয়ের সেরা পীঠস্থান মার্সোর পাঠশালায় ভর্তি হন তিনি। বিশ্বের নামকরা অধ্যাপকেরা আসতেন এই পাঠশালায়। মার্সোর পাঠশালাতেই মুকাভিনয়ের মূল শিক্ষা পেয়েছেন তিনি। এখানে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যাবধি কঠোর শ্রম, অনুশীলন, নিষ্ঠা, একাগ্রতা ও সাধনার মধ্য দিয়ে নিজেকে গড়ে তোলেন তিনি। এখন তিনি কিংবদতূিল্য মুকাভিনেতা।
পার্থপ্রতিম মজুমদারের পরিচয় শুধু মূকাভিনেতাই নয়। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্যের বেশ কয়েকটি ছবিতে অভিনয়ও করেছেন তিনি। তন্মধ্যে- জেনিস এ্যান্ড জন, ফার্মাসি দ্যা গার্ড, ওয়ান ডলার কারি, ভাই ভাই ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। ভাই ভাই ছবিটি বহু উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছে। নাইকি, আইবিএম, ম্যাকডোনাল্ডসের মতো বিশ্ববিখ্যাত প্রতিষ্ঠানের মডেলও হয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশের অন্যতম কৃতি সন্তান পার্থপ্রতিম মজুমদার মূকাভিনয়ে তার অসামান্য পারফরমেন্সের জন্য দেশ-বিদেশে পেয়েছেন অগণন সম্মাননা ও স্বীকৃতি। ফ্রান্সের সর্বোচ্চ সাংস্কৃতিক খেতাব ‘নাইট উপাধি’, ‘ মাস্টার অব মাইম’ উপাধি, মলিয়ের এ্যাওয়ার্ডস, একুশে পদক তন্মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। স্ত্রী জয়শ্রী (ঝুমু), ছেলে সুপ্রতিম, মেয়ে দোয়েলকে নিয়ে সংসারবাসে সুখী পার্থ প্রতিম ফ্রান্সে জীবন যাপন করলেও তার স্বপ্ন একটাই- বাংলাদেশে একটা ‘মাস্টার অব মাইমের’ একাডেমি গড়ে তুলবেন তিনি ।




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ