আলহাজ আবুল হাশেম

প্রথম পাতা » জীবনী » আলহাজ আবুল হাশেম


আলহাজ আবুল হাশেম
শিক্ষানুরাগী দানবীর
দেশের যে কয়টি সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদক রয়েছে তন্মধ্যে একুশে পদক অন্যতম । ২০১১ খ্রিস্টাব্দে আলহাজ আবুল হাশেম সেই একুশে পদকে ভূষিত হলেন তার অনন্য-অসাধারণ এক নেশার জন্য। নেশাটা হচ্ছে দানের নেশা ।
এ বিষয়ে আবুল হাশেম বলেন- কেন জানি না আমার কাছে টাকা কখনোই নিজের বলে মনে হয়নি। টাকা হাতে থাকলেই মনে হতো, কাউকে দান করি। আমার দানের ফলে হয়তো কেউ আরেকটু ভাল থাকবে। এ অভ্যাসটা ছিল আমার ছেলেবেলা থেকেই, এ অভ্যাসটাই এখন নেশায় পরিণত হয়ে গেছে দান না করলে ভাল লাগে না। দানের নেশায় মাতোয়ারা এই মানুষটাকে মানুষ তাই ভালবেসে নাম দিয়েছে দানবীর হাজি হশেম’ ।
আলহাজ আবুল হাশেমের জন্ম ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের ১১ এপ্রিল কুমিল্লায়। তবে তিনি বেড়ে উঠেছেন পুরান ঢাকাতে। ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে ঢাকার নবকুমার ইনস্টিটিউশন থেকে এন্ট্রান্স পাস করেন। পেশা জীবন শুরুস্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানায় শিক্ষক হিসেবে। এ পেশায় নিয়োজিত থাকলেন দুই বছর (১৯৪৬-৪৮)। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে যোগ দেন আদিল-খলিল এ্যান্ড কোম্পানিতে। সেখানে কাজ করলেন একটানা ৮ বছর। কাজটা ছিল রাতের শিফটের। দিনের বেলা অফুরন্ত অবসর। বাড়ির আঙ্গিনায় তাই গড়ে তুললেন ‘গ্লোব প্রিন্টিং প্রেস’। ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে কোম্পানির চাকরি ছেড়ে দিয়ে নিউ ঢাকা ব্রেড ফ্যাক্টরি ও হারিকেনের ফিতা-কাইতন তৈরির ফ্যাক্টরি গড়ে তুললেন এবং সেই সঙ্গে নিউমার্কেটে দিয়ে বসলেন ওষুধের দোকান ‘রুমী মেডিকেল সেন্টার’। আবুল হাশেমের ব্যবসা ভাগ্য ছিল ভাল। যে ব্যবসাতেই হাত দিতেন, সোনা ফলতো। ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করলেন জবা টেক্সটাইল মিলস, একই বছর প্রতিষ্ঠা করলেন করিম ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল কর্পোরেশন। বড় ব্যবসায়ী হিসেবে তিনি পরিচিতি লাভ করতে শুরু করলেন। সেই সঙ্গে প্রসারিত হতে থাকল তাঁর দানের হাত। যে যখন যে প্রয়োজনে এসেছে তিনি না করতে পারেননি, সহযোগিতা করেছেন এবং এখনো করে যাচ্ছেন। আবুল হাশেমের দানের/অনুদানের তালিকা বেশ দীর্ঘ। ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে কুমিল্লায় গড়ে তুললেন একটি মাদরাসা, ১৯৬৯খ্রিস্টাব্দে মুরাদনগরে একটি কলেজ স্থাপনের কাজে হাত লাগালেন। ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে কোম্পানিগঞ্জে গড়ে তোলেন বদিউল আলম কলেজ। এছাড়া এ পর্যন্ত ১৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দাঁড়িয়েছে হাশেমের দানে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য চাপিতলা আজিফা খাতুন হাই স্কুল, নুরুন্নাহার গার্লস হাই স্কুল, রামকৃষ্ণপুর কলেজ, রামকৃষ্ণপুর কামাল স্মৃতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। এছাড়া বিভিন্ন মসজিদ নির্মাণে তার ভূমিকা অশেষ। ১২টির মতো প্রতিষ্ঠানের গোড়াপত্তনে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন বিভিন্ন সময়ে । এখনো ১০টি পরিবারকে নিয়মিত অনুদান দিয়ে আসছেন তিনি। শুধু অনুদান দিয়েই বসে থাকেন না তিনি, খোঁজখবরও রাখেন নিয়মিত। অনুদানের টাকা তারা সঠিকভাবে কজে লাগাচ্ছে শুনলে তিনি নিজেকে যথেষ্ট সার্থক বলে মনে করেন। নব্বইয়ের দশক থেকে একটা কাজ তিনি নিয়মিত করে আসছেন- তা হলো পত্রিকা ঘেঁটে ঘেঁটে ভাগ্যাহতদের খুঁজে বের করে তাদের সহযোগিতায় এগিয়ে যাওয়া। সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন তিনি তাদের পাশে দাঁড়াতে। এভাবেই সারাজীবন দেশের আনাচেকানাচে অনেক এলাকায়ই ঘুরে ঘুরে ভাগ্যাহতের ডাকে সাড়া দিতে চান তিনি, এটা তার কাছে এখন নেশার মত। দানই তার কাছে আনন্দ। ২০১১ খ্রিস্টাব্দের একুশে পদক পেয়ে নিজেকে খুবই ধন্য মনে করার পাশাপাশি তিনি মনে করেন- সমাজের প্রতি তাঁর দায়িত্ব অনেক বেড়ে গেল এবং আমৃত্যু সেই দায়িত্ব তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে পালন
করে যেতে চান ।
শুধু হাজী হাশেমই নন। সমাজসেবা ও দানশীলতায় তার স্ত্রী ও সন্তানেরাও নিবেদিত প্রাণ। তার স্ত্রী নূরুন্নাহার ছিলেন সকল সেবামূলক কাজে অনুপ্রেরণার উৎস। তাদের স্বামী-স্ত্রীর প্রেম বাৎসল্য এমন কি সেবামূলক কাজে এমন অন্তরঙ্গতা বিরল ঘটনা। দেশে-বিদেশে যেখানেই তিনি গেছেন স্ত্রী থাকতেন ছায়ার মত। স্ত্রীর মৃত্যু তাকে কিছুটা নিঃসঙ্গ করলেও সন্তানরাসহ সকলেই তার সেবামূলক কাজে উৎসাহ দেন। হাজী হাশেম আশা করেন তার আদর্শ সন্তানদের মাধ্যমে আরও সম্প্রসারণ হবে।
তিনি ৯ এপ্রিল ২০২১ মৃত্যুবরণ করেন।




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ