মো. হারেস উদ্দিন (পলান) সরকার

প্রথম পাতা » জীবনী » মো. হারেস উদ্দিন (পলান) সরকার


মো. হারেস উদ্দিন (পলান) সরকার
বই পড়া সামাজিক আন্দোলনের প্রবর্তক

মো. হারেস উদ্দিন সরকার। দেশের মানুষের কাছে যিনি ‘পলান সরকার’ নামে পরিচিত। বইপাগল এই মানুষটির জন্ম নাটোর জেলায় ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের ৯ সেপ্টেম্বর তার পিতার নাম হায়াত উল্লাহ সরকার, মাতা ফুলমুন নেছা ৷
পলান সরকারের লেখাপড়ায় হাতেখড়ি নূরপুর মালঞ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। জীবনে কঠিন পথে নানা ঘাত-প্রতিঘাত অতিক্রম করে মানুষের মানসিক উৎকর্ষ সাধন ও চিত্তের বিকশের লক্ষ্যে জ্ঞানের আলো বিতরণের মত
মহত কর্মকে জীবনের ব্রত হিসেবে বেছে নিয়েছেন তিনি। বাউসা গ্রামের মানুষের মাঝে বই পড়ার আগ্রহ সৃষ্টির মধ্যে দিয়ে সমগ্র দেশবাসীর কাছে চিত্তজাগরণের বাতিওয়ালা হিসেবে সুপরিচিত হয়ে উঠেছেন তিনি । প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠেই প্রবীণ বয়সেও সাইকেলে চড়ে বেরিয়ে পড়েন গ্রামের মেঠোপথ ধরে। উদ্দেশ্য মানুষের হাতে হাতে বই পৌঁছে দেয়া। সব সময় তার কাঁধের ঝোলায় আর হাতে থাকে বই ।
তিনি নিজেও প্রচুর বই পড়েন। যেখানেই যে বই পেয়েছেন পড়ে শেষ করেছেন এক নিঃশ্বাসে। ব্রিটিশ আমলে থেকে তিনি ছিলেন স্থানীয় যাত্রাদলের সঙ্গে যুক্ত। এক সময় যাত্রাদলে অভিনয়ও করতেন। যাত্রাপালাও লিখেছেন তিনি। পালা রচনা ও অভিনয়ের পাশাপাশি স্মারকের দায়িত্ব পালন করেছেন। সেই থেকেই বই পড়ার প্রতি টান বেড়ে যায় ৷
১৯৯০ খ্রিস্টাব্দের কথা। বাউসা হারুন অর রশীদ শাহ দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষায় মেধা তালিকার প্রথম থেকে দশম স্থান অধিকারীদের তিনি বই উপহার দেন। কয়েক বছরের মধ্যে অন্য শিক্ষার্থীরাও তার কাছে বইয়ের জন্য আবদার জানায়। সে সময় তিনি ঠিক করেন তাদের বই দিবেন। তবে শর্ত হচ্ছে- বই পড়ে ফেরত দিতে হবে। এভাবেই স্কুলের প্রায় সবার কাছে ঘুরে ফিরে বই যেতে থাকে । ধীরে ধীরে তার বই পড়ানোর গল্প চারদিক ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্র-ছাত্রীদের মত গ্রামের শিক্ষিত বয়স্ক মানুষরাও তার কাছে বইয়ের জন্য অনুরোধ করেন। শুরু হলো তার অন্যরকম যুদ্ধ। তিনি তো চান-ই সবাই বই পড়ুক। আত্মীয়-স্বজন থেকে শুরু করে পরিচিত প্রতিবেশীর বিয়ে ও আয়োজিত পারিবারিক অনুষ্ঠানে অন্য উপহারের পাশাপাশি বইও দেন তিনি। পলান সরকার তার নিজের ঘর ভেঙ্গে সেই জমিতে একটি হাই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি বই পড়ার প্রতি মানুষকে আকর্ষণ করার জন্য স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী ও গ্রামের লোকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বই বিতরণ করতেন। সমাজসেবায় অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ মো. হারেস উদ্দিন (পলান) সরকারকে ‘একুশে পদক-২০১১’ প্রদান করা হয়। তিনি ২০১৯ সালের ১ মার্চ মৃত্যুবরণ করেন।




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ