মমতাজ বেগম

প্রথম পাতা » জীবনী » মমতাজ বেগম


মমতাজ বেগম
ভাষা সংগ্রামী
যাদের সংগ্রাম ও ত্যাগের বিনিময়ে মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত পেলাম মমতাজ বেগমের নাম তাদের মাঝে উল্লেখযোগ্য। আজন্ম সংগ্রামী এই নারী ভারতের ভূপাল রাজ্যে জন্মগ্রহণ করেন ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে। তার প্রকৃত নাম কল্যাণী রায় চৌধুরী, পরবর্তীতে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলে তার নাম রাখা হয় মমতাজ বেগম। পিতা রায়বাহাদুর মহিমচন্দ্র রায় চৌধুরী ছিলেন জেলা জজ, পরে তিনি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি নিযুক্ত হন। মাতা মাখনমতি দেবী ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ স্কুল শিক্ষিকা। মমতাজ বেগমের সংগ্রামী জীবনের সহযোদ্ধা ছিলেন স্বামী আব্দুল মান্নাফ ।
নানা প্রতিকূলতার মধ্যদিয়েই মমতাজ বেগমের সংগ্রামী জীবন। ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার বেথুন কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট এবং ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে একই কলেজ থেকেই বিএ পাস করেন। ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে বিএড, চাকরিরত অবস্থায় ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি এমএড ডিগ্রি লাভ করেন ।
১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে ভাষা আন্দোলনের সময় মমতাজ বেগম নারায়ণগঞ্জ মর্গান হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। একুশে ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে রহমতউল্লাহ মুসলিম ইনস্টিটিউট মাঠে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় । সে সমাবেশে সেদিন প্রধান অতিথি ছিলেন অবিভক্ত বাংলার মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশিম। বিশাল জনসভা, জনসভা শেষে বিরাট মিছিল। সেই মিছিলের মাঝে এই সাহসী শিক্ষিকা তার ছাত্রীদের নিয়ে অংশগ্রহণ করেন। নারায়ণগঞ্জের তৎকালীন এসডিপিও মমতাজ বেগমের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে। ২৯ ফেব্রুয়ারি সকালে মমতাজ বেগমকে রাস্তা থেকে গ্রেফতার করে কোর্টে নিয়ে যাওয়া হয়। কোর্টে তার জামিনের আবেদন নামঞ্জুর হয়। পুলিশ-জনতা তীব্র সংঘর্ষ, তবু মমতাজ ছাড়া পায় না, তাকে পুলিশ ট্রাকে করে ঢাকায় নিয়ে আসে। মর্গান স্কুলে কজন ছাত্রীও সেদিন প্রধান শিক্ষিকার সাথে বন্দী ছিলেন। মুসলিম সরকার অবশ্য মমতাজ বেগমকে কারাগার থেকে বন্ড সইয়ের শর্তে মুক্তি দিতে চেয়েছিল, কিন্তু মমতাজ বেগম ভাষা আন্দোলনে ছিলেন আপসহীন। প্রায় দেড়বছর কারাগারে থেকেছেন, চাকরি হারিয়েছেন। তার সেই ত্যাগের ফসল আমাদের মাতৃভাষা বাংলা ।
১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের পর আবার তিনি শিক্ষকতায় নিয়োজিত হয়ে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত শিক্ষকতা করেছেন। এক কন্যা সন্তান রেখে তিনি ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দের ৩০ মার্চ মৃত্যুবরণ করেন ।
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাতৃভাষার কল্যাণে মমতাজ বেগমের ত্যাগ অবিস্মরণীয়। ২০১২ খ্রিস্টাব্দে তাঁকে একুশে পদক (মরণোত্তর) সম্মাননায় ভূষিত করা হয় ।




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ