রফিক আজাদ

প্রথম পাতা » জীবনী » রফিক আজাদ


রফিক আজাদ

বিশিষ্ট কবি, সরকারি কর্মকর্তা
কবি, সৃজন শিল্পী
বাংলাদেশে প্রধান কবিদের মধ্যে তিনি একজন । কবিতাই তাঁর ধ্যান-জ্ঞান। তার কাব্যচর্চায় নিজস্ব পরিভাষা-পরিমণ্ডল রয়েছে। তাঁর কবিতা কাল উত্তীর্ণ আলাদা মাত্রায় । কেবল নন্দনতত্ত্ব নয়-কবিতা লেখেন মানুষের জন্য। নিরহংকার, আপোষকামিতার বিরুদ্ধে কাব্যে তুলে ধরেন অধিকারের কথা। তাঁর লেখা হৃদয় স্পর্শ করে। উদ্দীপ্ত করে সংগ্রাম
সত্যকে। ‘ভাত দে হারামজাদা তা-না হলে মানচিত্র খাবো’-লিখে আলোচিত, বিখ্যাত ।
কবি রফিক আজাদ অসম্ভব মিশুক-আড্ডা প্রিয়। নেতৃত্বের গুণ কাছে টানে। তিনি জীবনমুখী। একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা। অকপট, স্পষ্টবাদিতা তাঁর বৈশিষ্ট্য। রফিক আজাদ বরাবর স্বপ্নচারী ও আশাবাদী কবি ব্যক্তিত্ব। তাঁর জন্ম শিক্ষিত সম্ভ্রান্ড পরিবারে- ফাল্গুন ১৩৪৭ (১৯৪২ খ্রি. ১৪

ফেব্রুয়ারী) বঙ্গাব্দে। পৈতৃক নিবাস টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলাধীন গুণী গ্রামে ।
দাদা নাঈম উদ্দিন খান, তৎকালীন এন্ট্রান্স পাস। তিনি ছিলেন ভারতীয় কংগ্রেসের সক্রিয় সদস্য। বৃটিশ বিরোধী ‘Quit India’ আন্দোলনে ‘তরফ গৌরাঙ্গী’ এলাকায় নেতৃত্ব দেয়ায় জেল খেটেছেন। একজন খাঁটি সত্যাগ্রহী। পিতা সলিম উদ্দিন খান- সমাজে প্রতিষ্ঠিত সম্মানিত ব্যক্তিত্ব। ঠিকাদারি ব্যবসা করতেন। তিনি M. R (Modified Ration ) Shop-এর মালিক ছিলেন। ভালো আরবি জানতেন মা রাবেয়া খাতুন। রফিক আজাদ-এর স্ত্রী ড. দিলারা হাফিজ বি.এ অনার্স এবং এম.এ (বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে) ডিপ-ইন-এড (প্রথম শ্রেণি); (পিএইচডি)। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। পারিবারিক জীবনে দুই কন্যা ও চার পুত্র । কন্যা- খান আরিফা আজাদ, স্থপতি (বুয়েট), বিবাহিতা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় স্বামীর সঙ্গে বসবাসরত, স্বামী-প্রকৌশলী । পুত্ৰ-খান ইয়াসির আজাদ (রাহুল), প্রকৌশলী (বুয়েট), বহুজাতিক কোম্পানিতে চাকরিরত। কন্যা নভেরা আজাদ দীপিতা-বি.এ অনার্স (প্রথম শ্রেণিতে প্রথম), এম.এ (ম্যাস কম্যুনিকেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) ইংরেজি দৈনিক ‘ডেইলি স্টার’-এ কর্মরত ছিলেন (মৃত)। পুত্র- খান ইয়ামিন আজাদ (রাজীব) বুয়েটে তড়িৎ প্রকৌশলে ডিগ্রিপ্রাপ্ত। পুত্র-খান অভিন্ন আজাদ ‘A’ Level ‘ পাস করে উচ্চ শিক্ষার্থে বিদেশে অবস্থানরত। কনিষ্ঠপুত্র-খান অব্যয় আজাদ, অধ্যয়নরত।
কবি রফিক আজাদ প্রাথমিক শিক্ষাজীবন শুরু করেন সাধুটি মিডল ইংলিশ স্কুল থেকে। পরে ব্রাহ্মণশাসন এ.ইউ হাইস্কুল থেকে ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে ম্যাট্রিকুলেশন, নেত্রকোণা কলেজ থেকে ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অনার্স ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে এবং এম.এ ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে।
তিনি কলেজ শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এম.এ আলী কলেজ, কাগমারীতে ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত অধ্যাপনা করেছেন। বাংলা একাডেমিতে ১৯৭২-৮৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত চাকরি করেন। সর্বশেষে উপপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৪ থেকে ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দের জুলাই পর্যন্ত সাপ্তাহিক ‘রোববার’-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক। পরে ‘ঘরে বাইরে’ বলে ক্ষণজীবী পাক্ষিক পত্রিকা সম্পাদনা করেন। ১৯৯০-৯৩ পর্যন্ত বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশন-এর উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) জনসংযোগ বোর্ড এ্যান্ড কোম্পানিতে । বাংলা একাডেমিতে ‘তরুণ’ লেখক প্রকল্পের প্রশিক্ষক হিসেবে ৩ বছর কাজ করেন। অতঃপর, ১৯৯৭-২০০৩ খ্রিস্টাব্দ উপজাতি কালচারাল একাডেমির পরিচালক, বিরিশিরি, নেত্রকোণা। বর্তমানে জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্রের পরিচালক ।
মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকীর কমান্ডে ১১ নং সেক্টরে সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের মুখপত্র ‘রণাঙ্গন প্রকাশে বিশেষ অবদান রাখেন ৷
বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সেমিনার ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণ করেছেন। ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দে নতুন দিল্লিতে ‘আফ্রো-এশীয়’ রাইটার্স ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণ এবং সার্টিফিকেট অর্জন করেছেন। ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে জাপানের টোকিওতে বাংলা-জাপান সাহিত্য সম্মেলনে অংশগ্রহণ। ২০০০ খ্রিস্টাব্দে নিউইয়র্ক ফোবানা সম্মেলনে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেছেন।
তাঁর লেখালেখির একমাত্র বাহন কবিতা। কবির ভাষায় ‘কবিতা ছাড়া অন্য সব কিছু গুরুত্বহীন’। তাঁর লেখা প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে অসম্ভবের পায়ে (আগস্ট ১৯৭৯), সীমাবদ্ধ জলে, সীমিত সবুজে (১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৪), চুনিয়া আমার আর্কেডিয়া (১৯৭৭), সশস্ত্র সুন্দর (১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৮২), এক জীবনে (ফাল্গুন ১৯৮৯, ফেব্রুয়ারি ১৯৮৩), হাতুড়ির নিচে জীবন (১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৪), পরিকীর্ণ পানশালা আমার স্বদেশ, খুব বেশী দূরে নয় (ফেব্রুয়ারি ১৯৮৯), ক্ষমা করো বহমান হে উদার, অশেষ বাতাস (১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৯২), করো অশ্রুপাত (১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৪), পাগলা গারদ থেকে প্রেমিকার চিঠি (১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৫), কণ্ঠে তুলে আনতে চাই (জানুয়ারি ১৯৯৬), বিরিশিরি পর্ব (জানুয়ারি ১৯৯৯), হৃদয়ের কি বা দোষ, অপর অরণ্য (১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৭) উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া তাঁর অন্যান্য গ্রন্থগুলোর মধ্যে- নির্বাচিত কবিতা, অঙ্গীকারের কবিতা, প্রিয় শাড়িগুলি, গদ্যের গহন অরণ্যে হারিয়ে যাওয়া আমি এক দিকভ্রান্ত পথিক, বাছাই কবিতা, স্বনির্বাচিত প্রেমের কবিতা, ভালোবাসার কবিতা, প্রেম ও বিরহের কবিতা, শ্রেষ্ঠ কবিতা, প্রেমের কবিতা সমগ্র বেশ পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। দুই বাংলার কবিদের কবিতায় মা ‘জয় গোস্বামীর’ সঙ্গে যৌথ সম্পাদনা করেছেন। বহুবিধ সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও লেখক সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত তিনি। প্রাক্তন সভাপতি, জাতীয় কবিতা পরিষদ এবং প্রতিষ্ঠাতা সদস্য- বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরাম ।
অসাধারণ সাহিত্য কর্মের জন্য অনেক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তন্মধ্যে- আরাইল সাহিত্য পুরস্কার, যশোর সাহিত্য পুরস্কার, ব্যাংক পুরস্কার, কবিতালাপ পুরস্কার, হুমায়ুন স্মৃতি পুরস্কার (লেখক শিবির), আহসান হাবিব পুরস্কার, খালেকদাদ চৌধুরী পুরস্কার, কবিতা পরিষদ পুরস্কার, হাসান হাফিজুর রহমান সম্মাননা, বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮১) এবং ছায়ানীড় স্বর্ণপদক ২০০৬ উল্লেখযোগ্য।
ভাষা ও সাহিত্যে অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি একুশে পদক-২০১৩ লাভ করেছেন। তিনি ২০১৬ সালে ১২ মার্চ মৃত্যুবরণ করেন ।




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ