আবদুল আলিম (Abdul Alim)

প্রথম পাতা » জীবনী » আবদুল আলিম (Abdul Alim)


আবদুল আলিম

আবদুল আলিম
কালজয়ী কণ্ঠশিল্পী
আবদুল আলিমের জন্ম তালিবপুর গ্রামে মুর্শিদাবাদে ২৭-৭-১৯৩১ খ্রি.। তিনি ছিলেন সুবিখ্যাত লোকগীতির গায়ক। এক নিবিত্ত পরিবারে তাঁর জন্ম। তিনি তালিবপুর স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। বাল্যকাল থেকেই গান বাজনার প্রতি আগ্রহী ছিলেন। শিক্ষক রেখে গান শেখার সামর্থ্য ছিল না বলে অন্যের গাওয়া গান শুনে শুনে গানের চর্চা করেন। পালা পার্বণে গান পরিবেশন করে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। মুর্শিদাবাদের অধিবাসী কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র সৈয়দ বদরুদ্দোজা তাঁকে তালিবপুর থেকে কলকাতায় নিয়ে যান। সেখানে সৈয়দ গোলাম আলির কাছে গানের তালিম গ্রহণ করেন। দরাজ কন্ঠের অধিকারী শিল্পীর অচিরেই কলকাতায় সুনাম অর্জন করেন। কলকাতার আলীয়া মাদ্রাসার মুসলিম হলে অনুষ্ঠিত এক সভায় সঙ্গীত পরিবেশন করে শেরে বাংলা এ.কে. ফজলুল হকের আশীর্বাদ লাভ করেন। সুকণ্ঠের জন্য বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও বিখ্যাত লোকসঙ্গীত শিল্পী আব্বাস উদ্দীন আহমদের স্নেহে ধন্য হবার গৌরব অর্জন করেন। চৌদ্দ বছর বয়সে তাঁর গানের গ্রামোফোন রেকর্ড প্রকাশিত হয়। বিখ্যাত দোতারা বাদক কানাইলাল শীলের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার (১৪ আগস্ট ১৯৪৭) পর কলকাতা ত্যাগ করে ১৯৪৮ এ ঢাকায় আগমন ও ঢাকা বেতার কেন্দ্র থেকে নিয়মিত পল্লীগীতি পরিবেশন করেন। মরমি লোকসঙ্গীতের একনিষ্ঠ গায়ক হন। ‘দুয়ারে আইসাছে পাল্কী’ ‘নাইয়ারে নায়ের বাদাম তুইলা’ ‘বন্ধুর বাড়ি মধুপুর’, ‘এই যে দুনিয়া কিসেরও লাগিয়া’ ইত্যাদি মরমি লোকগীতি গেয়ে শ্রোতাদের মন জয় করেন। মেগাফোন, কলম্বিয়া, হিজ মাস্টারস ভয়েস, গ্রামোফোন ক ম্পানি অব পাকিস্তান ও বাংলাদেশ গ্রামোফোন কোম্পানি কর্তক তাঁর গানের অসংখ্য রেকর্ড প্রকাশ হয়। ঢাকার প্রথম চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’ সহ প্রায় পঞ্চাশটি চলচ্চিত্রের নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী তিনি। উল্লেখযোগ্য ছবি, এদেশ তোমার আমার, জোয়ার এলো, সুতরাং, পরশমণি, অরুণ বরুণ কিরণ মালা, বেদের মেয়ে, অবাঞ্ছিত, আলিঙ্গন, শীত বিকেল, নদী ও নারী, রূপবান, কাগজের নৌকা, ভাওয়াল, সন্ন্যাসি, আপন দুলাল, নবাব সিরাজদ্দৌলা, কাঞ্চন মালা, মধুমালা, সাত ভাই চম্পা, এতটুকু আশা, সুয়োরাণী দুয়োরাণী, পারুলর সংসার, গাজী কালু চম্পাবতী, পালাবদল, পদ্মা নদীরমাঝি, লালন ফকির, সুজন সখী, দস্যুরাণী, উৎসর্গ, গাঁয়ের বধূ, নিমাই সন্ন্যাসী, দয়াল মুর্শিদ, তীর ভাঙ্গা ঢেউ, সাগর ভাসা প্রভৃতি। রবীন্দ্র সঙ্গীত পাকিস্তানের আদর্শের পরিপন্থী এই বক্তব্য উপস্থাপন করে পাকিস্তান সরকার রেডিও ও টেলিভিশন থেকে রবীন্দ্র সঙ্গীত প্রচার বন্ধের সিদ্ধান্ত নিলে (২২ জুন ১৯৬৭) সরকারের সে সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষার পক্ষে বিবৃতি প্রদান (১৭ মে ১৯৭১) ঢাকার সঙ্গীত মহাবিদ্যালয়ের লোকগীতি বিভাগের অধ্যাপক হন। সঙ্গীতে বিশেষ অবদান রাখায় বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক একুশে পদক (মরণোত্তর) প্রদান (১৯৭৭)। আবদুল আলিমের মৃত্যু ঢাকায় ৫-৯-১৯৭৪ খ্রি.। ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে তাকে স্বাধীনতা পুরস্কার (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়।