আলতাফ মাহমুদ (জীবনী)

প্রথম পাতা » জীবনী » আলতাফ মাহমুদ (জীবনী)


আলতাফ মাহমুদ

আলতাফ মাহমুদ
মুক্তিযুদ্ধের শহীদ
কালজয়ী একুশে ফেব্রুয়ারি গানের সুরকার শহীদ সঙ্গীত শিল্পী আলতাফ মাহমুদ আমাদের দেশে এক সংগ্রামী শিল্পী ব্যক্তিত্ব হিসেবেই পরিচিত। জন্ম বরিশাল শহরের ফকিরবাড়ি রোডে ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি বরিশাল জিলা স্কুল
থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। পরে বরিশাল ব্রজমোহন কলেজ ও কলকাতা আর্ট স্কুলে লেখাপড়া করেন। সবচাইতে অবাক বিষয় হচ্ছে, আলতাফ মাহমুদ কখনোই কোন ওস্তাদের কাছে প্রথাগত সঙ্গীত শিক্ষার তালিম নেননি। অথচ সহজাত প্রতিভার মধ্য দিয়ে তিনি এদেশের এক বিস্ময়কর সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে গুণীজন তথা সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। চমৎকার কণ্ঠে তিনি গান গাইতে পারতেন বাল্যকাল থেকেই। তাঁর উদাত্ত কণ্ঠ এক সময় গণ সঙ্গীতের ক্ষেত্রে সবার মন জয় করে নিয়েছিল। বরিশালে থাকতে তিনি বেহালা বাদনও শিখেছিলেন ওস্তাদ সুরেন রায়ের কাছে। ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে তাঁর সেই উদাত্ত কণ্ঠের গান ‘ম্যায় ভূঁখা হু’ তাকে খ্যাতির চূড়ায় পৌঁছে দিয়েছিল। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে তিনি ঢাকা আসেন এবং যুবলীগের সাংস্কৃতিক ফ্রন্ট ‘পূর্ব পাকিস্তান শিল্পী সংসদ’-এ যোগদান করেন। ৫২ খ্রিস্টাব্দের ২১ ফেব্রুয়ারির ভাষা আন্দোলনে তিনি অংশগ্রহণ করেন এবং সে সময় ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা কলেজের ছাত্র আব্দুল গাফফার চৌধুরীর লেখা সেই ইতিহাসখ্যাত গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি…’ গানটিতে সুর সংযোজন করে অভূতপূর্ব খ্যাতি লাভ করেন। এ সময় তিনি গাজিউল হক, আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ ও মোশারেফ উদ্দীন আহমদের রচিত গানে সুরারোপ করে প্রভূত খ্যাতি অর্জন করেন। ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দের যুক্তফ্রন্টের বিভিন্ন নির্বাচনী সভায় তিনি গণ সঙ্গীতসহ অন্যান্য গান গেয়ে মানুষকে মোহিত করে রাখতেন। ৫৪’র মে মাসে ৯২-ক ধারায় রাজনৈতিক কারণে তার নামে হুলিয়া জারিকরা হলে তিনি আত্মগোপন করেন। ছ’মাস পরে হুলিয়া প্রত্যাহার করার পরে তিনি পুনরায় জনসম্মুখে আসেন। এরপরে তিনি করাচীতে চলে যান। সেখানে তিনি ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে করাচীর বেতার কেন্দ্র থেকে পূর্ব বাংলার লোকসঙ্গীতের ওপর অনুষ্ঠান ‘ইত্তেহাদে মুসাইকি’ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। করাচীতে তিনি ছিলেন ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে তাঁর প্রায় ৩৬টি গানের রেকর্ড প্রকাশিত হয়। ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে আলতাফ মাহমুদ পাকাপাকিভাবে বসবাস করার জন্য ঢাকায় চলে আসেন। পরে এখানে তিনি চলচ্চিত্রের সুবিখ্যাত সঙ্গীতপরিচালক রূপে স্বীকৃতি লাভ করেন। তাঁর সুরারোপিত সঙ্গীতসমৃদ্ধ ছায়াছবিগুলির মধ্যে রয়েছে বেহুলা, আগুন নিয়ে খেলা, সংসার, দুই ভাই, কার বউ, নয়নতারা, আদর্শ ছাপাখানা, আপন দুলাল, শপথ নিলাম, কুঁচবরণ কন্যা, সুয়োরাণী দুয়োরাণী, সপ্তডিঙ্গা, ক খ গ ঘ ঙ, প্রতিশোধ প্রভৃতি। ১৯৬৯-এর গণ আন্দোলন ও ১৯৭১-এর অসহযোগ আন্দোলনের সময় তিনি প্রায় প্রতিটি সভা, মিছিল ও অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করে জনগণকে সংগ্রামী চেতনার উদ্বুদ্ধ করে তোলেন। ৭১ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় তিনি ঢাকায় বসে গান লিখে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে পাঠাতেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ৩০ আগস্ট পাক হানাদার বাহিনী তাঁকে ধরে নিয়ে নির্মমভাবে হতा করে। ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে তাকে একুশে পদক (মরণোত্তর) ২০০৪ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতা পুরস্কার। (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়।