জন. এফ. কেনেডি (John F Kennedy)

প্রথম পাতা » জীবনী » জন. এফ. কেনেডি (John F Kennedy)


জন. এফ. কেনেডি

জন. এফ. কেনেডি

(১৯১৭-১৯৬৩)
আজ পৃথিবীর ইতিহাসে যে কয়টি পরিবার শিক্ষায়, দীক্ষায়, ত্যাগে, আভিজাত্যে, অর্থকৌলিন্যে ও রাজনৈতিক ক্ষমতায় বিশ্ববিশ্রুত, তাদের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ নন্দিত প্রেসিডেন্ট কেনেডির পরিবার অন্যতম। রুজভেল্ট, চার্চিল, দ্যাগল, নেহেরু, বন্দরনায়েক ইত্যাদি পরিবারের সাথে সমভাবে সমমর্যাদায় বিশ্বখ্যাত আরও একটি পরিবার নাম কেনেডি পরিবার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যত প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন তাদের মধ্যে তরুণতম, উচ্চশিক্ষিত, রুচিশীল ও প্রগতিশীল পরিবার কেনেডি পরিবার। জাতিতে ক্যাথলিক হলেও প্রটেস্টান্ট চার্চের প্রবল প্রতিপত্তি সত্ত্বেও কেনেডি পরিবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কেবল অর্থনীতি, বাণিজ্য, শিল্প প্রসারেই নয়, রাজনৈতিক ক্ষমতা ভোগের প্রতিযোগিতায় অসাধারণভাবে সফল এক পরিবার। বিদ্যাবত্ত, প্রগতিশীলতা ও আভিজাত্য এক অসাধারণ জনপ্রিয়তা দান করে এই পরিবারকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত এক শহরের শহরতলীতে বোস্টনের ব্রুকলিনে ফিটজিরাল্ড কেনেডির জন্ম। ১৯১৭ সালের ২৯শে মে জন কেনেডি জন্মগ্রহণ করেন। আয়ারল্যাণ্ডের অত্যন্ত রক্ষণশীল ক্যাথলিক পরিবারের মানুষ তার পিতামহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আসেন আলুর ব্যবসা সংক্রান্ত কাজকে পাথেয় করে। আর কেনেডি সাহেবের পিতা পারিবারিক বিত্তসম্পদকে অসাধারণ নিষ্ঠায় বৃদ্ধি করেন বেশ কয়েকগুণ। আলুর ব্যবসা ও চাষ আবাদ ছেড়ে তেলের খনির সন্ধানে সফল অভিযান চালিয়েও এই পরিবার আর্থিক দিক থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শীর্ষ স্থানীয়দের অন্যতম হয়ে ওঠেন। ফলে প্রেসিডেন্ট কেনেডির পড়াশুনা দু’পুরুষ ধরেই চলে হার্ভাড, কেমব্রিজ ইত্যাদি বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে। পিতা মার্কিন রাষ্ট্রদূতের মর্যাদায় ভূষিত হয়ে ইউরোপে দীর্ঘকাল অতিবাহিত করেন দেশের কাজে। তাঁর পিতার ইচ্ছা ছিল যে তার প্রথম পুত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি হবেন। কিন্তু প্রথম পুত্র যোশেফ দ্বিতীয় মহযুদ্ধে যোগদান করে অল্প বয়সে বিমান যুদ্ধে প্রাণত্যাগ করেন। দ্বিতীয় পুত্রও তখন মার্কিন। নৌবহরে নিয়োজিত হয়ে হনলুলুর কাছে জাপানী ৰােমার আক্রমণে বিধ্বস্ত হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে অবস্থান করছেন। মোকাবিলা করছেন জাপানী আক্রমণের। বেশ কয়েকদিন উপকূলের জল আর জলের মধ্যে থেকে কেনেডি আক্রান্ত হলেন ম্যালিরিয়ায়। এর পর ম্যালিরিয়ায় আক্রান্ত ক্লান্ত সৈনিক কেনেড়ি অনিচ্ছা সত্ত্বেও নৌবহর থেকে দেশে ফিরতে বাধ্য হলেন শারীরিক অসুস্থতার কারণে। মার্কিন জনজীবনে কেনেডি পরিবারের অবদান। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ চলাকালেই অনুভূত হয়। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের অবসানে ভাইয়ের রাজনৈতিক জীবনের উত্তারাধিকারের গুরুদায়িত্ব বর্তায় জন কেনেডির উপর। আসলে কেনেডির ইচ্ছা ছিল ভাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হবেন আর তিনি হবেন বিখ্যাত লেখক। বাল্যকাল থেকেই কেনেডি ভাবুক প্রকৃতির আদর্শবাদী মানুষ ছিলেন। তাই রাজনীতির পঁাচ পয়জার তার জন্য নয়। তিনি লেখক ও সাহিত্যিক হবেন এই আশায় নিজেকে গড়ে তোলেন। কিন্তু দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের ডামাডোলে অনেক পরিবারের ন্যায় কেনেডি পরিবারেও অনেক পরিবর্তন এল। জন কেনেডি অত্যন্ত আস্তে আস্তে কিছুটা পিতার অনুপ্রেরণায় কিছুটা সামাজিক সচেতনতার তাড়নায় জনজীবনের সাথে যুক্ত হলেন। জন ফিটজিরলাণ্ড কেনেডি নির্বাচিত হলেন সিনেটে। অল্প বয়সে সিনেটে প্রবেশ করেই নানা বিষয়ে অসাধারণ বাগীতায় সারা দেশকে চমকিত করলেন। কেনেডি সিনেটর হিসাবে অদ্বিতীয়, সমাজসেবী হিসাবে অসাধারণ জননায়ক হিসাবে অবিসংবাদিত, দূরদৃষ্টি, সম্পন্ন উদারচেতা বিদগগ্ধ কেনেডি বিবাহ করেন এক খ্যাতনামা পরিবারের সুন্দরী কন্যাকে। পরবর্তী দশকে জাকুলিন কেনেডি নামে এই বিদগ্ধা নারী বিশ্বখ্যাতি ও অখ্যাতি লাভ করেন, অত্যন্ত অল্প সময়ের ব্যবধানে সিনেটর থেকে প্রেসিডেন্ট পদ প্রার্থী হন। বিপুল ভোটে অত্যন্ত কম বয়সে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যায় এক অতি শক্তিশালী, শক্তিধর দেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলেন। কেনেডি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্টদের রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলোর প্রেক্ষাপটে এক অসাধারণ গ্রন্থ রচনা করেন। সিনেটর হিসাবে কিছুকাল হাসপাতালে বাস করে চিকিৎসার প্রয়োজনে হাসপাতালে থাকার সময় Profiles in Courage নামে গ্রন্থটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কেনেডিকে সফল লেখক হিসাবে যতখানি পরিচিত দেয় তার থেকেও বেশি পরিচিত দেয় রাষ্ট্র বিজ্ঞানের ব্যবহারিক প্রয়োগ বিষয়ে তাঁর জন্মগত বুৎপত্তির প্রকাশ প্রদর্শনে। তিনি এই গ্রন্থে বিগত কয়েকজন প্রেসিডেন্টের কিছু রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বিষয়ে খোলাখুলি আলোচনা সমালোচনা করেন। বিদ্বান, সংস্কৃতি সম্পন্ন, রুচিশীল পরিবার হিসাবে কেনেডি পরিবার দুই পুরুষ ধরেই পরিচিত। এছাড়া ক্যাথালিক হওয়ার সুবাদে তাদের পারিবারিক রক্ষণশীলতাও মূল্যবাধের রাজনীতি প্রচারে কেনেডিকে যথেষ্ট প্রেরণা দেয়। কেনেডি প্রগতিশীল চিন্তা ও চেতনায় পুষ্ট হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে যে সব বক্তৃতা দান করেন তা পরবর্তীকালে তার প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হওয়ার পথ সুগম করে তোলে। তাঁর মেধা, বুদ্ধি, বিচক্ষণতা, রাজনৈতিক ও সামাজিক চেতনা ও দূরদর্শীতা তাকে শীর্ষ স্থানীয় রাষ্ট্রীয় প্রধানদের কাছের মানুষ, শ্রদ্ধার মানুষ, স্নেহের মানুষ করে তোলে। কেনেডি ডেমক্রেটিক দলের প্রার্থী হিসাবে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন। সারা বিশ্বে কেনেডির এই নির্বাচন রাজনৈতিক ভাষ্যকারদের কাছে এক অসাধারণ মহিমান্বিত এক ঘটনা। কেনেডি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে শুধু পাশ্চাত্য জগৎ নয় প্রাচ্য ও সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর সহিত নানাভাবে সংশ্লিষ্ট করেন। কেনেডির আবির্ভাবে ইউরোপে যে অস্থিরতা, স্নায়ুযুদ্ধের মহড়া তা কিছুটা প্রশমিত হয়। প্রেসিডেন্ট কেনেডি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি হয়ে প্রথমেই ঘোষণা করলেন যে জেট প্লেনের যুগে পৃথিবীর নানা প্রান্ত দূরত্ব হারিয়ে ফেলেছে। বিশ্ব বড় ছোটো হয়ে গেছে। আমরা একই বিশ্বের নাগরিক। আফ্রিকা, এশিয়া, পূর্ব ইউরোপ, পশ্চিম ইউরোপ কোন দেশই বিশ্বের দরবারে একা নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই বিশ্বের অগণিত উন্নত, অনুন্নত হত দরিদ্র দেশের একজন সহমর্মী সহ অবস্থানকারী। বিচ্ছিন্নভাবে পৃথিবীতে কোন ধনী ও শক্তিশালী রাষ্ট্রের পক্ষেও একা থাকা সম্ভব নয়। মার্কিন দেশে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের অবস্থানে রুজভেল্টের মৃত্যুর পর যে “মুনরো ডকট্রিন” মুখীনবাদী জন জাগরণ তা তিনি কয়েকটি বক্তৃতায় সমালোচনা করে শেষ করে দেন। মুনরোনীতি আমেরিকাকে বিশ্ব রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন করে। তিনি ঘোষণা করেন আমরা বিশ্বের সকল দেশের সুখ ও দুঃখের অংশীদার। আমাদের দায়িত্ব আগামী পৃথিবীকে যুদ্ধের বিষ বাম্প থেকে মুক্ত করা। আর সমস্ত প্রকার বঞ্চনা, বৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে বিশ্বে এক শান্তির বাতাবরণ সৃষ্টি করা। ১৯৫৮ সালে অত্যন্ত কম বয়সে তিনি চতুর্থ বারের জন্য সিনেটর নির্বাচিত হন বিপুল ভোটে। আর এই জয় থেকেই সকলেই বুঝতে পারেন এই প্রখ্যাত সিনেটর অদূর ভবিষ্যতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পরিচালনায় অবতীর্ণ হবেন। ১৯৬০ সালে সিনেটর কেনেডি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হলেন বিপুল ভোটে ডেমক্রেটিক দলের প্রার্থী হিসাবে। ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসাবে সাথে নিলেন প্রাক্তন বিদ্যালয় শিক্ষক লিঙ্কন জনসনকে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কেনেডির বক্তৃতাবলী লিঙ্কনের বক্তৃতার সমমর্যাদা তারে বেতারে সমগ্র আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের দূরতম প্রান্তে ধ্বনিত হয়। তিনি সকলের জন্য সমঅধিকার ঘোষণা করেনঃ মার্কিন দেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক নীতিগুলো রিপাবলিকান দলের মাধ্যমে যে ভাবে অনুসৃত হয়েছে আগামী প্রজন্মের বিশ্ববাসীর কাছে, মার্কিনবাসীর কাছে তা কখনই গ্রহণীয় নয়। গণনীতি গণতান্ত্রিক ও রিপাবলিকান দলের প্রতিক্রিয়াশীল নীতির বদলে প্রগতিশীল নীতি তিনি অনুসরণ করেন। তিনি বললেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যায় এক উন্নত দেশের পররাষ্ট্রনীতি ও অভ্যন্তরীন নীতি আরও প্রগতিশীল জনমুখী ও গণমুখী হওয়া দরকার। প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হলেন বিপুল ভোটে, যা নিশ্চিতভাবেই প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু তিনি নির্বাচিত হওয়ার পরই ঘোষণা করলেন আমরা এক নতুন বিশ্বে অগণিত সমস্যা পীড়িত মানুষের সাথে বাস করছি। বিশ্বের সকল দেশের সমস্যার প্রতি উদাসীন থেকে কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমৃদ্ধি, সুস্থিতি ও শান্তি সম্ভব নয়। ক্ষুধা, দারিদ্র্য, বৈষম্য তাড়িত বিশ্ব আমাদের সকলের শান্তি বিঘ্নিত করবে। তাই আমরা সকলে মিলে সকলের উন্নয়নের জন্য, মঙ্গলের জন্য সচেষ্ট হব। দূর করব দারিদ্র্য, ক্ষুধা, অশিক্ষা, কুসংস্কার আর বৈষম্য। কেবল তার চিন্তা চেতনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্যই নয় তার চিন্তা ভাবনা বিশ্ববাসীর জন্যও। অগণিত বিশ্বমানবতার আর্তক্ৰন্দন দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের অবসানের পরের, পরের দশকেও তাঁকে পীড়িত করেছে, ভাবিত করেছে। “সকলের তরে সকলের আমরা প্রত্যেক আমরা পরের তরে” তাঁর জীবনবেদ। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে কেনেডি তাঁর মন্ত্রিসভায় প্রখ্যাত পণ্ডিত, খ্যাতনাম বিশেষজ্ঞদের নিয়োগ করেন। রাষ্ট্রদূত হিসাবেও প্রেরণ করেন প্রখ্যাত পণ্ডিত ব্যক্তিদের। বুদ্ধিজীবি, পণ্ডিত ও স্পেশালিস্টদের নিয়ে তার মন্ত্রী পরিষদ তৈরি হল। স্টিভেনশনের ন্যায় সুপণ্ডিত জাতিসংঘে মার্কিন প্রতিনিধি হিসাবে প্রেরিত হলেন। প্রখ্যাত পণ্ডিত ডিন রাস্ক মনোনীত হলেন বিদেশ মন্ত্রীর পদে। তার প্রখ্যাত আইনজ্ঞ ভ্রাতা রবার্ট কেনেডি ভ্রাতা রবাট কেনেডি মনোনীত হলেন অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্বপূর্ণ পদে। কেনেডে বয়সে তরুণ হলেও সিনেটার হিসাবে যথেষ্ট অভিজ্ঞতার ও সুনামের অধিকারী ছিলেন। কেনেডি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নবীন প্রজননের জাগ্রত প্রতীক। মাত্র পৌনে তিন বছরের প্রেসিডেন্ট থাকাকালেই তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূল সমস্যার প্রতি নিজেও দৃষ্টি দান করেন এবং মার্কিন জনগণের দৃষ্টি সেধারেই নিবিদ্ধ করেন।

তাঁর অভ্যন্তরীণ নীতির বলিষ্ঠতার পরিচয় পাওয়া যায় Civil Rights Bilf এর যথাযোগ্য রচনায়, প্রয়োগে ও প্রকাশে। নিগ্রোজাতীর কৃষ্ণাঙ্গ মানুষকে শ্বেতাঙ্গদের সাথে সমভাবে সমমর্যাদায় প্রতিষ্ঠা করে তিনি লিঙ্কনের ন্যায় অক্ষয় কৃর্তি স্থাপন করেন। মার্কিন সমাজে বর্ণবৈষ্যমের যে দুষ্ট ক্ষত যুগ যুগ ধরে মার্কিন জনজীবনকে দ্বিধা বিভক্ত করেছে তার মূলোচ্ছেদ ঘটান। আর আন্তর্জাতিক নীতির বলিষ্ঠতা প্রদর্শনে সোভিয়েট দেশের সাথে সহ অবস্থানে বিশ্বাস ঘোষণা করেন। তবে কিউবায় সোভিয়েট রণতরীর আগমনকে সম্মুখ সমরে আহ্বান জানিয়ে যে সাহস ও রাজনৈতিক দৃঢ়তার পরিচয় তিনি দেন তা নিঃসন্দেহে তাকে বিশ্ববাসীর কাছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অগণিত মানুষের কাছে নতুন মহাদেশের অগণিত মহাদেশবাসীর কাছে তাকে এক সুযোগ্য সাহসী রাষ্ট্রপতির মর্যাদা দান করে। বৈদেশিক নীতিতে কেনেডি ছিলেন। Friendship For Progress-এর পক্ষপাতি। পারমাণবিক বিস্ফোরণের বিষ বাম্প থেকে বিশ্বকে অনুন্নত দেশগুলোর উনয়নে হাত প্রসারিত করতে জাতিসংঘের নানা সংস্থাকে শক্তিশালী করে তুলতে তার উৎসাহ ও উদ্দীপনা ছিল অপরিসীম। সকলের জন্য সমান নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ও সফল আইন প্রনয়ণের রূপকার প্রেসিডেন্ট কেনেডি মাত্র আড়াই বা তিন বছরের রাজনৈতিক ক্ষমতায় যা করেছেন তা তছার দূরদৃষ্টির দ্যেতনা ঘোষণা করেছে। নিগ্রোদের সমানাধিকার প্রতিষ্ঠার ভিতরেই যে শক্তিশালী সুসংহত সমৃদ্ধ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উন্নতি নির্ভরশীল এই কথার সারবত্তা তিনি আজ থেকে অন্ততঃ তিন দশক পূর্বের মার্কিন জনগণকে সফল ভাবে বুঝিয়েছিলেন। কিন্তু সাফল্যের চূড়ায় আরোহণ করে যেমন আব্রাহাম লিঙ্কন আততায়ীর গুলিতে নিহত হন। সিভিল রাইটস্ বিল পাশ করেও কার্যকরী করতে গিয়েই দক্ষিণের এক স্কুলের দরজা কৃষ্ণাঙ্গ তাই বোনদের; কৃষ্ণাঙ্গ শিশুদের জন্য খুলতে গিয়ে আততায়ীর গুলিতে এই মহান নায়ক কেনেডির জীবন অবসান হয়। কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অগণিত মানুষই নয় সারা বিশ্বের সমস্ত মানুষ স্তব্ধ বিস্ময়ে তারে বেতারে শুনলেন মর্মাহত হলেন, শোকস্তব্ধ হলেন শুনে, যে লিঙ্কনের ন্যায় আর এক মহান প্রেসিডেন্ট কৃষ্ণাঙ্গ ভাইদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে ঘাতকের গুলিতে আত্মাহুতি দিয়েছেন। দ্বিতীয় লিঙ্কন হয়েই চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন প্রতি মমতায় আব্রাহাম লিঙ্কনের উত্তরসূরী হিসাবে তার সৎ সাহসী ভূমিকা বিশ্ববাসীর কাছে জন ফিটজিরাল্ড কেনেডিকে এক যুগবতার, যুগযন্ত্রণার মুক্তির প্রতীক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আজ বিশ্বের দরবারে যে গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বে আসীন তা কেনেড়ির দূরদৃষ্টির ফল। সাফল্যের উজ্জ্বল ধারার প্রমাণ ও সাক্ষ্য বহন করছে। কেনেডি তাঁর স্বল্পকালীন জীবনে অনুভব করেছিলেন যে বিশ্বনেতৃত্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সফল ভূমিকার পথে প্রধান বাধা নিজ দেশের বর্ণবৈষম্য। আর জীবনের বিনিময়ে তিনি। তা দূর করে গেছেন।

তথ্যসূত্রঃ বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ১০০ মনীষীর জীবনী – মাইকেল এইচ. হার্ট / সম্পাদনায় – রামশংকর দেবনাথ