চার্লস ডারউইন (Charles Darwin)

প্রথম পাতা » জীবনী » চার্লস ডারউইন (Charles Darwin)


চার্লস ডারউইন

চার্লস ডারউইন

(১৮০৯-১৮৮২)
জীবনের রহস্য এবং সৃষ্টির মূল নিয়মকে বিশ্লেষণ করে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন চার্লস ডারউইন। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন উদ্ভিদ ও প্রাণীর দৈহিক পরিবর্তন পরিবেশের সঙ্গে তাদের প্রতিক্রিয়ার ফল।

তিনিই প্রথম অসংখ্য উদাহরণের মাধ্যমে প্রাণীজগতের অভিব্যক্তি প্রক্রিয়া বর্ণনা করেন।

জীববিজ্ঞানের বিখ্যাত অভিব্যক্তিবাদ তিনিই প্রবর্তন করেছিলেন। সেই কারণে জীববিজ্ঞানে তিনি গুরু স্থানীয় বলে বিবেচিত হন।

মানবোৎপত্তির ব্যাখ্যাতা, প্রকৃতিবিদ, দার্শনিক চার্লস ডারউইনের জন্ম ১৮০৯ খ্রি:। তাঁর পিতামহ ইরাসমাস ডারউইন ছিলেন সুখ্যাত নিসর্গবিদ, কবি ও দার্শনিক এবং পিতা ও বড় ভাই দুজনেই ছিলেন চিকিৎসক।

বাল্যকাল থেকেই চার্লস ছিলেন ভাবুক প্রকৃতির ও প্রকৃতি প্রেমিক, রূপময় প্রকৃতির চিত্রময় অভিব্যক্তির মধ্যে তন্ময় হয়ে যেতেন। বিশেষ করে চারপাশের উদ্ভিদ ও জীবদের নিয়েই তিনি বেশি ভাবনা চিন্তা করতেন।

তরুণ বয়সেই তাঁর মনে এমন প্রশ্ন উদিত হয়েছিল প্রকৃতির কোলে লালিত জীবকুল কোথা থেকে এসেছে?

আবার এরা যায়ই বা কোথায়? মৃত্যুর পর কি এদের কোনরূপ অস্তিত্বই পৃথিবীতে থাকে না?

স্পষ্টতঃই পিতামহর প্রবল প্রভাব পড়েছিল বালক চার্লস-এর ওপর। সেই বয়সেই তিনি বিশ্বজগৎ ঘুরে দেখার কথা ভাবতেন।

প্রকৃতির রূপ বৈচিত্র্য ও রহস্য নিয়ে ডুবে থোকলেও লেখাপড়ায় বরাবরই ভাল ছিলন তিনি।

প্রথমে তাকে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হয়েছিল ডাঃ বাটলারের বিদ্যালয়ে। এখানকার পড়া শেষ হলে ডাক্তারি পড়ার জন্য তাঁকে এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করান হয়।

কিন্তু ডাক্তারি পড়া চার্লস-এর ভাল লাগল না। একথা পিতাকে জানালে তিনি ছেলেকে ধর্মযাজক করবেন বলে ঠিক করলেন। সেই উদ্দেশ্যে তাঁকে পাঠিয়ে দেওয়া হল কেমব্রিজে।

আঠারো বছর বয়সে চার্লস ক্রাইস্ট কলেজে ভর্তি হন। এখানে পড়ার সময় হামবোল্ড-এর লেখা Personal Narrative বইটি পড়ে তিনি নিসর্গবিদ্যার প্রতি গভীরভাবে আকৃষ্ট হন।

উদ্ভিদবিদ্যার বিখ্যাত অধ্যাপক ছিলেন ডঃ হনসলো। এখানে চার্লস তার গভীর সংস্পর্শে আসেন এবং তার জীবনে দিক পরিবর্তনের সূচনা হয়।

ক্রাইস্ট কলেজ থেকে স্নাতক উপাধি লাভের পর চার্লস কিছুদিন ভূ-বিদ্যাপাঠ করেন এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ পর্যটনের জন্য অত্যন্ত আগ্রহী হয়ে ওঠেন।

এই সময়ে আকস্মিকভাবেই একটা সুযোগও এসে গেল। এই সময়ে H.M. Beagle নামে একটি ভ্রাম্যমাণ জাহাজের জন্য একজন নিসর্গবিদের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানের গাছপালা ও জীবজন্তু দর্শনের জন্য চার্লস খুবই আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন। তিনি অধ্যাপক হনসলো-এর চিঠি নিয়ে জাহাজের ক্যাপ্টেন ফিররে-এর সঙ্গে দেখা করলেন।

জাহাজের উক্ত গবেষক পদটি ছিল অবৈতনিক। চার্লস কোন আপত্তি করলেন না এবং কর্মনিযুক্ত হলেন।

বির্গল জাহাজ ১৮৩১ খ্রি: ২৭ ডিসেম্বর ইংলন্ড থেকে আমেরিকার দিকে যাত্রা করে।

দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে জাহাজটি দক্ষিণ আমেরিকার উপকূল অঞ্চল, আগ্নেয়গিরি সঞ্চিত গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জ, তাইহিতি, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, তাসমানিয়া, মালদিভ দ্বীপপুঞ্জ, সেন্ট হেলেনা প্রভৃতি স্থান পরিভ্রমণ করেছিল।

এই দীর্ঘ সময়ের বিচিত্র অভিজ্ঞতা লাভ করে পুরোদস্তুর প্রাণিতত্ত্ববিদ হয়ে চার্লস দেশে ফিরলেন।

এবারে তিনি আরম্ভ করলেন গবেষণা আর নিজস্ব ধ্যানধারণার কথা পুস্তিকাকারে প্রচার করতে লাগলেন।

এই সকল পুস্তিকা তেমন সাড়া জাগাতে না পারলেও ভূ-তত্ত্ববিদ চার্লস লায়ারের সঙ্গে চার্লস-এর পরিচিত হবার সুযোগ ঘটে। এতে তিনি যথেষ্ট লাভবান হন।

ত্রিশ বছর বয়সে চালর্স এমমা ওয়েজউডকে বিয়ে করেন। এই দম্পতি ক্রমে পাঁচ পুত্র ও দুই কন্যা সন্তান লাভ করেন।

দীর্ঘ ষোল বছর ধরে পঠন-পাঠন ও গবেষণার মাধ্যমে চার্লস বিবর্তনবাদকে আয়ত্ত করবার চেষ্টা করেন।

এই সময় তিনি প্রখ্যাত প্রকৃতিবিদ ও তথ্যানুসন্ধানী অ্যালফ্রেড রাসেল ওয়ালেসের কাছ থেকে একটি চিঠি পান।

সেই চিঠিতে জানা যায় পরস্পরের অতি পরিচিত হওয়া সত্ত্বেও উভয়েই একই বিষয়ে গবেষণা করে একই সিদ্ধান্ত পৌঁছেছেন।

এই আশ্চর্য সমাপতনে চার্লস বিস্মিত হন এবং নিজের গবেষণার কথা ওয়ালেসকে জানালেন।

উত্তরে ওয়ালেস আশ্চর্য ঔদার্যের সঙ্গে জানালেন “I withdraw from the field leaving it open to you.”

১৮৫৮ খ্রি: ১ জুলাই লন্ডনের লিনিয়ান সোসাইটিতে ডারউইন তাঁর প্রবন্ধ পাঠ করেন। এটিই এক বছর পরে The origin of species by means of Natural Selection or the Preservation of the Favoured Races in the Struggle for Life এই দীর্ঘ নামে পুস্তকাকারে প্রকাশিত হয়।

এই বইটিই দ্য অরিজিন অব স্পিসিস সংক্ষিপ্ত নামে বিখ্যাত।

প্রকাশের পর মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যে বইটির এক হাজার আড়াই শো কপি বিক্রি হয়ে গিয়েছিল।

রক্ষণশীল খ্রিস্টান ও বিজ্ঞানী উভয় মহলেই আলোড়ন সৃষ্টি করল বইটির বক্তব্য।

উদ্ভিজ্জ ও জীবের অপরিণত অবস্থা, ভৌগোলিক অবস্থান ভেদে তাদের পরিবর্তনশীলতা, মাটির ওপরে তাদের বংশে বিস্তার প্রভৃতি বিবেচনা করে চার্লস সিদ্ধান্ত করেন যে জীবনের সৃষ্টি কোন স্বয়ংসৃষ্ট ব্যাপার নয়। এর উদ্ভবের পেছনে একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।

পনেরোটি অধ্যায়ে এই গ্রন্থে গার্হস্থ্য পরিবেশ ও প্রাকৃতিক পরিবেশে জীবের অবস্থা বিচার, বাঁচবার জন্য তাদের নিরন্তর প্রয়াস, তার প্রাণধারণে প্রকৃতির নির্বাচন অথবা যোগ্য জীবেরই বাঁচার অধিকার, সংজ্ঞা (instinct), সংকরতা প্রভৃতি বিষয়ে পরিচ্ছন্ন আলোচনা ও এ বিষয়ে তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

ডারউইনের এই গ্রন্থের আলোচনা পদ্ধতি ছিল কাব্যময় ও সরস, ফলে বিষয় বিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত হলেও সকশ্রেণীর পাঠককেই সমানভাবে আকৃষ্ট করেছিল।

কয়েক বছরের মধ্যেই পৃথিবীর বহু ভাষায় বইটির অনুবাদ প্রকাশিত হয়।

দ্য অরিজিন অব স্পিসিস, যেমন টি.এইচ. হাক্সলির মত বৈজ্ঞানিকের সমর্থন পায় তেমনি বিগল জাহাজের ক্যাপ্টেন ফিজরয়ের মতো রক্ষণশীল খ্রিস্টানদের বিরোধিতাও পায়।

সকল প্রকার বিতর্কের অবসানের জন্য ডারউইন ১৮৮ খ্রি: ও ১৮৭১ খ্রি: দুখানি বই variation of Animals and Plants ও Decent of Man পর পর প্রকাশ করেন।

দীর্ঘ কুড়ি বছর ধরে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানের উদ্ভিদ ও প্রাণীর ওপর গবেষণা চালিয়ে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে তিনি যে মতবাদ প্রচার করেন, তাই ডারউইনের মতবাদ বা (Darwin’s Theory) প্রাকৃতিক নির্বাচন নামে পরিচিতি লাভ করেছে।

ডারউইনের সমসাময়িক বিজ্ঞানী আলফ্রেড রাসেল ওয়ালেস স্বাধীনভাবে গবেষণা করে অভিব্যক্তির মূল ঘটনাকে প্রাকৃতিক নির্বাচনের নীতিতে ব্যাখ্যা করে, প্রাকৃতিক নির্বাচনের দরুন প্রজাতির উৎপত্তি এই মত প্রকাশ করায় ডারউইনের মতবাদ ডারউইন-ওয়ালেস মতবাদ নামেও পরিচিত।

ডারউইনের মতবাদের মূলকথা Survival of the fittest অর্থাৎ জীবজগতে অস্তিত্ব বজায় রাখার জন্য প্রতিনিয়ত সগ্রাম চলেছে এবং যারা উপযুক্ত তারাই টিকে আছে।

ডারউইনের মতবাদের মূল নীতি হল :

(১) বহুল পরিমাণে বংশবৃদ্ধি।

(২) জীবন সংগ্রাম-এর মধ্যে আছে অন্তঃপ্রকৃতি সংগ্রাম, ভিন্ন ভিন্ন বা আন্তঃপ্রজাতি সংগ্রাম ও পরিবেশের সঙ্গে সংগ্রাম।

(৩) প্রকরণ ও বংশগতি এবং

(৪) প্রাকৃতিক নির্বাচন।

প্রাকৃতিক নির্বাচন বলতে বোঝায় যে কোন প্রাণী যে সংখ্যায় বাঁচতে পারে তার চেয়ে অনেক বেশি প্রাণী জন্ম নেয়। যেহেতু ক্রমাগত জীবন সংগ্রাম চলছে, এ থেকে ধারণা করা যায় যে, কোন প্রকরণ যদি কোন প্রাণীর এবং পরিবেশের তুলনায় সুবিধার হয় তাহলে প্রজাতির ঐ প্রাণী বেঁচে থাকবার সুযোগ বেশি পায়। এভাইে প্রাকৃতিক নির্বাচন সাধিত হয়।

প্রাণীর বংশগতির মূল ধারণা থেকেই এ বিশ্বাস আসে যে নির্বাচিত প্রকরণ বংশগতি লাভ করে থাকে।

ডারউইনের যুগান্তকারী প্রাকৃতিক নির্বাচন-তত্ত্ব বিশ্বের বিজ্ঞানীদের দ্বারা অভিব্যক্তির প্রমাণরূপে স্বীকৃতি লাভ করে।

১৯০০ খ্রি: ক্রিশের পরিব্যক্তিতত্ত্ব প্রকাশিত হবার পর এবং গোল্ডস্মিথ, মূলার মার্সাল ফিশার প্রভৃতি প্রজননবিদদের নতুন নতুন তত্ত্ব প্রকাশিত হবার ফলে প্রাকৃতিক নির্বাচনই জীবনের অভিব্যক্তির মূল কারণ, এই ধারণার পরিবর্তন ঘটে।

বর্তমান বিজ্ঞানীরা পরিব্যক্তিবাদের ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়ে ডারউইনের মতবাদের দুর্বল অংশগুলোকে সংশোধন করে এক নতুন তত্ত্ব সৃষ্টি করেছেন।

এই সংশোধিত তত্ত্ব নয়া-ডারউইনবাদ {New Darwinism) নামে পরিচিত। এই মতবাদের মূল কথা হচ্ছে প্রাকৃতিক নির্বাচন ও মিউটেশনের মিলিত প্রচেষ্টায় অভিব্যক্তি ঘটে থাকে।

অভিব্যক্তবাদ প্রকাশের পর ডারউইন আরও কয়েকটি গ্রন্থ রচনা করেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য Fertilization of Orchids (১৮৬২) ও Formation of Vegetable Mould through the Action of Wom (১৮৮১ খ্রি:) প্রভৃতি।

আজীবন গবেষণাকাজে লিপ্ত ছিলেন ডারউইন। জীবের প্রতি ভালবাসা ছিল তাঁর চরিত্রের মহান বৈশিষ্ট্য। ১৮৮২ খ্রি: ১৯ এপ্রিল এই মহান বিজ্ঞান-সাধকের জীবনাবসান হয়।

১৮৩৫ খ্রি: ১৫ সেপ্টেম্বর চার্লস ডারউইন এইচ এম, এস বিল জাহাজে বৈজ্ঞানিক গবেষণার উদ্দেশ্যে গ্যালাপোগাস দ্বীপপুঞ্জে যান। এখানকার বহু বিচিত্র প্রাণীজীবন সম্পর্কে তিনি বিপুল তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন। প্রাণের ক্রমবিবর্তনধারা নিরূপনে এই সব তথ্যই ছিল তাঁর বিখ্যাত মতবাদের অন্যতম ভিত্তিভূমি। নিচে আগ্নেয়শিলাজাত দ্বীপপুঞ্জের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দেওয়া হল।

গ্যালাপোগাস দক্ষিণ আমেরিকার অন্তর্গত ইকোয়েডরের শাসনাধীন দ্বীপপুঞ্জ। ইকোয়েডরের থেকে দূরত্ব ১,০০০ কি.মি এবং ৬০০ মাইল পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত। পনেরটি বড় এবং অসংখ্য ছোটছোট দ্বীপ মিলিয়ে মোট আয়তন ৭,৯৬৪ বর্গ কি.মি।

প্রথমে স্পেনীয়রা এই দ্বীপগুলোর নামকরণ করে। দ্বিতীয়বারে এদের নামকরণ করে সপ্তদশ শতকে ইংরাজ জলদস্যুরা। তাই অধিকাংশ দ্বীপেরই দুটি করে নাম। কয়েকটি প্রধান দ্বীপের স্প্যানিশ নাম ও ইংরাজি নাম এরকম–

ইংরাজি নাম – স্প্যানিশ নাম

এবিংডেন – পিন্টা

বিনজলে – মার্চেনা

টাওয়ার – জেনোভেসা

জেমস – সালভাদর

ইন্ডিফ্যাটিগেবল – সান্তাক্রুজ

চ্যাথাম – ক্রিস্তোব্যাল

চার্লস – সান্তামারিয়া

এলবেমার্লে – ইসাবেলা

নারবরো – ফার্নান্দিনা

গ্যালাপাগো দ্বীপুঞ্জের মাত্র পাঁচটি দ্বীপে লোকবসতি রয়েছে। অধিবাসীদের প্রধান জীবিকা কৃষি ও মৎস্যশিকার। এখানকার আদিম প্রাণীদের মধ্যে রয়েছে প্রায় ৫০০ পাউন্ড ওজনের অতিকায় কচ্ছপ। এগুলো স্প্যানিশ নাম গ্যালাপ্যাগো। এই থেকেই দ্বীপুঞ্জের নামকরণ।

প্রাচীনকালে সমুদ্রের চোরাস্রোতে পড়ে জাহাজ ইত্যাদি এই অঞ্চলে এমনভাবে ঘুরপাক খেতো যে নাবিকদের চোখের সামনে থেকে দ্বীপ মাঝে মাঝে অদৃশ্য হয়ে যেত।

সেইকারণে স্প্যানিশদের দেওয়া আর একটি নাম হল লা আইলাস এনক্যালনটাডাস। ইংরাজি নাম দ্য এনচেড়ে আইসল।

এখানকার জলবায়ু বিচিত্র। ভূ-বিষুবরেখা দ্বীপপুঞ্জের মাঝখান দিয়ে গিয়েছে, সেইকারণে এখানে সূর্যকিরণ অতীব প্রখর।

অথচ দক্ষিণ মেরু থেকে প্রবাহিত অতি শীতল হমবোল্ট সমুদ্রস্রোতের দরুণ নিরক্ষীয় সমুদ্র থেকে এখানকার সমুদ্র ৯৫ থেকে ২০ বেশি ঠান্ডা।

ডিসেম্বর থেকে মার্চ অবধি ঝড়-বৃষ্টি, তারপর আগ্নেয়গিরিজাত পর্বতসঙ্কুল দ্বীপমালা মরুভূমি-সদৃশ।

ফলে নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে কুমেরু অঞ্চল পর্যন্ত পরিব্যাপ্ত এলাকা বহু বিচিত্র প্রাণীর লীলাভূমি।

পানামার বিশপ টমাস ডি বারলাঙ্গা, ১৫৩৫ খ্রি: এই দ্বীপপুঞ্জ আবিষ্কার করেন। কনটিকি অভিযান-খ্যাত থর হায়ারঙাল ১৯৫৩ খ্রি: এখানে এসে যে সব প্রমাণ পান তার থেকে তিনি ধারণা করেন ১৫৩৫ খ্রি: আগেই এখানে মানুষের পদার্পণ ঘটেছে।

প্রাগৈতিহাসিক কালের সরীসৃপের মধ্যে এখানে এখনো পর্যন্ত বহাল তবিয়তে বেঁচে রয়েছে জলচর ও স্থলচর গোসাপ বা গিরগিটি শ্ৰেণীর ইগুয়ানা। পৃথিবীর আর কোথাও এই প্রাণীর অস্তিত্ব নেই। নারবরো (ফার্নান্দিনা) দ্বীপের জলচর ইগুয়ানা লম্বায় তিন ফুট, ওজন ২০ পাউন্ড।

এখানকার এক একটি দ্বীপে এক এক প্রজাতির ফিঞ্চ পাখি রয়েছে। জীবনধারণের জন্য সংগ্রাম করতে করতে ১৩ প্রজাতির ফিঞ্চ পাখির অাকার বিশেষতঃ ঠোঁটের গঠন বিভিন্ন প্রকারের হয়ে গেছে।

অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে বৃহদাকার কচ্ছপ, ফারসীল, সিন্ধুঘোঁটক, লাল কাঁকড়া ও ড্রোমিকাস প্রজাতির সাপ উল্লেখযোগ্য।

পাখি রয়েছে বহুপ্রকার, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ববি, পায়রা, বাজপাখি, পেঙ্গুইন, পেলিক্যান,পরমোর্যান্ট, ফ্লেমিংগো, মকিংবার্ড, ফ্রিগেট, নীল হেরন, ফ্লাইক্যাচার ও ফ্লিগেটবার্ড।

প্রকৃতি যেন তার আদিমরূপের একটা সংক্ষিপ্ত সংস্করণ এখানে স্বকীয় প্রযত্নে সংরক্ষণ করে চলেছে।

তথ্যসূত্রঃ বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ১০০ মনীষীর জীবনী – মাইকেল এইচ. হার্ট / সম্পাদনায় – রামশংকর দেবনাথ