আনোয়ার হোসেন (Anwar Hossain)

প্রথম পাতা » জীবনী » আনোয়ার হোসেন (Anwar Hossain)


আনোয়ার হোসেন

আনোয়ার হোসেন

(৬ নভেম্বর ১৯৩১ - ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৩) বাংলাদেশের একজন চলচ্চিত্র অভিনেতা। তিনি চলচ্চিত্র ভুবনে নবাব সিরাজউদ্দৌলা ও মুকুটহীন নবাব নামে খ্যাত। তিনি ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক, নাট্যধর্মী, লোককাহিনীভিত্তিক, পোশাকি ফ্যান্টাসি, সাহিত্যনির্ভর, শিশুতোষ, পারিবারিক মেলোড্রামা, বক্তব্যধর্মীসহ বিভিন্ন ধরনের চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তিনি ১৯৫৮ সালে চিত্রায়িত তোমার আমার চলচ্চিত্রটির মাধ্যমে অভিনয় জীবনে প্রবেশ করেন। ঢাকার চলচ্চিত্রের এই কিংবদন্তি অভিনেতা ৫২ বছরের অভিনয় জীবনে পাঁচ শতাধিক চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন।

১৯৭৫ সালে লাঠিয়াল ছবিতে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে প্রথমবারের মত আয়োজিত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানের জন্য তাকে একুশে পদক প্রদান করা হয় এবং অভিনেতাদের মধ্যে তিনিই প্রথম এই পুরস্কার লাভ করেন।

জন্ম ও শিক্ষা
আনোয়ার হোসেনের জন্ম ১৯৩১ সালের ৬ নভেম্বর জামালপুর জেলার সরুলিয়া গ্রামে।তার পিতা একেএম নজির হোসেন ছিলেন সাব-রেজিস্টার এবং মাতা সাঈদা খাতুন। নজির-সাঈদা দম্পতির তৃতীয় সন্তান আনোয়ার হোসেন। তিনি ১৯৪০ সালে দেওয়ানগঞ্জ প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি হন এবং ১৯৫১ সালে তিনি জামালপুর স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। পরবর্তীতে ভর্তি হন ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজে। কলেজের প্রথম বর্ষে অভিনয় করেন আসকার ইবনে শাইখের পদক্ষেপ নাটকে। প্রথম বর্ষের পরীক্ষার পর তার পিতার বন্ধু আবদুল্লাহ খানের সেলকন ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্মে সুপারভাইজার হিসেবে যোগ দেন এবং ১৯৫৭ সালে তিনি ঢাকায় চলে আসেন এবং নাসিমা খানমকে বিয়ে করেন।

অভিনয় জীবন

১৯৬৭ সালে নবাব সিরাজউদ্দৌলা চলচ্চিত্রে আনোয়ার হোসেন
হোসেন ১৯৫৯ সালে ঢাকায় ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে ননী দাস নির্দেশিত এক টুকরো জমি নাটকে অভিনয় করেন। পরে তিনি ঢাকা বেতারে অডিশন দেন এবং হাতেম তাই নাটকে একটি অপ্রধান চরিত্রে কাজ করেন। মঞ্চনাটকে কাজের সুবাদে তিনি আবদুল জব্বার খান, মোহাম্মদ আনিস ও হাবিবুর রহমানের সাথে পরিচিত হন। এসময়ে তারা ঝিনুক পত্রিকার সম্পাদক আসিরুদ্দিনের সহযোগিতায় মিনার্ভা থিয়েটার প্রতিষ্ঠা করেন এবং এতে যুক্ত হন সৈয়দ হাসান ইমাম, ফতেহ লোহানী, মেহফুজ, সুভাষ দত্ত, চিত্রা সিনহাসহ আরও অনেক অভিনয়শিল্পী।

পরিচালক মহিউদ্দিনের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুবাদে প্রথম পরিচয়েই আনোয়ার হোসেন তার অভিনয় দক্ষতা প্রমাণ করে তোমার আমার (১৯৬১) ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পান। এতে তিনি খলচরিত্রে অভিনয় করেন। বিডিনিউজ ২৪ ডট কম দেয়া সাক্ষাৎকারে নিজের অভিনয় জীবনের শুরুর কথা তিনি জানান।

বালকবেলায় স্কুলের নাটকে অভিনয় করতে গিয়েই অভিনয়ের প্রতি আমার আসক্তি। এরপর তখনকার রূপালী জগতের তারকা ছবি বিশ্বাস, কাননদেবী এদের বিভিন্ন ছবি দেখতে দেখতেই রূপালী জগতে আসার ইচ্ছাটি প্রবল থেকে প্রবলতর হয়ে ওঠে। পঞ্চাশ দশকের শেষের দিকে সিদ্ধান্ত নিলাম অভিনয় করবো সারাজীবন। সুতরাং অন্য কোন জীবিকার সন্ধান না করে সরাসরি চলে গেলাম পরিচালক মহিউদ্দিন সাহেবের কাছে। তিনি তখন মাটির পাহাড় নামের একটি ছবির কাজ করছেন। তাকে ধরলাম আমাকে নেওয়ার জন্য। তিনি জানালেন, ছবিতে অভিনয় শিল্পী নির্বাচনের কাজ শেষ। ফলে আমাকে নেওয়া যাচ্ছে না আপাতত। ৫৮ সালে শুরু করলেন ‘তোমার আমার’ ছবিটির কাজ। এখানে আমাকে নির্বাচন করা হলো খল-নায়কের চরিত্রে। আমার রূপালী পর্দায় অভিষেক হলো ‘বীরেন’ হিসেবে। এই ছবিতে আমার সহশিল্পী ছিলেন কাফী খান আর আমিনুল ইসলাম। এরা এখনও বেঁচে আছেন। আমাদের সমসাময়িকদের মধ্যে সম্ভবত একমাত্র আমরাই এখনো বেঁচে আছি।”

একই বছর তিনি তার অভিনীত দ্বিতীয় চলচ্চিত্র সূর্যস্নান-এ মুখ্য অভিনেতা হিসেবে অভিনয় করেন। এরপর তিনি জোয়ার এলো (১৯৬২), কাঁচের দেয়াল (১৯৬৩), নাচঘর (১৯৬৩), দুই দিগন্ত (১৯৬৬), বন্ধন (১৯৬৪), একালের রূপকথা (১৯৬৫) চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। তার ও সুমিতা দেবী অভিনীত দুই দিগন্ত চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে ঢাকার বলাকা সিনেওয়ার্ল্ডের উদ্বোধন হয়েছিল। তার অভিনীত প্রথম উর্দু ভাষার চলচ্চিত্র উজালা। এটি ১৯৬৬ সালে মুক্তি পায়। ১৯৬৭ সালে নবাব সিরাজউদ্দৌল্লা চলচ্চিত্রে নাম ভূমিকায় অভিনয় করে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও খ্যাতি অর্জন করেন।এই চলচ্চিত্রে অভিনয় করে তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে নিগার পুরস্কার লাভ করেন।

১৯৭৫ সালে তিনি নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত লাঠিয়াল চলচ্চিত্রে কাদের লাঠিয়াল চরিত্রে অভিনয় করেন। এই কাজের জন্য তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের প্রথম আয়োজনে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৭৮ সালে তিনি আমজাদ হোসেনের গোলাপী এখন ট্রেনে’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।

২০১০ সালে হোসেনকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হয়।

মৃত্যু
২০১৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে মৃত্যু বরণ করেন।

উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র

আনোয়ার হোসেন অভিনীত নবাব সিরাজউদ্দোল্লা চলচ্চিত্র
তোমার আমার - পরিচালক: মহিউদ্দিন - (১৯৬১)
সূর্যস্নান - পরিচালক: সালাউদ্দিন - (১৯৬২)
কাচের দেয়াল - পরিচালক: জহির রায়হান - (১৯৬৩)
বন্ধন - পরিচালক: কাজী জহির - (১৯৬৪)
রাজা সন্ন্যাসী - পরিচালক: খান আতাউর রহমান - (১৯৬৬)
নবাব সিরাজউদ্দৌলা - পরিচালক: খান আতাউর রহমান - (১৯৬৭)

অপরাজেয় - পরিচালক: এম এ হামিদ - (১৯৬৭)
সাত ভাই চম্পা (১৯৬৮)
জীবন থেকে নেয়া - পরিচালক: জহির রায়হান - (১৯৭০)
অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী - পরিচালক: সুভাষ দত্ত - (১৯৭২)
রংবাজ - পরিচালক: জহিরুল হক - (১৯৭৩)
ধীরে বহে মেঘনা - পরিচালক: আলমগীর কবির - (১৯৭৩)
লাঠিয়াল - পরিচালক: নারায়ণ ঘোষ মিতা - (১৯৭৫)
পালঙ্ক - পরিচালক: রাজেন তরফদার - (১৯৭৬)
রূপালী সৈকতে - পরিচালক: আলমগীর কবির - (১৯৭৭)
নয়নমনি - পরিচালক: আমজাদ হোসেন - (১৯৭৭)
কুয়াশা - পরিচালক: আজিজুর রহমান - (১৯৭৭))

নাগরদোলা - পরিচালক: বেলাল আহমেদ - (১৯৭৮)

গোলাপী এখন ট্রেনে - পরিচালক: আমজাদ হোসেন - (১৯৭৮)
সূর্য সংগ্রাম - পরিচালক: আবদুস সামাদ - (১৯৭৯)
বড় ভাল লোক ছিল - পরিচালক: মহিউদ্দিন - (১৯৮২)
ভাত দে - পরিচালক: আমজাদ হোসেন - (১৯৮৪)
সূর্যস্নান - পরিচালক: সালাহউদ্দিন
জোয়ার এলো - পরিচালক:
নাচঘর - পরিচালক:
দুই দিগণ্ত - পরিচালক:
পালঙ্ক - পরিচালক: রাজেন তরফদার
পরশমণি - পরিচালক:
শহীদ তিতুমীর - পরিচালক:
ঈশা খাঁ - পরিচালক:
অরুণ বরুণ কিরণমালা - পরিচালক:
চাকর - পরিচালক: মনতাজুর রহমান আকবর - (১৯৯২)
অনন্ত ভালবাসা - পরিচালক: সোহানুর রহমান সোহান - (১৯৯৯)

সম্মাননা

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার

আনোয়ার হোসেন ১৯৭৫ সালে প্রথম প্রবর্তন ও প্রদানকৃত বাংলাদেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিজয়ী অভিনেতা। নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত লাঠিয়াল চলচ্চিত্রে তার সুঅভিনয়ের স্বীকৃতি স্বরূপ শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে পুরস্কার লাভ করেন। আমজাদ হোসেনের গোলাপী এখন ট্রেনেতে সহ-অভিনেতা হিসেবে পুরস্কার পান ১৯৭৮ সালে। ২০১০ সালে প্রদানকৃত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-এ আজীবন সম্মাননায় ভুষিত হন তিনি।

১৯৭৫: শ্রেষ্ঠ অভিনেতা - লাঠিয়াল

১৯৭৮: শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা - গোলাপী এখন ট্রেনে

১৯৭৮: শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা - দায়ী কে?

২০১০: আজীবন সম্মাননা

অন্যান্য পুরস্কার
পাকিস্তানের নিগার পুরস্কার - (১৯৬৭)
একুশে পদক - (১৯৮৮)
বাচসাস পুরস্কার
ওয়ালটন-বৈশাখী স্টার অ্যাওয়ার্ড - (২০১১)
তথ্যসূত্র ঃ  উইকিপিডিয়া