সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ(জীবনী)

প্রথম পাতা » জীবনী » সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ(জীবনী)


 সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ

বাংলা সাহিত্যের কথাসাহিত্যিক সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ ১৯১২ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট চট্টগ্রামের ষোলশহরে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা সৈয়দ আহমদ উল্লাহ ছিলেন ম্যাজিস্ট্রেট। কুড়িগ্রাম হাই স্কুল থেকে ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে ম্যাট্রিকুলেশন, ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে আই.এ এবং ১৯৪৩খ্রিস্টাব্দে ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজ থেকে ডিস্টিংশনসহ বি.এ পাস করেন তিনি। পরে চলে যান কলকাতায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু করেন অর্থনীতি বিষয়ে পড়াশুনা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফাইনাল পরীক্ষা আর দেয়া হয়নি। পরে এম.এ পাস করেন ইংরেজিতে। ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে কলিকাতায় স্টেটসম্যান পত্রিকায় সহ-সম্পাদকের চাকরি নেন। দু’বছর এখানেই কাজ করেন। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের দেশ ভাগের পর ঢাকা এসে ঢাকা বেতার কেন্দ্রের সহকারী বার্তা সম্পাদকের কাজ নেন।১৯৫০-৫১-খ্রিস্টাব্দে করাচী বেতার কেন্দ্রের বার্তা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এর পরবর্তী পনের বছরের বেশি সময় ধরে তিনি বিভিন্ন দূতাবাসে বিভিন্ন পদে চাকরি করেন। কখনো প্রেস এ্যাটাশে, কখনো সেকেন্ড বা ফার্স্ট সেক্রেটারি হিসেবে। এই পনের-ষোল বছরের মধ্যে তিনি কাজ করেছেন নয়াদিল্লী, জাকার্তা, সিডনি, লন্ডন এবং প্যারিসে। ১৯৬৭ থেকে ৭১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্যারিসে ইউনেস্কোর ‘প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট’ হিসেবে কর্মরত ছিলেন । ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন মুক্তিযুদ্ধে বিদেশের মাটিতে বসেই। ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি এক ফরাসি রমণী অ্যান মেরিকে বিবাহ করেন। তিনি সর্বদাইছায়ার মতন থাকতেন ওয়ালীউল্লাহ’র সঙ্গে। সম্প্রতি তিনিও লোকান্তরিত হয়েছেন। ৭১ খ্রিস্টাব্দের ১০ অক্টোবর ওয়ালিউল্লাহ প্যারিসে থাকতেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছিলেন। আমাদের বাংলা সাহিত্যে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর অবিস্মরণীয় অবদান এদেশের পাঠক শ্রেণি কখনো ভুলে যাবে না। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর রচনাবলীর সংখ্যা তেমন উল্লেখযোগ্য নয়। কিন্তু তার লেখার বিষয়, ভাষা ও পরিপ্রেক্ষিত ছিল অসাধারণ। ব্যাক্তি-জীবন ও সমাজের নানা কুসংস্কার, মূল্যবোধের বিপর্যয় এবং মানসিক স্খলন তার প্রতিটি লেখায় উজ্জ্বলরূপে ফুটিনো তুলেছেন। আমাদের কথাসাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রূপকার ছিলেন তিনি। তার রচনাবলীর মধ্যে রয়েছে লালসালু (১৯৪৮), চাঁদের অমাবস্যা (১৯৬৪), কাঁদো নদী কাঁদো (১৯৬৮) প্রভৃতি উপন্যাস, নয়নচারা (১৯৫১) ও দুই তীর (১৯৬৫) প্রভৃতি গল্পগ্রন্থ গল্পসমগ (১৯৭২), বহিপীর (১৯৬০), তরঙ্গ ভঙ্গ (১৯৭১) এবং সুরঙ্গ (১৯৬৪) প্রভৃতি নাটক। তবে লালসালু উপন্যাসের মাধ্যমে তিনি কথাসাহিত্যিক হিসেবে দেশ ও বিদেশে ব্যাপকভাবে পরিচিতি লাভ করেন । লালসালু’র ফরাসি অনুবাদ ( Avbre sama Macme’) প্রকাশিত হয় ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে এবং ইংরেজি অনুবাদ Tree without Roots প্রকাশিত হয় ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে। এই উপন্যাসের মাধ্যমে তিনি আমাদের দেশের কুসংস্কারাচ্ছন্ন মুসলিম সমাজের একটিদিকের চিত্র অসামান্য দক্ষতায় উন্মোচিত করেছেন । ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি পি.ই. এন. পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে লাভ করেন আদমজী সাহিত্য পুরস্কার। এর আগে ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে বাংলা একাডেমি পুরস্কার এবং সর্বশেষ ১৯৮৪স্টাব্দে তিনি মরণোত্তর একুশে পদক লাভ করেন ।