মোহাম্মদ আব্দুল হাদী (Mohammad Abdul Hadi)

প্রথম পাতা » ই-বুক » মোহাম্মদ আব্দুল হাদী (Mohammad Abdul Hadi)


বীরমুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আব্দুল হাদী

মোহাম্মদ আব্দুল হাদী ১৯৫৩ সাালের ২৫শে আগস্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের পাওয়ার হাউস রোডস্থ এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আব্দুল বারী ও মাতার নাম হাজেরা বারী। তার পিতামহ আব্দুল করিম এবং প্রো-পিতামহ নাগর খান। মা ছিলেন ব্রিটিশ সেনা কর্মকর্তা আফসার উদ্দিন ভূঁইয়ার সুযোগ্যা কন্যা।

আব্দুল হাদী ১৯৬৯ সননে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রসিদ্ধ অন্নদা সরকারি হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হোন। ১৯৭২ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক এবং ১৯৭৪ সালে বিএসসি সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে প্রবাস জীবনে লন্ডনের সাউথ সেমস কলেজ থেকে উচ্চতর শিক্ষা লাভ করেন। তিনি স্কুল জীবনে স্কাউট এবং কলেজ জীবনে রোভার স্কাউটের সাথে যুক্ত ছিলেন এবং জাম্বুরি ও বিভিন্ন শিক্ষা সফরে অংশ নিতেন। পাকিস্তান ক্যাডেট কোর (PCC)-এ সংযুক্ত থাকাবস্থায় গেরিলা প্রশিক্ষণ সম্পূর্ণ করে তিনি ১৯৭১ সালে ২ নং সেক্টরের অধিনায়ক মেজর খালেদ মোশারফের অধীনে সেই অগ্নিঝরা নয়টি মাস মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

জনাব হাদী একজন সফল ব্যবসায়ী। তিনি পেট্রোবাংলা, তিতাস গ্যাস কোম্পানী, বাখরাবাদ গ্যাস সিস্টেম-এর অধীনে ১ম শ্রেণির সরকার অনুমোদিত মেঝো এন্ড কনস্ট্রাকশন-এর স্বতাধিকারী। তিনি ১৯৯৪ সালে সপরিবারে বিলেতের লন্ডনে পারি জমান। প্রোপাটি ম্যানেজমেন্ট-এ প্রশিক্ষণ নিয়ে বর্তমানে তিনি ল্যান্ডমার্ক প্রোপার্টি এজেন্টস লিমিটেড নামে একটি ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন।

জনাব হাদী ১২ নভেম্বর, ১৯৭০ বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে বয়ে যাওয়া প্রলয়ঙ্করী সাইক্লোন ও জলোচ্ছ্বাসে, ১৯৮২-৮৪ সালে, ১৯৮৮ সালের বন্যায় এবং নভেম্বর, ২০০৭ সাইক্লোন সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় আন্তর্জাতিক চ্যারিটি অর্গানাইজেশন ‘হিউম্যানিটি ফার্স্ট, ইউ.কে’র রিলিফ টিমের প্রতিনিধি হয়ে বিভিন্ন ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে দূর্গত এলাকায় ত্রাণ কার্য পরিচালনা করেন।

জনাব হাদী ঢাকা থেকে প্রকাশিত সরকারি নিবন্ধনপ্রাপ্ত মাসিক আহ্বান-এর প্রকাশক। ১৯৮৬ থেকে ১৯৯২ পর্যন্ত তিনি ম. মো. আ. বাংলাদেশের সভাপতি হিসেবে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেন। তাকে শ্রেষ্ঠ সংগঠকের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘ঋতুপর পুরুস্কার প্রদান করা হয়।

তিনি ১৯৯১ ও ১৯৯৩ সালে লন্ডনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। তাঁর নেতৃত্বে সফলতার সাথে ঢাকা প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন পাঁচতারকা হোটেল ও লন্ডনের বিভিন্ন হলে সেমিনার ও সিম্পেজিয়াম অনুষ্ঠিত হয়েছে। তিনি সুদীর্ঘ ১২ বছর আন্তর্জাতিক টেলিভিশন চ্যানেল এমটিএ’-তে বাংলা সংবাদ পাঠসহ বাংলা-ডেক্স ও বাংলা বিভাগের ইনচার্জ হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির একজন সক্রিয় সদস্য। ১৯৯৬ থেকে অদ্যাবধি যুক্তরাজ্য এথনিক মাইনরিটি সেন্টার (EMC)-এর একজন ট্রাস্টি। এছাড়া বিলেতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সমিতির সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন। করে চলেছেন।

জনাব হাদী বর্তমানে দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়ে লন্ডনের বাস করছেন। ২০০৬ সালে তিনি সঙ্গীক হজ্বব্রত পালনের সৌভাগ্য লাভ করেছেন।

জনার হাদী একজন ভ্রমণ পিপাষু মানুষ। তিনি জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে শখে ও নানাবিধ কাজে ভারত, যুক্তরাজ্য, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, মধ্যপ্রাচ্যসহ ইউরোপের অনেকগুলো দেশ ভ্রমণ করেছেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি একজন খোদাভীক ধর্মপ্রাণ এবং নিঃস্বার্থ দেশ প্রেমিক। তিনি বহুদিন ধরে লন্ডনে বাস করলেও দেশের প্রতি তার গভীর মমত্ববোধ রয়েছে। তিনি প্রবাসে ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলা ভাষা ও বাঙালী সংস্কৃতির সৌন্দর্যকে সমুজ্জ্বল করার কাজে অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন। মুক্তিযুদ্ধের উপর তার এই দালিলিক সংকলনটি যেন তারই প্রমাণ।

তথ্যসূত্র: .২০১৯  সালে প্রকাশিত ‘বাংলার ইতিহাসে এবং মুক্তিযুদ্ধে ব্রাক্ষণবাড়িয়া ও প্রবাসীদের অবদান’                       গ্রন্থ থেকে সংকলিত।