সিকান্দার আবু জাফর (জীবনী)

প্রথম পাতা » জীবনী » সিকান্দার আবু জাফর (জীবনী)


সিকান্দার আবু জাফর
সিকান্দার আবু জাফর ‘বাংলা ছাড়ো’ শীর্ষক বিখ্যাত কবিতার কবি। এখানেই পরিচয় শেষ নয়-একাধিকবার তিনি সাহসী সাংবাদিক, বিপ্লবী গীতিকার, সোচ্চার ও প্রতিবাদী কবি, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠক ও প্রগতিশীল চিন্তা চেতনার সাহিত্যিক। ১৯৫০ ১৯৬৫ খ্রি. গণআন্দোলন ও গণবিস্ফোরণের অন্যতম নায়ক এবং ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অংশগ্রহণ ছিল ঐতিহাসিক। ১৯১৯ খ্রি. এই মহান মানুষটির জন্ম সাতক্ষীরা জেলার তেঁতুলিয়া গ্রামে । পিতা সৈয়দ মঈনুদ্দীন হাশেমীর পেশা ছিল কৃষি ও ব্যবসা। পিতৃব্য সৈয়দ জালালুদ্দীন হাশেমী কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র ও অবিভক্ত বঙ্গের লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলির ডেপুটি স্পিকার ছিলেন। তিনি স্থানীয় তালা বি.দে ইন্সটিটিউশন থেকে পাস (১৯৩৬) করেন তিনি স্থানীয় স্কুল থেকেই মেট্রিক পাস করেন। অতঃপর কিছুকাল কলকাতার বঙ্গবাসী কলেজে অধ্যায়ন করেন। সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। প্রথম দিকে কলকাতার ‘দৈনিক নবযুগ’ - এ সাংবাদিকতা। কলকাতার টালিগঞ্জ নিবাসী এম. সেনের কন্যা পুষ্প সেন, বিবাহোত্তর নাম নার্গিস খাতুন- এর সঙ্গে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন (১৯৪৬)। জীবনের শেষ দিকে মাতুল-কন্যা কাজী রোজীকে দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেন (১৯৭১) । দেশ বিভাগের (১৯৪৭) পর ১৯৫০-এর কলকাতা ত্যাগ করে ঢাকায় আগমন করেন। রেডিও পাকিস্তানে চাকরি গ্রহণ করেন। ১৯৫৩ তে দৈনিক ইত্তেফাকের সহযোগী সম্পাদক, ১৯৫৪ তে দৈনিক মিল্লাতের প্রধান সম্পাদক এবং ১৯৫৭-১৯৭০ পর্যন্ত মাসিক ‘সমকাল’ (সেপ্টেম্বর ১৯০৭) পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক হন। ১৯৫৮-তে ‘সমকাল মুদ্রায়ন’ নামে একটি ছাপাখানা ও ‘সমকাল প্রকাশনী’ নামে একটি প্রকাশনালয় স্থাপন করেন। শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের ৬ দফাকে কেন্দ্র করে পূর্ব বাংলায় বাঙালি জাতীয়তাবাদ ওবাঙালী সংস্কৃতি চর্চার যে ধারা প্রবাহিত হয় তার একজন পৃষ্ঠপোষক। ১৯৭১-এ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকালে তৎকালীন স্বাধীন বাংলা সরকারের পক্ষে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। ‘আমাদের সংগ্রাম চলবেই’ তাঁর রচিত এ গান তখন মুক্তিযোদ্ধাদের বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করে। তাঁর কবিতার যুগযন্ত্রণা বলিষ্ঠভাবে প্রতিফলিত হয়। একজন বিপ্লবকামী কবি হিসেবে অসংখ্য গণসঙ্গীত লিখে খ্যাতি অর্জন করেন। রচিত উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম কবিতা: প্রসন্ন প্রহর (১৯৬৫), বৈরী বৃষ্টিতে (১৯৬৫), তিমিরান্তর (১৯৬৫), কবিতা ১৩৭২ (১৯৬৮), বৃশ্চিক লগ্ন (১৯৭১), নাটক: শকুন্তলা উপখ্যান (১৯৫৮), সিরাজউদ্দৌলা (১৯৫৫), মহাকবি আলাওল (১৯৬৫)। উপন্যাস: মাটি আর অশ্রু (১৯৪২), পূরবী (১৯৪৪), নতুন সকাল (১৯৪৫) গল্পগ্রন্থ: মতি আর অশ্রু (১৯৪১)। কিশোর উপন্যাস: জয়ের পথে (১৯৪২), নবী কাহিনী (জীবনী ১৯৫১)। অনুবাদ: রুবাইয়াত ওমর খৈয়াম (১৯৬৬), সেন্ট লুইয়ের সেতু (১৯৬১), বারনাড মালামুডের যাদুর কলস (১৯৫৯)। ১৯৬৬-তে নাটকে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। সিকান্দার আবু জাফর ‘সমকাল’-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক হিসেবেও তাঁর অবদান অবিস্মরণীয়। বাংলাদেশে আধুনিক সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রে সমকালের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। মৃত্যুবরণ ঢাকা ৫.৮.১৯৭৫। তাকে ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে একুশে পদক (মরণোত্তর) এবং ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতা পুরস্কার (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়।