মুহম্মদ মনসুর উদ্দীন(জীবনী)

প্রথম পাতা » জীবনী » মুহম্মদ মনসুর উদ্দীন(জীবনী)


মুহম্মদ মনসুর উদ্দীন

মুহম্মদ মনসুর উদ্দীন । লোকসাহিত্য বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদ ও লেখক তিনি। যিনি তার ৮৩ বর্ষ জীবনের অধিকাংশ সময়ই মেধা ও মনীষাকে নিবেদন করেছেন অজ্ঞাত, অখ্যাত, অবহেলিত, লাঞ্ছিত ও জর্জরিত পল্লী ,জনপদের সাংস্কৃতিক সম্পদ ও সুধা উদ্ধারের দুরূহ কর্মযজ্ঞে। তিনি এই কর্মযজ্ঞে এগিয়ে না এলে হয়তো হারিয়ে যেতো বাংলাদেশের বহু উপাখ্যান, গান ও গীতি, বহু শব্দ-ভাব ওব্যঞ্জনা। বাংলা তথা ভারত বিশ্ব সাহিত্যেরগৌরব ও অহংকার মুহম্মদ মনসুর উদ্দীনের জন্ম পাবনা জেলার মুরারীপুর গ্রামে,৩১ জানুয়ারী ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে। পিতা জয়ধর আলী মণ্ডল একজন নিম্নবিত্ত কৃষক ছিলেন। মনসুর উদ্দীন স্থানীয় খলিলপুর উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় থেকে ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে ১ম বিভাগে এন্ট্রান্স পাস করেন, পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে ৩য় বিভাগে আইএসসি, ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে ৩য় বিভাগে বিএ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্ডিয়ান ভার্নাকুলার বিভাগ থেকে বাংলায় ১ম শ্রেণীতে ৩য় স্থান অধিকার করে এম. এ পাস করেন ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে। ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে সহকারী স্কুল পরিদর্শক হিসেবে কর্মজীবন শুরু। প্রায় ৪ বছর এ পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজের স্কুল শাখার ইংরেজির সহকারী শিক্ষক নিযুক্ত হন। ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম সরকারি ইন্টারমিডিয়েট কলেজে বাংলার প্রভাষক নিযুক্ত হন। রাজশাহী কলেজ, হুগলী মোহসীন কলেজ ও ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজে অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে পূর্ব পাকিস্তান শিক্ষা সার্ভিসে যোগদান করেন। পরবর্তীতে ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সিলেটের মুরারীচাঁদ কলেজের বাংলার অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন । ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে সরকার পরিচালিত মাসিক ‘মাহে-নও’ পত্রিকার সম্পাদক নিযুক্ত হন। এখানে প্রায় ছয় মাস দায়িত্ব পালনের পর ঢাকা কলেজের বাংলার প্রধান অধ্যাপক নিযুক্ত হন। প্রায় সাত বছর এ কলেজে দায়িত্ব পালনের পর ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে অবসর গ্রহণ করেন।

তিনি শুধু বাংলা ভাষা ও সাহিত্য এবং বাঙালি সংস্কৃতি বিকাশেই বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেননি, ‘মাহে নও’ পত্রিকার সম্পাদক থাকাকালে সরকার বাংলার বর্ণমালা পরিবর্তনের যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন তার বিরোধিতা করে সরকারের বিরাগভাজনে পতিত হন। যাটের দশকের শেষের দিকে পাকিস্তান সরকার বেতার ও টিভিতে রবীন্দ্রসঙ্গীত প্রচার বন্ধের ও উর্দুকে লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা চালুর যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল, সোচ্চার কন্ঠে সরকারের সে সব পদক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জ্ঞাপন করেন। অলিখিত বাংলা লোক সাহিত্যের অন্যতম প্রধান সংগ্রাহক মনসুর উদ্দীন দশ খণ্ডে সমাপ্য লোক সঙ্গীতের সংকলন গ্রন্থ ‘হারামণি’ সম্পাদনা করে সর্বশ্রেণির মানুষের শ্রদ্ধা অর্জন করেন। তাঁর লেখা প্রকাশিত অন্যান্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে-শিরণী (১৯৩১), ধানের মঞ্জুরী (১৯৩৩), আগরবাতি (১৯৩৮), বাংলা সাহিত্যে মুসলিম সাধনা (১ম খণ্ড-১৯৬০, ২য় খণ্ড-১৯৬৪, ৩য় খণ্ড-১৯৬৬) ও ইরানের কবি। এছাড়া প্রায় একশ পত্রিকায় তিনি বাউল সাহিত্য বিষয়ক নিবন্ধ ও গ্রন্থ সমালোচনা লিখেছেন। বাংলা সাহিত্যের এ অসামান্য কীর্তি স্থাপনের জন্য ১৩৯৪ বঙ্গাদে কলকাতার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মাননাসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে। এ ছাড়া ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে পেয়েছেন বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার। ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে একুশে পদক এবং ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হন। ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দের ১৯ সেপ্টেম্বর এই প্রতিভাবান মানুষটির মৃত্যু হয়।