নিজামুদ্দীন আহমদ

প্রথম পাতা » জীবনী » নিজামুদ্দীন আহমদ


নিজামুদ্দীন আহমদ
মুক্তিযুদ্ধের শহীদ সাংবাদিক
শহীদ সাংবাদিক নিজামুদ্দীন আহমদের জন্ম মাওয়া গ্রাম, মুন্সীগঞ্জ, ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে। শিক্ষিত মধবিত্ত পরিবারে জন্ম। স্বগ্রামে প্রাথমিক শিক্ষালাভ। স্থানীয় কাজীর পাগলা অভয়কুমার তালুকদার স্কুল থেকে ম্যাট্রিক ও মুন্সীগঞ্জ হরগঙ্গা কলেজ থেকে আই.এ. পাস করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫২-তে অর্থনীতিতে অনার্সসহ স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ছাত্রজীবন থেকেই সাংবাদিকতা পেশায় নিয়োজিত। লাহোরের সিভিল ও মিলিটারি গেজেট, ঢাকায় দৈনিক মিল্লাত, এ.পি.পি. প্রভৃতি পত্রিকা ও সংবাদ সংস্থায় সাংবাদিকতা করেন। ১৯৫৯-এ তদানীন্তন ‘পাকিস্তান প্রেস ইন্টান্যাশনাল’ সংস্থায় যোগদান করেন। তাঁর প্রচেষ্টায় ঢাকায় এই সংবাদ সংস্থার শাখা দপ্তর স্থাপিত করেন। কালক্রমে তিনি এর সম্পাদক নিযুক্ত হন এবং ১৯৬৯ থেকে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ইউ.পি.আই., বি.বি.সি. এবং অ্যাসোসিয়েট প্রেস অব আমেরিকার ঢাকাস্থ সংবাদদাতা ছাড়া যক্ষ্মা সমিতি, কেন্দ্রীয় পাট বোর্ড, সেন্সর বোর্ড প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার সদস্য ছিলেন। কলেজে পাঠকালেই ছাত্রনেতা হিসেবে রাজনীতিতে অংশ গ্রহণ করেছিলেন। ১৯৬৫-তে ক্ষমতাসীন কনভেনশন মুসলিম লীগের মনোনয়নে মৌলিক গণতন্ত্রীদের ভোটে পশ্চিম বিক্রমপুর থেকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৬৯-এর জানুয়ারি-মার্চের আইয়ুব বিরোধী গণ-আন্দোলনে ও ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে যে সমস্ত বিদেশী সাংবাদিক অধিকৃত বাংলাদেশে আগমন করতেন তাঁদের কাছে পাক-বাহিনীর নৃশংস কার্যকলাপের সংবাদ কৌশলে সরবরাহ করতেন। এছাড়া নিউইয়র্ক টাইমস-এ সাংবাদিক মি. ম্যাকস ব্রাউন-কে স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রামাণ্য ছবি তোলার জন্যে মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পে নিয়ে যান। কড়া সেন্সরশিপের মধ্যেও গোপনে মুক্তিযুদ্ধের সংবাদ বহির্বিশ্বে সরবরাহ করতেন। ফলে ফরমান আলীর দপ্তরে তাঁকে দু’বার ডেকে নিয়ে যাওয়া হয় ও ভয় দেখানো হয়। মুক্তি বাহিনীর হাতে মুন্সীগঞ্জের পতন ঘটলে (৫ ডিসেম্বর ১৯৭১) বি.বি. সি. থেকে সেই সংবাদ প্রচারিত হওয়া মাত্র জেনারেল ফরমান আলী কর্তৃক টেলিফোনযোগে নিজামুদ্দীনকে হুমকি প্রদান করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়ের প্রাক্কালে ১৯৭১এর ১২ ডিসেম্বর দুপুরবেলা পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর দোসর আলবদরের সদস্যরা তাঁকে তাঁর ঢাকার রোকনপুরের বাসা থেকে ধরে নিয়ে সাংবাদিক হিসেবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেন। সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদান রাখায় জন্য বিবিসি কর্তৃক দীর্ঘ সময়ব্যাপী তাঁর শহীদ স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। তিনি সাংবাদিকতায় একুশে পদক (মরণোত্তর) লাভ করেন (১৯৯৫)।–