ড. নীলিমা ইব্রাহীম

প্রথম পাতা » জীবনী » ড. নীলিমা ইব্রাহীম


 ড. নীলিমা ইব্রাহীম

বরেণ্য শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক ড. নীলিমা ইব্রাহীম ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে ১১ অক্টোবর খুলনায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা প্রফুলকুমার রায় চৌধুরী খুলনা কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর ছিলেন। মা কুসুম কুমারী রায় চৌধুরী ধনী ও সুশিক্ষিত ছিলেন। ড. নীলিমা ইব্রাহীমের শিক্ষাজীবন শুরু হয় খুলনা করোনেশন গার্লস স্কুলে। তিনি ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে তিনটি লেটারসহ উক্ত স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় পাস করেন। ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা ভিক্টোরিয়া ইনস্টিটিউট থেকে ইন্টারমিডিয়েট, ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে অর্থনীতিতে স্নাতক সম্মান ডিগ্রি লাভ করেন এবং কৃতিত্বপূর্ণ প্রথম শ্রেণিপ্রাপ্ত হন কলকাতা স্কটিস চার্চের কলেজ থেকে। ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন এবং প্রথম শ্রেণি প্রাপ্ত হন । ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে বাংলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি.এইচ.ডি ডিগ্রি লাভ করেন ।
ড. নীলিমা ইব্রাহীম ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে ১৪ ডিসেম্বর বিশিষ্ট রেডিওলজিস্ট ডা. মুহাম্মদ ইব্রাহীমের সাথে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। ডা. মুহাম্মদ ইব্রাহীম ছিলেন সুরুচিসম্পন্ন, সুস্বাস্থ্যবান, বিনয়ী ও সুচিকিসক, ছিলেন মানবদরদী। ড. নীলিমা ইব্রাহীমের জীবনে সার্থকতার মূলে রয়েছে ডা. ইব্রাহীমের সাহায্য ও সহযোগিতা।
ড. নীলিমা ইব্রাহীমের পাঁচ সন্তান। জ্যেষ্ঠ কন্যা মঞ্জুরী কবীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি ও ইতিহাস বিষয়ে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। দীর্ঘ ২৫ বছর ইংলান্ডে শিক্ষকতা করছেন। দ্বিতীয় কন্যা ডলি ইব্রাহীম একজন সুদক্ষ নাট্য শিল্পী, চলচ্চিত্রাভিনেত্রী ছিলেন। তৃতীয় কন্যা পলি ইব্রাহীম ঢাকা আর্ট কলেজ-এর ছাত্রী শান্তিনিকেতন থেকে চারুকলায় উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করেন। ডেপুটি সেক্রেটারি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। কনিষ্ঠা কন্যা ইতি ইব্রাহীম ইংল্যান্ড থেকে শিশু বিজ্ঞান বিষয়ে ডিপ্লোমা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজ বিজ্ঞানে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন।
ড. নীলিমা ইব্রাহীম-এর প্রিয় ব্যক্তিত্ব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, যার কাব্য তার হৃদয়-মন জয় করেছে। বিশ্বকবি, দার্শনিক, মানবপ্রেমিক ও নারী দরদী ছিলেন। তাঁর অমর সৃষ্টিদ্বারা তিনি বিশ্ববাসীর অন্তর জয় করেছিলেন। ড. নীলিমা ইব্রাহীমের প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। প্রিয় গায়ক হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, প্রিয় সাহিত্যিক বঙ্কিম চন্দ্ৰ চট্টোপাধ্যায়, প্রিয় খাবার ডাল ভাত, পছন্দের রঙ ছিল হালকা বেগুনি।
ড. নীলিমা ইব্রাহীম সাহিত্য চর্চা করেছেন, পত্রিকায় নিবন্ধ লিখতেন নিয়মিত। সমাজ কল্যাণমূলক অনেক কাজ করেছেন। তিনি বাংলাদেশ মহিলা সমিতির সভানেত্রী, সি. ডব্লিউ, এফ.ডি এর সভানেত্রী, পরিবার পরিকল্পনা সমিতি, বাংলাদেশ-এর সভানেত্রী। তিনি সুদীর্ঘ ২১ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। ৭ বছর রোকেয়া হলের প্রভোস্ট ছিলেন এবং বাংলা একাডেমির ডি.জি ছিলেন। তিনি একজন সচেতন রাজনৈতিক কর্মী ছিলেন। বঙ্গবন্ধু অনুসৃত মুক্তিযুদ্ধপন্থী এবং আদর্শে বিশ্বাসী। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সকল প্রকার মানবকল্যাণ সাধনই ছিল তার উদ্দেশ্য। তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার, বেগম রোকেয়া পদক, নাসিরউদ্দিন স্বর্ণপদক, বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ পদক, ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় পদক, কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় পদক, অনন্যা পুরস্কার পদক ইত্যাদি লাভ করেন। তিনি রেডিও টেলিভিশনে সরাসরি সংযুক্ত ছিলেন। সংবাদপত্রে কলাম লেখিকা হিসাবে পুরস্কার প্রাপ্ত হন। তিনি কার্য উপলক্ষে পৃথিবীর প্রায় সব দেশ সফর করেন। তিনি তার জীবনের সফলতার এ পর্যায়ে খুবই সন্তুষ্ট ছিলেন।
মহিয়সী ড. নীলিমা ইব্রাহিম ১৮ জুন ২০০২ খ্রিস্টাব্দে পরলোকগমন করেন ।
তাকে ২০০০ খ্রিস্টাব্দে একুশে পদক, ২০১১ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতা পুরস্কার (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়।