নির্মলেন্দু গুণ

প্রথম পাতা » জীবনী » নির্মলেন্দু গুণ


 নির্মলেন্দু গুণ

বাংলা ভাষার বিপ্লবী কবি সমকালীন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি নির্মলেন্দু গুণ প্রেম ও গণমানুষ তাঁর কবিতার প্রধান বিষয়। প্রকৃত নাম নির্মলেন্দু প্রকাশ গুণ চৌধুরী। জন্ম বারহাট্টা জেলা কাশতলা গ্রামে ২১ জুন ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে। মাতা বীণা পাণি গুণ চৌধুরাণী, পিতা বাসুদের গুণ চৌধুরী। জীবনের প্রথম স্কুল বারহাট্টা করোনেশন কৃষ্ণ প্রসাদ ইনস্টিটিউশন। সিকেপি ইনস্টিটিউশন, বারহাট্ট থেকে মাধ্যমিক পাস করেন ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে, নেত্রকোণা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বি.এ. পাস করেন ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে। ছোট বেলা থেকেই দুরন্ত প্রকৃতির কবি নির্মলেন্দু গুণের শৈশব ও কৈশোর কেটেছে গ্রামে। চার বছর বয়সেই তিনি মাকে হারান। মায়ের মৃত্যুর পর পিতা আবার বিয়ে করলে নতুন মা চারুবালার হাতে লালিতপালিত হন। পড়াশোনা শেষ হতে না হতেই কবি হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন। তিনি ‘হুলিয়া’ কবিতা লিখে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান। তাঁর এই ‘হুলিয়া’ কবিতার উপর ভিত্তি করে পরবর্তীকালে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়। ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘প্রেমাংশুর রক্ত চাই’ প্রকাশিত হলে একজন প্রতিভাবান তরুণ কবি হিসেবে মর্যাদার আসন লাভ করেন। প্রেম বিরহের পাশাপাশি মাটি ও মানুষ এবং সেই মানুষের সংগ্রাম ও মুক্তির কথা প্রত্যয়দীপ্ত সাহসী ভঙ্গিতে। উচ্চারিত হয়ে থাকে তাঁর কবিতায়। যাবতীয় অনাচার ও উৎপীড়ন শোষণ বঞ্চণা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে তাঁর কবিতা সতত সঞ্চরণশীল এবং প্রগতিবাদী নিৰ্ভীক চেতনায়। উদ্ভাসিত। প্রথম কাব্য প্রকাশের পর ১৯৭১-এ শুরু হয় মহান মুক্তিযুদ্ধ। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র এবং কলকাতা আকাশবাণীর সাথে ছিলেন শব্দ সৈনিক হিসেবে কাজ করেন। স্বাধীনতার পর লেখালেখির পাশাপাশি জড়িয়ে পড়েন সাংবাদিকতায়। বিভিন্ন সময় দৈনিক পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন। দৈনিক গণকণ্ঠ ও রুন সাংবাদিক। এছাড়াও বিভিন্ন পত্রিকায় খণ্ড সাংবাদিকতা। এ সময় মুদ্রণের ব্যবসা করেছেন। তবে তাঁর প্রধান পেশাই হচ্ছে সাহিত্যকর্ম। সাহিত্য সাধনার জন্য পেয়েছেন বহু পুরস্কার- বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮২), হুমায়ুন কবির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৭২), আলাওল সাহিত্য পুরস্কার (১৯৭৫), কবি আহসান হাবীব পুরস্কার, খালেকদাদ চৌধুরী সাহিত্য পদক, অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার ইত্যাদি। তাঁর কৃতিত্বপূর্ণ বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০০২ খ্রিস্টাব্দে সরকার তাকে একুশে পদক প্রদান করে। প্রকাশিত গ্রন্থ প্রেমাংশুর রক্ত চাই (১৯৭০), না প্রেমিক না বিপ্লবী (১৯৭২), কবিতা অমীমাংসিত রমণী (১৯৭৩), দীর্ঘ দিবস দীর্ঘ রজনী (১৯৭৪), চৈত্রের ভালোবাসা (১৯৭৫), ও বন্ধু আমার (১৯৭৫), আনন্দকুসুম (১৯৭৬), বাংলার মাটি বাংলার জল (১৯৭৮), তার আগে চাই সমাজতন্ত্র (১৯৭৯), চাষাভূষার কাব্য (১৯৮১), অচল পদাবলী (১৯৮২), পৃথিবীজোড়া গান (১৯৮২), দূরহ দুঃশাসন (১৯৮৩), নির্বাচিতা (১৯৮৪), প্রথম দিনের সূর্য (১৯৮৪), ইসক্রো (১৯৮৪), শান্তির ডিক্রি (১৯৮৪), আবার একটা ফুঁ দিয়ে দাও (১৯৮৪), কেন নেই সেই পাখি (১৯৮৫), মুজিব লেনিন ইন্দিরা (১৯৮৫), নিরঞ্জনের পৃথিবী (১৯৮৬), চিরকালের বাঁশি (১৯৮৬), দুঃখ করো না বন্ধু (১৯৮৭), প্রেমের কবিতা (১৯৮৭), সোনার কুঠার (১৯৮৭)। রাজনৈতিক কবিতা (১৯৮৮), যখন আমি বুকের পাঁজর খুলে দাঁড়াই (১৯৯২), ধাবমান হরিণের দ্যুতি (১৯৯২), বাক্য সমগ্র- দ্বিতীয় খণ্ড (১৯৯৩), অনন্ত বরফ বীথি (১৯৬৩), মুঠো ফোন ১ম ও ২য় খণ্ড (২০০৩), আপন দলের মানুষ তাঁর। গল্পগ্রন্থ- সোনার কুঠার (১৯৮৭) ছড়ার বই, রক্ত আর সাহিত্য। ভ্রমণ কাহিনী নিয়ে তিনি লিখেছেন ‘ভালবাসার তীরে’ ভিয়েতনাম ও কালু মিয়ার স্মৃতি, গিনসবার্গের সঙ্গে ভ্রমি দেশ দেশে। তাঁর আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ- আমার ছেলেবেলা ও আমার কন্ঠস্বর । নির্মলেন্দু গুণ তাঁর নিজ গ্রাম কাশতলায় প্রতিষ্ঠা করেন কাশবন বিদ্যানিকেতন নামে একটি মাধ্যমিক স্কুল। তিনি বিভিন্ন সময় ভ্রমণ করেছেন যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, সিঙ্গাপুর রাশিয়া, ভারত, ভিয়েতনাম, কম্পুচিয়া, নেপাল, বাহরাইনসহ বহু দেশ।