রামেন্দু মজুমদার

প্রথম পাতা » জীবনী » রামেন্দু মজুমদার


রামেন্দু মজুমদার
জাতীয় নাট্য ব্যক্তিত্ব ও সংগঠক

নিজের শ্রম আর সাধনা দিয়ে ধীরে ধীরে যাঁরা জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছেন রামেন্দু মজুমদার তাঁদের মধ্যে অন্যতম। বড় বড় দায়িত্ব ও গুরুগম্ভীর পদের মালিক কিন্তু ব্যক্তি হিসেবে খুবই সহজ এই মানুষটির জন্ম ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ৯ আগস্ট মাসে লক্ষ্মীপুরের সংস্কৃতিমনা মধ্যবিত্ত এক পরিবারে। নাটকের আবহেই তার বেড়ে ওঠা, তাই তিনি নাটকের মানুষ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি বিষয়ে বিএ অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন।
কর্মজীবন শুরু চৌমুহনী কলেজে। এখানে তিন বছর অধ্যাপনা করার পর ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে যোগ দেন করাচিতে এক বিজ্ঞাপনী সংস্থায়। দেশে ফিরে আসেন ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে এবং এখানে বিজ্ঞাপনী সংস্থা বিটপী এ্যাডভারটাইজিংয়ে পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন দীর্ঘদিন। ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে নিজেই প্রতিষ্ঠা করেন বিজ্ঞাপনী সংস্থা ‘এক্সপ্রেশন’। এখানে তিনি ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বেতার ও টিভির সংবাদ পাঠক হিসেবে তাঁর যাত্রা শুরু ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দ থেকেই । স্বাধীন দেশের প্রথম দিককার বেশ ক’জন টিভি সংবাদপাঠকের মাঝে তিনি অন্যতম। তবে তার পরিচয় তিনি নাটকের মানুষ এবং অন্যতম সংস্কৃতিকর্মী। ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি নাটকের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ক্লাস সিক্সে পড়াকালীন স্কুলে প্রথম নাটকে অভিনয় করেন তিনি। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসেই নাট্য জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। জগন্নাথ হলকে তাঁর নাট্যশিল্পী হয়ে ওঠার প্রথম সূতিকাগার বলে মনে করেন তিনি। এখানে এসেই মুনীর চৌধুরী, ফেরদৌসী মজুমদার, রফিকুল ইসলাম, রাজিয়া খান, আব্দুল্লাহ আল মামুনের মতো তুখোড় অভিনয়শিল্পীদের সঙ্গে কবর, ভ্রান্তি বিলাস, কৃষ্ণ কুমারীর মতো বিখ্যাত নাটকে অভিনয় শুরু করেন। টিভির নাটকে অভিনয় শুরু করেন ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে। তারপর থেকে অদ্যাবধি অভিনয় করে যাচ্ছেন। তবে বাংলাদেশ বেতারে নাটকের শুরু ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে।
মঞ্চ নাটকের সনাতনী ইমেজ ভেঙ্গে যাঁরা এটিকে আধুনিক এবং শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন তাদের দলের তিনিও অন্যতম সদস্য। সেই ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন ক্যাম্পাসে গড়ে তুলেছিলেন ‘ছাত্র শিক্ষক নাট্যগোষ্ঠী’ তিনি ছিলেন এর সাধারণ সম্পাদক। তাঁর সম্পাদনায় স্বাধীনতাত্তোর নাট্যগোষ্ঠী বাংলাদেশ মঞ্চে বিষয়ক প্রথম প্রকাশনা ‘থিয়েটার’ বের হয়।
১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে মঞ্চ নাটক নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ও জনপ্রিয় সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউট (আইটিআই)। মঞ্চ নাটকের প্রসারে বিশ্বে নিয়মিতভাবে নাট্য আয়োজন ও এ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সেমিনারের উদ্যোক্তা এ সংস্থাটি। ২০০৮ খ্রিস্টাব্দে বিশ্ব আইটিআইর সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি এ সম্মানিত সদস্য। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। থিয়েটার নাট্যগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, বর্তমানে পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আব্দুল্লাহ আল মামুন থিয়েটার স্কুলের। তার সম্পাদনায় প্রকাশিত হচ্ছে ত্রৈমাসিক থিয়েটার। এ্যাডভাটাইজিং এজথিজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ- এর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
প্রখ্যাত অভিনয় শিল্পী ফেরদৌসী মজুমদার তার সুযোগ্য সহধর্মিণী। আর এই তারকা দম্পতির একমাত্র সন্তান ত্রপা মজুমদার, তিনিও একজন প্রতিভাময়ী অভিনেত্রী। অসাধারণ প্রতিভাসম্পন্ন নাট্যাভিনেতা, নাট্যসংগঠক তাঁর অসামান্য কর্মকাণ্ডের স্বীকৃতিস্বরূপ এ যাবৎ বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন- ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা একুশে পদক পেয়েছেন। পেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক দল পদক, মুনীর চৌধুরী সম্মাননা, প্রীতিলতা পদক, অচিন্ত্য স্মারক সম্মাননা (কোলকাতা), অন্য থিয়েটার সম্মাননা (কোলকাতা) এবং ঢাকা এ্যাড ক্লাব প্রদত্ত লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড। সম্প্রতি বাংলা একাডেমি তাঁকে সম্মানসূচক ফেলোশিপ প্রদান করেছে। রামেন্দু মজুমদারের মৌলিক ও সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা ১৬টি।
বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পরিষদ সদস্য, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য। এর আগে তিনি বাংলা একাডেমির নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্যের দায়িত্ব পালন করেছেন।