হেলেনা খান

প্রথম পাতা » জীবনী » হেলেনা খান


হেলেনা খান

শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক ও ঔপন্যাসিক

হেলেনা খানের জন্ম ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দের ২৩ মার্চ ময়মনসিংহ শহরে কালিবাড়ি বাইলেনে বিরাট পুকুরসহ গাছগাছালিতে ছাওয়া নানার বাড়িতে। কৈশোর থেকে শুরু করে তাঁর জীবনের অনেক সময় কেটেছে ময়মনসিংহ খানের পিতৃ নিবাস আকুয়ায় “শামসুন্নাহার কুটিরে’। শহর থেকে পাঁচ মাইল দূরে কলকাটাড়া গ্রামে তাদের আদি নিবাস। পিতা মোজাফ্ফর আলী ফকির ছিলেন একজন ধর্মপরায়ণ ও সৎ পুলিশ অফিসার। মাতা খাতেমন্নেছা।
তিনি স্থানীয় রাধাসুন্দরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৪র্থ শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে প্রথম বিভাগে ‘এ গ্রেড স্কলারশিপ’ নিয়ে ম্যাট্রিক পাস করেন এবং তিনিই ময়মনসিংহের প্রথম ম্যাট্রিক ‘এ’ গ্রেড স্কলারশিপ পাওয়া মুসলমান মেয়ে। হেলেনা খানের পিতা অগ্রজদের মতের বিরোধিতা করে কলকাতা লেডি ব্রেবোর্ন কলেজে তাঁকে পড়তে পাঠান। হেলেনা খান ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে বি.এ পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসে এমএ ভর্তি হন। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে কুমিল্লা ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সিনিয়র শিক্ষিকা হিসেবে যোগদান করেন। ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ হতে বি.টি. পাস করেন এবং ফার্স্টক্লাস পান। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে লন্ডন ইউনির্ভাসিটি হতে ‘একাডেমিক ডিপ্লোমা ইন এডুকেশন’ কৃতিত্বের সঙ্গে পাস করেন। একই ইউনিভার্সিটি হতে ভোকেশনাল গাইডেন্স-এ এক বছর বিশেষ ট্রেনিং নিয়ে সার্টিফিকেট অর্জন করেন।
লন্ডন থেকে ফিরে কামরুন্নেছা স্কুলে যোগদান করেন। তার চার মাস পর পদোন্নতি পেয়ে চট্টগ্রাম ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে যান । কয়েক মাস পর ময়মনসিংহের বিদ্যাময়ীতে বদলী হয়ে আসেন। এরপর পদোন্নতি পেয়েও স্বামী, সংসার সন্তানের জন্য কোথাও যাননি। বিদ্যাময়ীতে সহকারী প্রধান শিক্ষক থেকেও তাঁকে পরপর তিনবার প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্ব পালন করতে হয়। ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে রংপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে বদলী হয়ে আসেন। শেষ পর্যন্ত তিনি ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে সন্তানদের প্রতি কর্তব্য ও মায়ার টানে কর্মজীবনের ইতি টানেন। এ সময়ে একটা শূন্যতা অনুভব করায় তিনি বিভিন্ন সমাজ সেবামূলক কাজে জড়িয়ে পড়েন। যেমন-ময়মনসিংহ সরকারি ও বেসরকারি পরিবার পরিকল্পনা সমিতি, সমাজকল্যাণ সমিতি, সরকারি ও বেসরকারি এতিমখানা, মহিলা সমিতি, মহিলা সংস্থা, মেডিক্যাল কলেজ রোগী কল্যাণ সমিতি, মুমিনুন্নেসা মহিলা কলেজের ম্যানেজিং বোর্ডের সদস্য। ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে পাকিস্তান জাতীয় সংসদের এম.এন.এ মনোনীত হয়েও নাবালক সড়ানদের কারণে এ পদ থেকে সরে আসেন।
১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দ হতেই লিখতে শুরু করেছিলেন। ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন দৈনিক কৃষকে প্রথম ছোট গল্প ‘প্রাণের টান’ ছাপা হয়। এরপর নবযুগ ও আজাদে ছোটদের বিভাগে ছোট গল্প ছাপা হতে থাকে। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ছোটদের বিভাগে প্রচুর লেখালেখি করেন এবং পুরস্কার পান। বাংলাদেশের প্রায় সব পত্রিকা এবং যুক্তরাষ্ট্রের ‘ঠিকানা’ এবং ‘প্রবাসীতে তাঁর লেখা ছাপা হয়ে। ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে ‘ফসলের মাঠ’ ও ‘উত্তুরে বাতাস’ প্রকাশিত হয় এবং ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে ‘উত্তুরে বাতাস’ নামক গ্রন্থের জন্য নুরুন্নেসা খাতুন বিদ্যাবিনোদিনী সাহিত্য স্বর্ণপদক পান। ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে রেডিও পাকিস্তান-এ তাঁর দু’টি নাটক প্রচারিত হয় এবং তৎকালীন সময়ে পাকিস্তান টেলিভিশন-এ হেলেনা খানের লেখা উর্দুতে রূপান্তর করে নাটক প্রচারিত হয়। জীবনী গ্রন্থসহ তাঁর গ্রন্থের সংখ্যা ৩৪টি। সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ১০ বার পুরস্কৃত হয়েছেন। ২০১০ খ্রিস্টাব্দে পেয়েছেন একুশে পদক। ২০০৮ - বাংলা এক ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে ডা. আজিজুর রহমান খান (ডা. এ.আর. খান বর্তমানে প্রয়াত) এর সঙ্গে শুভ পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। তিনি তিন পুত্র (১) এমরান ওয়াসিম খান টুটুল, (২) ডা. ফজলে নাসিম খান টিপু, (৩) ফারদাত নাঈম খান রিন্টু এবং এক কন্যা ডা. নিরমীন রিফাত খান-এর আদর্শ জননী। ছেলে-মেয়ে সকলেই সুশিক্ষায় শিক্ষিত। হেলেনা খান স্বামীর সঙ্গে সমগ্র গ্রেট বৃটেন, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, জার্মানি, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, নেপাল, সৌদিআরব, মালয়েশিয়া, ভারত, পাকিস্তান, সিঙ্গাপুর, কানাডা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩০টি স্টেট ভ্রমণ করেছেন। তাঁর রচিত অনেক গ্রন্থেই ভ্রমণের অভিজ্ঞতা স্থান পেয়েছে। ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি স্বামীর সঙ্গে পবিত্র হজব্রত পালন করেন।