সংঘরাজ জ্যোতিঃপাল মহাথেরো

প্রথম পাতা » জীবনী » সংঘরাজ জ্যোতিঃপাল মহাথেরো


সংঘরাজ জ্যোতিঃপাল মহাথেরো
বিশিষ্ট বৌদ্ধ ভিক্ষু ও মুক্তিযুদ্ধের সাহসী সংগঠক

বিশিষ্ট ধর্মীয় নেতা সংঘরাজ জ্যোতিঃপাল মহাথেরো ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের ৫ জানুয়ারি কুমিল্লা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা চন্দ্র মণিসিংহ এবং মাতা দ্রৌপদী বালা সিংহ । তিনি ত্রিপিটক বিষয়ে কলকাতার নালন্দা বিদ্যাভবন থেকে ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে স্বর্ণপদক লাভ করেন। সংঘরাজ জ্যোতিঃপাল মহাথেরো পালি-বাংলা অভিধানসহ বৌদ্ধ ধর্মীয় অনেক করেন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে পুস্তক সংকলন উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি একুশে পদক-২০১০, মায়ানমার সরকারের দেয়া আগগমহাসদ্ধম্ম জ্যোতিকাধ্বজ- ২০০১ সহ আরো অনেক পদক ও সম্মাননা লাভ করেন ।
১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ২২ এপ্রিল ভারতের আগরতলায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বাংলাদেশে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যা ও নির্মম অত্যাচারের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরেন। তাঁর বক্তব্য গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার লাভ করে। তাঁর উদ্যোগে ত্রিপুরায় বৌদ্ধদের জন্য পৃথক শরণার্থী শিবির স্থাপিত হয়। বাংলাদেশে বৌদ্ধরা নিরাপদে আছে মর্মে পাক হানাদার বাহিনীর দাবির অসারতা প্রমাণে তিনি বিশেষ ভূমিকা রাখেন। বিশ্ব জনমত সৃষ্টির জন্য মুজিবনগর সরকার কর্তৃক গঠিত একটি দলের সদস্য হিসেবে জ্যোতিঃপাল মহাথেরো একাত্তরের ০৭ আগস্ট শ্রীলংকায় যান। সেখানে নেতৃস্থানীয় বৌদ্ধভিক্ষু, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার নেতা, পার্লামেন্ট সদস্য ও মন্ত্রীদের সাথে সাক্ষাতকালে এবং কলম্বোতে এক জনাকীর্ণ সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বাংলাদেশে পাকিস্তানি সেনা ও অস্ত্র বহনকারী বিমানের অবতরণ নিষিদ্ধ করা হয়। ব্যাংককে তিনি বিশ্ব বৌদ্ধ সৌভ্রাতৃত্ব সংঘের সভানেত্রী ও সেক্রেটারি জেনারেলের কাছে বাংলাদেশে নারকীয় ভয়াবহতার চিত্র উপস্থাপন করেন। ব্যাংককে কর্মতৎপরতা শেষে টোকিওতে তিনি বাংলাদেশ লিবারেশন কমিটির কর্মী সম্মেলনের মাধ্যমে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণহত্যা, লুটতরাজ ও ধ্বংসের মর্মস্পর্শী বিবরণ তুলে ধরেন এবং জাপানের বহুল প্রচারিত সংবাদপত্র মেইনচি ডেইলি নিউজ এ তা প্রকাশের ব্যবস্থা করেন। ফলে বাংলাদেশের প্রকৃত অবস্থার মর্মস্পর্শী বিবরণ প্রায় এক কোটি পাঠকের কাছে পৌঁছায় জ্যোতিঃপাল মহাথেরো বাংলাদেশের পক্ষে শান্তি ও বন্ধুত্বের বাণী নিয়ে চিন, জাপান, মঙ্গোলিয়া, রাশিয়া, কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর অনেক দেশ ভ্রমণ করেন। বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের সাথেও তিনি জড়িত ছিলেন। বরইগাঁও কনকচৈতা বিহার, বরইগাঁও পালি কলেজ, বরইগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বরইগাঁও জ্যোতিঃপাল মহাথেরো বৌদ্ধ অনাথ আশ্রম, বরইগাঁও বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও বরইগাঁও অনাথ আশ্রম উচ্চ বিদ্যালয় তাঁর উদ্যোগে স্থাপিত কয়েকটি উলেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান। ২০০২ খ্রিস্টাব্দের ১২ এপ্রিল তিনি পরলোকগমন করেন ।
স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ ক্ষেত্রে অসামান্য ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সংঘরাজ জ্যোতিঃপাল মহাথেরোকে একুশে পদক-২০১০ এবং ‘স্বাধীনতা পুরস্কার-২০১১’ (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়