মোহাম্মদ দেলওয়ার হোসেন

প্রথম পাতা » জীবনী » মোহাম্মদ দেলওয়ার হোসেন


মোহাম্মদ দেলওয়ার হোসেন
শিক্ষানুরাগী সমাজসেবক
টাঙ্গাইল জেলার গর্বের সন্তান কৃতিপুরুষ বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী সমাজসেবক, ছায়ানীড়ের আজীবন সদস্য মোহাম্মদ দেলওয়ার হোসেন বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা একুশে পদক লাভ করেছেন। ২০১১ খ্রিস্টাব্দে তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে পদক ও সম্মাননা সনদ লাভ করেন।
তিনি ১ ফেব্রুয়ারি ১৯২৬ খ্রি. ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা বেলায়েত হোসেন ছিলেন জেলা জজ। তার পৈতৃক নিবাস টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার উপজেলার নাল্লাপাড়া। তিনি কলকাতার বালিগঞ্জ গভর্নমেন্ট হাই স্কুল, পিরোজপুর গভর্নমেন্ট হাইস্কুলে লেখাপড়া করেন এবং ১৯৩৯- ৪১ শিক্ষা বর্ষে কুমিল্লা জিলা স্কুল হতে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। এরপর কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে আই.এ ও বি.এ পাস করেন। তিনি কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইতিহাসে এম.এ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএল ডিগ্রি লাভ করেন।
প্রশিক্ষণ : অন্যান্যের মধ্যে (ক) ১৯৭৯/১৯৮০ এ ইংল্যান্ডের হেনলি-অন-টেমস এ অবস্থিত, বিশ্ববিখ্যাত, ‘এ্যাডমিনিসট্রেটিভ স্টাফ কলেজ’ থেকে শীর্ষস্থানীয় এক্সিকিউটিভদের জন্য ম্যানেজমেন্টের ওপর একটি কোর্স এবং (খ) ১৯৮১ এ, নিউইয়র্কে অবস্থিত ওয়াল্ড ট্রেড সেন্টারে ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড এ্যান্ড কমার্স- এর ওপর একটি কোর্স, সম্মানের সাথে সম্পন্ন করেন ।
অভিজ্ঞতা : উপমহাদেশের শিল্প ও বাণিজ্যে নিয়োজিত একটি ঐতিহ্যবাহী মাল্টিন্যাশনাল (গিলান্ডারস, আরবার্থনট এ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড, কোলকাতা-প্রায় একশত বৎসরেরও পূর্বে প্রতিষ্ঠিত), চট্টগ্রামে তাদের নতুন শাখায় কোভেনান্টেড অফিসার হিসাবে ১৯৪৮- এ যোগদান কনে। পরবর্তী সময়ে এই এলাকার আবাসিক ডাইরেক্টর এবং নতুন বাংলাদেশী কোম্পানির চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত হন। বহু বৎসর দেশের টি এ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পদ অধিকার করেছিলেন এবং ১৯৫৫ এ আই.এল.ও. জেনেভা- এর প্ল্যানটেশন কমিটির অধিবেশনে, দেশের অন্যতম প্রতিনিধি হিসাবে যোগদান করেন।
স্বাধীনতা উত্তর, মার্চ/এপ্রিল ১৯৭২, বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক একটি প্রোডাকটিভ করপোরেশনের চেয়ারম্যান হিসাবে নিয়োগ পান ১৯৮৩- এর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঐ পদে কর্মরত ছিলেন।বাংলাদেশ সরকারের সেকটর করপোরেশনের চেয়ারম্যান ও সি.ই.ও. হিসাবে প্রথমে, বাংলাদেশ ফুড এ্যান্ড এ্যালাইড প্রোডাক্টস করপোরেশনে এবং একত্রিভূত হওয়ার পর, বাংলাদেশ সুগার এ্যান্ড ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনে, মার্চ ১৯৭২ থেকে ফেব্রুয়ারি ১৯৮৩ পর্যন্ত অধিষ্ঠিত ছিলেন। করপোরেশনের অন্তর্গত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসমূহের (অন্যান্যের মধ্যে দেশের সবগুলো অর্থাৎ ১৬টি চিনিকল এর আওতায় ছিল) তদারকি ছাড়াও, সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী তাদের উন্নয়নের পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করেন।
সমাজসেবা : ১৯৯৩ এ সব ভাইবোনদের সম্পৃক্ততায়, পিতার নামে (বেলায়েত্ হোসেন বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়) টাঙ্গাইল জেলার, দেলদুয়ার থানার অন্তর্গত নাল্লাপাড়া গ্রামে, এলাকাবাসীর ছেলে-মেয়েদের জন্য মাধ্যমিক স্তরে, স্বল্প খরচে, সাধারণ ও কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের জন্য একটি উচ্চ মানের বিদ্যালয় স্থাপন করেন।৮০০ জনেরও অধিক ছাত্রসহ বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের বর্তমান মোট সংখ্যা প্রায় ২২০০, যার মধ্যে প্রায় ৫০০ জন, ৫টি টেকনিক্যাল ও ৪টি এগ্রিকালচারাল, মোট ৯টি ট্রেড কোর্সের, ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। এই ৯টি বৃত্তিমূলক কারিগরী কোর্সের মাধ্যমে যে সব ছাত্র-ছাত্রী তাদের শিক্ষাক্রম(নবম ও দশম শ্রেণির দুবছর মেয়াদী) শেষে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করবে না অথবা করতে পারবে না, তারা তাদের কোর্স অধ্যয়নের সময় যে দক্ষতা অর্জন করে, তার ভিত্তিতেই বাড়িতেই কিংবা আশেপাশে একটি প্রযুক্তিগত অথবা কৃষিভিত্তিক উদ্যোগ প্রতিষ্ঠা করে অর্থায়ণের ব্যবস্থা করতে পারে ।
সম্পূর্ণ অসাম্প্রদায়িক ও ইহজাগতিক পরিবেশ শিক্ষার্থীদের জ্ঞানসম্পন্ন, শারীরিকভাবে সুস্থ, নিয়মানুবর্তী, সহানুভূতিশীল, সামাজিক দায়িত্ববোধে সচেতন ও পরিবেশ বান্ধব, মানুষ গড়ে তোলার জন্য বিদ্যালয়টি নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ লক্ষ্য অর্জনে পড়াশোনা, যেটি অবশ্য, সর্বদাই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাচ্ছে, ছাড়াও শিক্ষার্থীদের নিয়মিত বয়স্কাউট, গার্ল গাইড ও ব্রতচারী প্রশিক্ষণ গ্রহণ, শরীরচর্চা, ইনডোর ও আউটডোর গেমস, বিতর্ক, আবৃত্তি, সংগীত ও অঙ্কন চর্চা, বৃক্ষরোপণ, বাৎসরিক শারীরিক চিকিৎসা শিবিরসমূহে ও বাৎসরিক বিজ্ঞান ও কৃষি মেলাতে, অংশগ্রহণ করতে হয়। শ্রেণি ও প্রশাসনিক কক্ষসমূহ, প্রধান শিক্ষকের বাসভবন, কিছু অবিবাহিত শিক্ষকবৃন্দের জন্য ডরমেটরি, ১২০০ আসল বিশিষ্ট
অডিটোরিয়াম/পরীক্ষার হল ও স্টেজ, একটি বড় ফুটবল মাঠ, পুকুর, ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ ও হাতে কলমে কাজ শেখানোর জন্য ৫টি টেকনিক্যাল বৃত্তিমূলক ট্রেড শ্রেণীকক্ষেই সব ধরনের যন্ত্রপাতিসহ ওয়ার্কশপ ও ৪টি কৃষিভিত্তিক বৃত্তিমূলক ট্রেডসমূহের জন্য, পৃথক ৪টি ডেমোন্ডট্রেশন ফার্ম, স্থাপন করা হয়েছে বিদ্যালয় ঔষধি প্রাঙ্গণে, যার আয়তন প্রায় ১৬ বিঘা এবং যার চারদিকে রয়েছে ফলজ, বনজ,
ও ফুলের গাছের সমাহার, যেগুলো ছাত্র-ছাত্রীরাই রোপণ ও পরিচর্যা করে। এগুলো ছাড়াও পৃথক একটি বিল্ডিং এ, ফিজিকস, কেমিস্ট্রি ও বায়োলজি গবেষণাগার ও একটি বৃহৎ কম্পিটউটার ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, যেন বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ সমৃদ্ধ হয়, শিক্ষার্থীরা গবেষণামনস্ক হয়ে ওঠে এবং বিদ্যালয়ের প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রী, তাদের পাঠ গ্রহণ করার সময়ের মধ্যেই (৬ষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত) আই.সি.টিতে দক্ষ হয়ে উঠতে পারে।
বিদ্যালয়ে থাকার সময় অর্থাৎ ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির মধ্যে, সর্বজনীন যে দুটি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় (জুনিয়র স্কলারশিপ ও এস.এস.সি) সেগুলোতেও এই বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের ফলও অত্যন্ত সন্তোষজনক । মধ্যবিত্ত শ্রেণির ছেলেমেয়েদের জন্যই উচ্চমানের শিক্ষা, কেবল ঢাকা ও বড় শহরগুলোতেই পাওয়া যায় বলে যে ধারণা সাধারণভাবে প্রচলিত রয়েছে, যে অমূলক, প্রতিষ্ঠার পর এক বছরে এই বিদ্যালয়টি সেটি প্রমাণ করতে পেরেছে এবং এটাও প্রমাণিত হয়েছে যে, বিত্তহীনদের শক্তি উজ্জীবিত করে, স্থানীয় উদ্যোগে ও স্বল্প খরচে গ্রামীণ অঞ্চলেও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সন্তানদের উচ্চমানের শিক্ষার ব্যবস্থা করে দরিদ্রতার বৃত্ত থেকে বের হয়ে যাওয়া খুবই সম্ভবপর, যার দৃষ্টান্ত অন্যত্রও অনুসরণ করা যেতে পারে । প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে অদ্যাবধি সরকারি অনুমোদনসহ তিনি বিদ্যালয়টি ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হিসাবে অধিষ্ঠিত রয়েছেন। রোটারি ইন্টারন্যাশনাল: চট্টগ্রামে অবস্থানকালে রোটারি কার্যক্রমে সম্পৃক্ত ছিলেন ও বাংলাদেশ ব্রতচারী সমিতি ১৯৭০/৭১ চট্টগ্রাম রোটারি ক্লাবের সভাপতি ছিলেন । ঢাকায় এসে উপদেষ্টা হিসাবে বাংলাদেশ ব্রতচারী সমিতি ও ছায়ানটের সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছেন।বিদেশ সফর : ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, পাকিস্তান, মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণপূর্ব এশিয়া, চিন, জাপান ও অন্যান্য দেশে, সরকারি প্রতিনিধি ও ব্যক্তিগতভাবে ব্যাপকভাবে ভ্রমণ করেছেন।অন্যান্য আগ্রহ : বিলিয়ার্ড খেলা ও বাগান করা । রাষ্ট্রীয় সম্মাননা : সমাজসেবায় অবদান রাখার জন্য, বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ২০১১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি একুশে পদকে ভূষিত করেছেন।