মামুনুর রশীদ

প্রথম পাতা » জীবনী » মামুনুর রশীদ


মামুনুর রশীদ
নাট্য ব্যক্তিত্ব
চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন মামুনুর রশীদ।
দেশের শীর্ষসারির নাট্যব্যক্তিত্ব। গ্রুপ থিয়েটার আন্দোলনে অগ্রণীজন। লেখা ও অভিনয়ে হাত ধরাধরি করে পথ চলা তাঁর। যেন সমানে সমান। নাটক লেখেন সামাজিক অঙ্গীকার থেকে, পথ চলার চেষ্টা করেন প্রগতির আদর্শে। ভদ্র লোকাচারের আড়ালে নষ্টতাকে তুলে আনেন লেখনীতে। কথা বলেন মানুষের ন্যায্য অধিকারের পক্ষে। গুণী অভিনেতা মামুনুর রশীদ একজন নাট্য নির্দেশক। বর্তমানে চেয়ারম্যান, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন । তির্যক ক্ষুরধার সংগ্রাম তাঁর। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিরাজমান হাজারো অসঙ্গতির বিরুদ্ধে অবিরাম সংগ্রাম তাঁর। কপটতার প্রতি বরাবর রক্তচক্ষু । তিনি মানুষের জন্যে রচনা করেন শিল্প-‘শিল্পের জন্য শিল্প নয়। তাঁর মাঝে আড়াল নেই। কথা সোজা- সাপটা, অকপট। নাটক রচনা, অভিনয় ও নির্দেশনায় বরাবর নিবেদিতপ্রাণ মামুনুর রশীদ-এর জন্ম ২৯ ফেব্রুয়ারি, ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে। তাঁর পৈতৃক নিবাস টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলার ভাবনদত্ত গ্রাম ।
দাদা এলাহি বক্স খান ছিলেন সরল-সাধারণ উদার প্রকৃতির, ভাবুক। পুঁথি লেখক হিসেবে পরিচিত। লোক-সাহিত্য গবেষক ড. আশরাফ সিদ্দিকীর সংগ্রহে তাঁর রচিত একাধিক পুঁথি রয়েছে।
বাবা হারুন অর রশীদ খান ছিলেন পোস্ট মাস্টার। সৎ ও শিক্ষানুরাগী। স্বচ্ছ ধ্যান- ধারণার আলোকিত মানুষ । মা রোকেয়া খানম গৃহবধূ ।
মামুনুর রশীদের স্ত্রী গওহর আরা চৌধুরী। একটি প্রডাকশন হাউসের ফিন্যান্স ডিরেক্টর। সংস্কৃতিমনা, মুক্তচিন্তার অধিকারী। পারিবারিক জীবনে তাঁরা এক কন্যা ও এক পুত্রের জনক-জননী
কন্যা শাহানাজ মামুন। স্কুল শিক্ষিকা, বিবাহিতা। স্বামী-কাজী জওয়াত। ছেলে- আদিবুর রশীদ মামুন । যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ভিজ্যুয়াল আর্ট-এর ওপর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত । বাবার চাকরির সুবাদে ময়মনসিংহের ফুলবাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মামুনুর রশীদের লেখাপড়া শুরু। হাইস্কুলে পড়াশুনা এলেঙ্গা ও বল্লা স্কুলে। এস.এস.সি পাস করেন ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে বল্লা করোনেশন হাইস্কুল, কালিহাতি হতে। তারপর ভর্তি হন কারিগরি মহাবিদ্যালয়ে। পাস করেন কৃতিত্বের সঙ্গে। বি.এ ও এম.এ (রাষ্ট্রবিজ্ঞান) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
সৃজনশীল ব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ নেশা ও পেশা হিসেবে বেছে নেন লেখালেখি ও অভিনয় জীবনকে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় জীবন পেরিয়ে অদ্যাবধি তিনি অসংখ্য নাটকে অভিনয় করেছেন, প্রশিক্ষক-নির্দেশক ও প্রযোজক হিসেবে কাজ করে চলেছেন তিনি। মঞ্চ ও টিভি নাটকে তাঁর উজ্জ্বল উপস্থিতি, গুণী ও শক্তিমান অভিনেতা হিসেবে স্বীকৃত। মঞ্চে অভিনীত এবং বই আকারে প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য নাটক সমূহের মধ্যে রয়েছে: পশ্চিমের সিঁড়ি (১৯৭১), গন্ধর্ব নগরী (১৯৭৫), ওরা কদম আলী (১৯৭৬), ওরা আছে বলেই (১৯৭৮), ইবলিশ (১৯৮১), গিনিপিগ (১৯৮৩), অববাহিকা (১৯৮৬), লেবেদেব (১৯৯৫) ও সংক্রান্তি (২০০১)। উল্লেখযোগ্য টিভি নাটক : এখানে নোঙর, ইতি আমার বোন, একটি সেতুর গল্প, সময় অবসর (ধারবাহিক), শিল্পী (ধারবাহিক), ইতিকথা (ধারবাহিক), সুপ্রভাত ঢাকা (খন্ড নাটক), দানব (ধারাবাহিক), সুন্দরী (ধারাবাহিক), স্বপ্নের শহর (ধারাবাহিক), সোয়াত, ওম, লাল মিয়ার ডিউটি, নিউইয়র্কের সুজা ভাই, মোহর আলীর বিষয় আশয়, জিম্মি, হানিফ খাঁ, ধরিত্রী (টেলিফিল্ম), এল.বি.ডব্লিউ (টেলিফিল্ম) একটি মৃত্যু ও একটি গল্প ।তাঁর লেখা একাধিক নাটক বিদেশী ভাষায় অনুদিত হয়েছে। নাট্য লেখক, নির্দেশক, নাট্য প্রশিক্ষক, সমন্বয়কারী হিসেসে নাট্য বিষয়ক বিভিন্ন কর্মশালায় অংশগ্রহণের জন্য অনেক দেশে ভ্রমণ করেছেন। এর মধ্যে জাপান, হংকং, জার্মান, তাইওয়ান, কানাডা, দ. কোরিয়া উল্লেখযোগ্য।
১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে বাংলাদেশ রেডিও-তে নাট্য রচয়িতা এবং অভিনেতা হিসেবে যুক্ত তিনি। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে প্রযোজক হিসেবে দায়িত্ব পালন। বিভিন্ন ফিচার ও ডকুমেন্টারি রচনা ও নির্দেশনার সাথে যুক্ত রয়েছেন।
দেশের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নাট্যলেখক, অভিনেতা, সংগঠক হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন। ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে বাংলা একাডেমি নাট্যকার পদকপ্রাপ্ত হন। উল্লেখ্য যে, দেশে স্বৈরশাসক থাকায় সে পুরস্কার প্রত্যাখান করেন তিনি।
বর্তমানে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন চেয়ারম্যান, ইন্টারন্যাশনাল ডিরেক্টর, ইনডিজিনিয়াস পিপলস থিয়েটার এসোসিয়েশন কানাডা, ইসি মেম্বার, ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ সেন্টার, চিফ সেক্রেটারি, আরণ্যক নাট্যদল । ২০১২ সালে একুশে পদক পান।