অধ্যাপক ড. করুণাময় গোস্বামী

প্রথম পাতা » জীবনী » অধ্যাপক ড. করুণাময় গোস্বামী


অধ্যাপক ড. করুণাময় গোস্বামী

অধ্যক্ষ
ক্যামব্রিয়ান সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ
করুণাময় গোস্বামী ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের ১ মার্চ ময়মনসিংহ জেলার গোঁসাই চান্দুরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা- রাসবিহারী গোস্বামী, মাতা- জ্যোৎস্না রাণী গোস্বামী। তিনি ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে এম.এ পাস করেন ও এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই পরবর্তীতে ‘বাংলা কাব্যগীতির ধারায় কাজী নজরুল ইসলামের স্থান’ অভিসন্দর্ভের জন্য পিএইচ.ডি ডিগ্রি লাভ করেন। ছাত্রজীবন থেকেই করুণাময় গোস্বামী ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দের ২০ নভেম্বর তোলারাম কলেজে ইংরেজির প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন এবং পর্যায়ক্রমে পদোন্নতি পেয়ে ইংরেজির অধ্যাপক পদ লাভ করেন। ২০০১ খ্রিস্টাব্দে তিনি সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। এরপরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়সহ দুটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেন। বর্তমানে তিনি গুলশান ঢাকায় ক্যামব্রিয়ান সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ-এর অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত। করুণাময় গোস্বামী কার্যত তাঁর লেখক জীবন শুরু করেন দৈনিক সংবাদে ধারবাহিকভাবে লিখতে শুরু করে। শুরুতেই তিনি দীর্ঘকাল রবীন্দ্রনাথের উপর ধারাবাহিক লেখেন। তারপরে তিনি আমাদের জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের ওপর লিখতে শুরু করেন। তাঁর রবীন্দ্রবিষয়ক লেখাগুলো বেরোয় প্রথম দিকে যেমন দৈনিক সংবাদে, তেমনি শুরুর দিককার নজরুল বিষয়ক লেখাগুলো বেরোয় অধুনালুপ্ত দৈনিক বাংলায়। কবি আহসান হাবিব তখন দৈনিক বাংলার সাহিত্য সম্পাদক ছিলেন। বাংলা একাডেমী গবেষণা পত্রিকায়ও করুণাময় গোস্বামী ধারাবাহিকভাবে নজরুলের ওপর, বিশেষ করে নজরুল সঙ্গীতের ওপর লিখতে শুরু করেন। বাংলা একাডেমি গবেষণা বৃত্তিতেই পরবর্তীতে তিনি নজরুল সঙ্গীতের ওপর পিএইচডি পর্যায় গবেষণা নিষ্পন্ন করেন। ইংরেজি দৈনিক The Independent প্রকাশিত হলে শুরু থেকেই করুণাময় গোস্বামী সেখানে নানা বিষয়ে লিখতে শুরু করেন। একপর্যায়ে তিনি কাজী নজরুল ইসলামের ওপর দীর্ঘকাল ধারবাহিকভাবে এই পত্রিকায় লেখেন। এখনো পর্যন্ত করুণাময় গোস্বামী আমাদের দেশের গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় দৈনিক পত্রিকাসমূহে বাংলা ও ইংরেজিতে নিবন্ধ লিখে থাকেন। গেল শতকের ষাটের দশকের চট্টগ্রাম থেকে শিশু-কিশোর পত্রিকা টাপুর-টুপুর বেরোতে শুরু করলে করুণাময় গোস্বামী সূচনাকাল থেকে তাতে শিশুদের জন্যে বিভিন্ন বিষয়ে লেখেন এবং মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তীকালে তিনি টাপুর-টুপুরে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে ধারাবাহিকভাবে একটি শিশু-কিশোর পাঠ্য উপন্যাস প্রকাশ করেন। নাম দেন ‘নতুন করে ফেরা’। বিভিন্ন সময়ে মুক্তিযুদ্ধের ওপর করুণাময় গোস্বামী বহুসংখ্যক প্রবন্ধ প্রকাশ করেছেন। তাঁর লেখালেখির ক্ষেত্র এতোই বিস্তৃত যে সংক্ষেপে সে সম্পর্কে বলা শক্ত ।
করুণাময় গোস্বামী শিক্ষাবিদ, গবেষক, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক, সম্পাদক, সংকলক ও কলাম লেখক। দেশে এবং দেশের বাইরে সঙ্গীত বিষয়ে অতি উল্লেখযোগ্য কাজের জন্য তিনি পরিচিত হলেও সাহিত্য সমালোচক ও অনুবাদক হিসেবেও করুণাময় গোস্বামীর অবদান অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য। তাঁর লেখা বিশ্বসঙ্গীতের অভিধান ‘সঙ্গীত কোষ’ বাংলা একাডেমি থেকে ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে প্রথম প্রকাশিত হয়। সমগ্র বিশ্বের পরিপ্রেক্ষিতেই একক চেষ্টায় এমন বৃহদাকার অভিধান প্রণয়ন এক বিরল দৃষ্টান্ত হিসেবে পরিগণিত হয়। তাঁর গবেষণা ও সম্পাদনায় ঢাকা থেকে History of Bengali Music in Sound নামে বাংলা গানের ১০ ঘণ্টা মেয়াদী ধ্বনি ইতিহাস প্রকাশিত হয় । বাংলা সংস্করণে এর নাম ‘বাংলা গান: ধ্বনি ইতিহাস’। এর পরপরই করুণাময় গোস্বামী Splendours of Old Bengali Songs নামে ৬ ঘণ্টা মেয়াদী আরেকটি গবেষণামূলক ধ্বনি ইতিহাস সংকলন ও সম্পাদনা করেন। বাংলা সংস্করণে এর নাম ‘বাংলা গান: পুরানোবৈভব’। সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ায় এ ধরনের কোনো কাজ এর আগে সম্পন্ন করা হয়নি। করুণাময় গোস্বামী ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত Garland Encyclopedia of Music নামে পৃথিবীর সবচেয়ে যশস্বী সঙ্গীত বিশ্বকোষের পঞ্চম খণ্ডে বাংলা গানের বিবর্তন বিষয়ে তেইশ হাজার শব্দ সংবলিত এন্ট্রি প্রদান করেন। একই বিষয়ে তিনি ২০০০ খ্রিস্টাব্দে লন্ডন থেকে প্রকাশিত Groves Dictionary of Music & Musicians Second গ্রন্থে ১০ হাজার শব্দ সংবলিত এন্ট্রি প্রদান করেন। করুণাময় গোস্বামী বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জীবন সাহিত্য ও সঙ্গীতকর্ম নিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন। তিনি পথিকৃৎ প্রামাণ্য নজরুল সঙ্গীত গবেষক। ব্যাপারটা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, নজরুল সঙ্গীত সম্পর্কে কোনো কাজ করতে গেলেই তাঁর মতামতকে গ্রাহ্য না করে এগোবার উপায় নেই। করুণাময় গোস্বামীই প্রথম ইংরেজিতে নজরুল-এর পূর্ণাঙ্গ জীবনী রচনা করেন এবং এ পর্যন্ত এটিই এ ধরনের একমাত্র কাজ। BBC Twenty Great Bengalis গ্রন্থে কাজী নজরুল ইসলাম বিষয়ক এন্ট্রিটি করুণাময় গোস্বামী প্রণীত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পর্কে করুণাময় গোস্বামীর গবেষণা অতীব উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথ বিষয়ে তিনি সর্বোচ্চসংখ্যক গ্রন্থ প্রণেতা। রবীন্দ্র সঙ্গীত বিষয়ে করুণাময় গোস্বামীর মতামতকে অত্যন্ত সুচিন্তিত ও অন্তর্দৃষ্টি সম্পন্ন বলে বিবেচনা করা হয়। রবীন্দ্রনাথের সার্ধশত জন্মবর্ষে HSBC Bangladesh প্রকাশিত করুণাময় গোস্বামী প্রণীত The Art of Tagore Songs গ্রন্থটিকে এই উপলক্ষে প্রকাশিত সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। করুণাময় গোস্বামী বাংলা ভাষায় আফ্রিকার কবিতা ও গল্পের পথিকৃৎ অনুবাদক। ‘ভারতীয় সংস্কৃতিতে ইসলামের প্রভাব’ তাঁর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অনুবাদগ্রন্থ।
করুণাময় গোস্বামী ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ উৎসবের প্রথম অধিবেশনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন। ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ সরকার প্রেরিত ডেলিগেশনের প্রধান হিসেবে তিনি ভারত ও পাকিস্তানের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নজরুল সম্পর্কে বক্তৃতা করেন এবং ইসলামাবাদ থেকে নজরুলের হারিয়ে যাওয়া তিনটি গানের খাতার একটি উদ্ধার করেন- যা পরবর্তীকালে নজরুল ইনস্টিটিউট থেকে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। ২০০২ খ্রিস্টাব্দে তিনি আইসিসিআর- এর আমন্ত্রনে Distinguished Visitor হিসেবে ভারতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল ও বাংলা গান বিষয়ে বক্তৃতা দেন। করুণাময় গোস্বামী ২০১২ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের সরকারি ডেলিগেশনের সদস্য হিসেবে সার্ক কালচারাল সেন্টার- কলম্বো আয়োজিত ডায়াস্পোরা বিষয়ক আন্তর্জাতিক আলোচনা সভায় প্ৰবন্ধ উপস্থাপন করেন।
করুণাময় গোস্বামী নজরুল ইনস্টিটিউট ট্রাস্টি বোর্ডের বর্তমান সদস্য। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক কাউন্সিলের তিনি প্রাক্তন সদস্য। সাহিত্য ও সঙ্গীত গবেষণায় বিশিষ্ট অবদানের জন্য করুণাময় গোস্বামী দেশে ও বিদেশে বহু সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি নজরুল সঙ্গীত গবেষণার জন্য বাংলাদেশ সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে নজরুল স্মৃতি স্বর্ণপদক ও পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে উত্তর আমেরিকা নজরুল সম্মেলন কর্তৃক নিউইয়র্কে আয়োজিত নজরুল জন্ম শতবর্ষ উদযাপনী অনুষ্ঠানে তাঁকে নজরুল সম্মাননায় ভূষিত করা হয়। গবেষণার ক্ষেত্রে জীবনব্যাপী অবদানের জন্য তিনি ২০০৮ খ্রিস্টাব্দে বাংলা একাডেমী পুরস্কার লাভ করেন। জীবনব্যাপী নজরুল গবেষণার জন্য ২০১২ খ্রিস্টাব্দে করুণাময় গোস্বামীকে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নজরুল সম্মাননা প্রদান করা হয়। শিল্পকলা বিষয়ক গবেষণায় অতীব উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ২০১২ খ্রিস্টাব্দে তাঁকে একুশে পদকে ভূষিত করা হয়। নিতে তাঁর রচিত গ্রন্থপঞ্জি উপস্থাপন করা হলো:
গবেষণামূলক: ১. রবীন্দ্রসঙ্গীতকলা ১ম ও ২য় খণ্ড-২০১২, ২. সঙ্গীতকোষ ১৯৮৫, ২০০৪, ২০১২, ৩. বাংলাগানের বিবর্তন ১৯৯৩, ২০১১ ৪. রবীন্দ্রনাথ: গান রচনার ইতিহাস ২০১১, ৫. রবীন্দ্রনাথের গায়কখ্যাতি ২০১১, ৬. The Art of Togore Songs ২০১১, ৭. রবীন্দ্রসঙ্গীত প্রসঙ্গ ১৯৯৬, ২০১২, ৮. রবীন্দ্রনাট্যসঙ্গীত ২০০৯, ৯. রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিক্রমা ১৯৯৩, ২০১১, ১০. রবীন্দ্রনাথের প্যালেস্টাইন ভাবনা ও অন্যান্য ২০০৬, ১১. বাঙালির গান: নাগরিক ও লৌকিক ২০১১, ১২. Evolution of Bengali Music ২০০৪, ১৩. বাংলা কাব্যগীতির ধারায় কাজী নজরুল ইসলামের স্থান ১৯৯০, ২০১১, ১৪. নজরুল সঙ্গীতের জনপ্রিয়তার স্বরূপ সন্ধান ১৯৯৩, ২০১১ ১৫. নজরুলগীতি প্রসঙ্গ ১৯৭৮, ১৯৯৬ ১৬. Introducing Kazi Nazrul Islam ♪♪♪ 39. Kazi Nazrul Islam: A Biographi ১৯৯৬, ২০০৭, ১৮. Aspects of Nazrul Songs ১৯৯০, ২০. প্রসঙ্গ বাংলা গান ২০০৯, ২১. বোদলেয়ার পাউন্ড ও এলিয়ট ২০০৫, ২২. বাংলা গান ১৯৮৫, ২০১১, ২৩. বুদ্ধদেব বসুর কাব্যনাট্য ১৯৮৫।
সম্পাদনা ও সংকলন: ১. বাংলা গানের স্বরলিপি ইতিহাস ২০০৮, ২. নির্বাচিত রবীন্দ্রসঙ্গীত স্বরলিপি ২০০৮, ৩. আব্দুল আহাদ স্মারকগ্রন্থ ২০০৪, ৪. নজরুল সঙ্গীতের তালিকা ১৯৯৫, ৫. নির্বাচিত নজরুল শিশুসাহিত্য ১৯৯৫, ৬. নজরুলের শিশুতোষ কবিতা ১৯৯৫, ৭. বাংলা সংস্কৃতির শতবর্ষ ১৯৯৪, ৮. নারায়ণগঞ্জের ইতিহাস ১৯৮৫।
সম্পাদনা ও সংকলন: অডিও
১. বাংলা গান: ধ্বনিইতিহাস ১৯৯৪, ২. বাংলা গান পুরানো বৈভব ১৯৯৭, ৩. History of Bengali Music in Sound 8, 8. Splendours of old Bengali Songs ১৯৯৭
অনুবাদ:
১. ভারতীয় সংস্কৃতিতে ইসলামের প্রভাব ১৯৮২, ১৯৮৮, ১৯৯৬, ২. আফ্রিকার গল্প ১৯৭৫, ১৯৮৫, ২০০৪, ৩. আফ্রিকার কবিতা ১৯৭৬, ২০০৭
কলাম সংকলন:
১. রঙ্গব্যঙ্গ ২০০৭, ২. রঙ্গদর্শীর ব্যঙ্গকড়চা ২০১০, ৩. কতো অজানারে (প্রথম খণ্ড) ২০০৯, ৪. কতো অজানারে (দ্বিতীয় খণ্ড) ২০১০
শিশুতোষ :
১ কিশোর সঙ্গীত ১৯৭২, ২. বাংলা গানের কথা ১৯৮০, ৩. কাজী নজরুল ইসলাম ১৯৮০, ১৯৮৮, ৪. মিয়া তানসেন ১৯৮১, ৫. ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ ১৯৮৮, ৬. আব্বাস উদ্দিন আহমদ ১৯৮৮, ১৯৯৪
প্রকাশিতব্য গ্রন্থ:
১. Tagore’s Universal Man
2. Nazrul in Perpetual Quest of Rebeltion